হাতির পিঠে চড়ে সপরিবারে দুর্গা আসত কালচিনির রায় বাড়িতে, শূন্যে গুলি ছুড়ে স্বাগত জানাতেন পরিবারের সদস্যরা

প্রকাশ মণ্ডল: আলিপুরদুয়ার জেলার মধ্যে অন্যতম প্রাচীন পুজো মেচ সম্প্রদায়ের জমিদার রায় বাড়ির পুজো। যে পুজোকে ঘিরে আছে তার অতীত গরিমা। আভিজাত্যের সুতোয় মোড়া এই পুজো সেই সময় দেখতে আসতেন দূরের এলাকার অনেক দর্শনার্থী।
একটা সময় যখন জমিদারি প্রথা চালু ছিল তখন এই পুজোতেও দেখা যেত আলাদা ঠাঁটবাট। হাতির পিঠে চাপিয়ে দুর্গা প্রতিমাকে সপরিবারে নিয়ে আসা হত কালচিনির মেন্দাবাড়ির এই রায় বাড়িতে। পুজো উপলক্ষে গ্রামে আয়োজন হত মেলার। চলত দেদার খাওয়া দাওয়া। কিন্তু আজ সেইসব জিনিস অতীত। তবুও আগেকার সেই ঠাঁটবাট না থাকলেও এখনও এই বাড়িতে দুর্গা পুজোর আয়োজন করা হয়। এবছর ১০৮ তম বর্ষের দুর্গাপুজো। প্রসঙ্গত বনেদি পুজো হলেও এই বাড়ির পুজো অন্যান্য বনেদি বাড়ির পুজোর থেকে একটু আলাদা। মেচ সম্প্রদায়ভুক্ত হলেও পুজোর সমস্ত আয়োজন করা হয় বাঙালি রীতি অনুসারেই।
কালচিনি ব্লকের মধ্যে সবচেয়ে পুরনো পুজো হল এই বাড়ির পুজো। বাঙালি বনেদি পরিবারের পুজো সম্পর্কে অনেকের ধারণা থাকলেও মেচদের পুজো কীভাবে হয় তা অনেকের কাছেই অজানা। নিজেদের সেই অতীতের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে রায় পরিবারের সদস্যরা জানান, 'একটা সময় ছিল যখন এই বাড়ির পুজোকে কেন্দ্র করে গোটা গ্রামে তৈরি হত উৎসবের মেজাজ। পুজোর দিনগুলিতে আশেপাশের সমস্ত লোকের পাত পড়ত এই বাড়িতেই। ঢাক, কাশি ও শঙ্খের আওয়াজে কেঁপে উঠত গোটা এলাকা। রায় পরিবারের সদস্য সুব্রত রায় জানান, 'এই পুজোর সঙ্গে আমাদের ছেলেবেলার স্মৃতি জড়িয়ে আছে। ঠাকুরদা, বাবাকে দেখতাম পুজোর জোগাড় করছেন। জন্মাষ্টমী থেকেই শুরু হত পুজোর প্রস্তুতি।'
এবাড়িতে রয়েছে রাধা-গোবিন্দ মন্দির। যেখানে রয়েছেন প্রতিষ্ঠিত রাধা-মাধব। ঠাকুর দালানে পূজিতা হন দেবী দুর্গা। পরিবারের অন্য সদস্যরা জানান, তাঁরা মেচ সম্প্রদায়ভুক্ত হলেও পুজোর আয়োজন হয় বাঙালি নিয়মে। বাঙালি পুরোহিত পুজো করেন। এই বাড়িতে অষ্টমীর দিন মহাদেবের পুজো হয়। একটা সময় ছিল যখন তাঁদের বাড়ির প্রতিমাকে সপরিবারে হাতির পিঠে চাপিয়ে নিয়ে আসা হত। সেই সময় শূন্যে গুলি ছুঁড়ে দেবীকে অভ্যর্থনা জানানো হত। পুজো উপলক্ষে সাতদিন ধরে বসত যাত্রাপালার আসর।
আগে এই বাড়িতে পুজোয় মহিষ বলি হত। বর্তমানে সেই প্রথা আর চালু নেই। পুজো উপলক্ষে এই পরিবারের আত্মীয়রা প্রায় সকলেই চলে আসেন। হৈ হৈ করে পুজোয় অংশগ্রহণ করেন সকলেই।