ঘোষ জমিদারদের প্রতিমা নিরঞ্জন হয় স্নান না করিয়েই, বাড়ির মেয়েরাও শ্বশুরবাড়ি যান বিনা স্নানেই
Durga Puja 2025: উত্তর ২৪ পরগনার হাসনাবাদ ব্লকের ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে ইছামতির পারে রামেশ্বরপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় পলেস্তারা খসে পড়া জরাজীর্ণ বাড়িটা আজও দাঁড়িয়ে জানান দিচ্ছে ঘোষ জমিদারদের অতীতকে।

প্রবীর মণ্ডল: উত্তর ২৪ পরগনার হাসনাবাদ ব্লকের ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে ইছামতির পারে রামেশ্বরপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় পলেস্তারা খসে পড়া জরাজীর্ণ বাড়িটা আজও দাঁড়িয়ে জানান দিচ্ছে ঘোষ জমিদারদের অতীতকে। এই বাড়ির ছাদে উঠলে পড়শি দেশ বাংলাদেশে ঘুরে বেড়ানো মানুষজন দেখতে পাওয়া যায়।
এক সময় অবিভক্ত ভারতের সাতক্ষীরা, দেবহাটা, শ্রীপুর, ভাণ্ডারখালি, দুলদুলি-সহ অন্যান্য এলাকায় জমিদারি ছিল এই ঘোষ পরিবারের। পরবর্তী সময়ে দেশ ভাগ ও এরপর কালের নিয়মে এখন শুধু পলেস্তারা খসে পড়া জরাজীর্ণ ঘোষ জমিদারদের বাড়িটা দাঁড়িয়ে জানান দিচ্ছে ঘোষ জমিদারদের অতীতকে। তবে এখনও পূর্বপুরুষের রীতিনীতি মেনে দুর্গা পুজো চালিয়ে যাচ্ছেন পরিবারের বর্তমান প্রজন্মের সদস্যরা।
আরও পড়ুন: চকদিঘির জমিদারবাড়ি: বিদ্যাসাগরের স্মৃতি জড়ানো শারদোৎসব আজও অটুট আভিজাত্যে
আনুমানিক ৩০৩ বছর আগে ঘোষ পরিবারে দুর্গা পুজো শুরু করেছিলেন জমিদার গদাধর ঘোষ। দাবি করেছেন ঘোষ পরিবারের বর্তমান প্রজন্মের সদস্য তুহিন ঘোষ ও সঞ্জয় ঘোষ। তবে, অন্যান্য পুজোর সঙ্গে এই পরিবারের পুজোর বেশ কিছু তফাৎ রয়েছে। হাসনাবাদের রামেশ্বরপুরের ঘোষ জমিদারদের বাড়ির পুজোর বেশ কয়েকটি বিশেষত্ব রয়েছে বলে জানালেন জমিদার পরিবারের সদস্য কৃষ্ণা ঘোষ। তিনি জানান, রথের দিন ঘোষ পরিবারের পুজোর কাঠামো তৈরির কাজ শুরু হয়। তারপর থেকেই দুর্গা প্রতিমা তৈরির কাজ শুরু হয়। আষার-শ্রাবন মাসের শুক্লপক্ষে পিতলের গামলায় বর্ষার জল ভরে রাখা হয়। ওই জলে গঙ্গার জল মিশিয়ে পুজোর চারদিন দেবী দুর্গাকে স্নান করানো হয়। দশমীর দিন এই বাড়ির দুর্গা প্রতিমাকে স্নান না করিয়ে 'শ্বশুরবাড়ি' পাঠানোর নিয়ম এখনও চলে আসছে। সেই রীতি মেনে ঘোষ পরিবারের বিবাহিত মেয়েরা এখনও শ্বশুরবাড়ি যান স্নান না করে। দশমীর দিন পরিবারের সদস্যদের পাশাপাশি গ্রামের মেয়েরা ঘোষ বাড়ির দুর্গাদালানে সিঁদুর খেলায় মেতে ওঠেন। বর্তমান প্রজন্মের ঘোষ পরিবারের সদস্যরা এখন দেশ বিদেশের বিভিন্ন প্রান্তে পেশার তাগিদে থাকেন। তবে বেশিরভাগই সদস্যই কলকাতাতেই থাকেন বলে বাড়ির অন্যান্য সদস্যরা জানিয়েছেন। কিন্তু শিকড়ের টানে তাঁরা সকলেই পুজোর ক'টা দিন রামেশ্বরপুরের ঘোষ বাড়িতে আসেন। উৎসবের দিনগুলিতে গ্রামবাসীদের সঙ্গে উৎসবের আনন্দ ভাগ করে নিতে।
বর্তমান প্রজন্মের সদস্য তুহিন ঘোষ বলেন, 'মহালয়ার দিন থেকে রামেশ্বরপুরের ঘোষ বাড়ির পূজো শুরু হয়। দেশ ভাগের পরও বাংলাদেশ থেকে পুজোর সময় মানুষ ভিড় জমাতেন পুজো দেখতে। আগে এই এলাকায় একমাত্র আমাদের বাড়িতেই দুর্গা পুজো হত। পুজোর সময় গ্রামে মেলা বসত। বেশ কিছুদিন ধরে চলত সেই মেলা । গ্রামের মানুষ আমাদের বাড়ির দুর্গা প্রতিমা বড় জাগ্রত বলে মানে এবং সেকারণে অনেকেই দেবীর কাছে মানত করতেন। পরবর্তী বছরে সেই মানত পূর্ণ হলে তাঁরা পুনরায় পুজো দিতে আসতেন। আজও বাসিন্দারা মানত করার জন্য দুর্গা মণ্ডপে ভিড় জমান। এছাড়াও দুর্গা পুজো উপলক্ষে মেলার পাশাপাশি বাউল গান ও ছোট ছোট যাত্রা পালা পরিবেশন করা হয়। এখনও সাবেকি নিয়মেই পুরানো রীতিনীতি মেনেই আমাদের বাড়ির পুজা হয়।' দূরে কাশবনের মাঠে হাওয়া দোলা দিয়ে এলোমেলো করে দেওয়ার চেষ্টা করে কাশফুলকে। ঘোষ বাড়িতে বেজে ওঠে পুজোর ঢাক। পলেস্তারা খসা জীর্ণ বাড়ি যেন ফিরে যেতে চায় সেই ঝলমলে ফেলে আসা অতীতে।