একটানা এবং একভাবে, ৫৫০ বছর ধরে সন্ধি পুজোয় কামান দাগা হয় গোপীবাবুর বাড়িতে
Durga Puja 2025: প্রায় ৫৫০ বছর ধরে মুর্শিদাবাদের কান্দি এলাকার ছাতিনাকান্দি গ্রামে গোপীবাবুর বাড়িতে তোপধ্বনির মধ্যে দিয়ে দুর্গাপুজোর দিন সন্ধি পুজোর সূচনা হয়।

আজকাল ওয়েবডেস্ক: প্রায় ৫৫০ বছর ধরে মুর্শিদাবাদের কান্দি এলাকার ছাতিনাকান্দি গ্রামে গোপীবাবুর বাড়িতে তোপধ্বনির মধ্যে দিয়ে দুর্গাপুজোর দিন সন্ধি পুজোর সূচনা হয়। আর এই কামান দাগা দেখার জন্য মুর্শিদাবাদের বিভিন্ন গ্রাম থেকে কয়েক শত মানুষ সন্ধিপুজোর আগে হাজির হন গোপীবাবুর বাড়ির সামনের মাঠে।
হিন্দু পুরাণ মতে, শারদীয়া দুর্গাপুজোর অষ্টমী এবং নবমী তিথির সন্ধিক্ষণে সন্ধি পুজো হয়। অষ্টমী তিথির শেষ ২৪ মিনিট এবং নবমী তিথির প্রথম ২৪ মিনিট হল সন্ধিক্ষণ। এই ৪৮ মিনিটের মধ্যে দুর্গাপুজোর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ সন্ধিপুজো শেষ করতে হয়। পুরাণের বর্ণনা অনুযায়ী এই সময়ের মধ্যেই অসুরদলনীরূপে তথা চামুণ্ডীরূপিনী দেবী দুর্গা 'চন্ড'এবং 'মুন্ড' নামে দু'ই অসুরকে নিধন করেছিলেন। তাই অষ্টমী এবং নবমীর সন্ধিক্ষণে দেবী চামুণ্ডার পুজো করা হয়।
সন্ধি পুজোর সময় দেবীর উদ্দেশ্যে ১০৮ টি প্রজ্জ্বলিত প্রদীপ এবং ১০৮ টি পদ্ম ফুল নিবেদন করা হয়। হিন্দু পুরাণের ভাষ্যকাররা বলেন, দেবী দুর্গা যখন মহিষাসুরের সঙ্গে যুদ্ধরত ছিলেন সেই সময়ে মহিষাসুরের সঙ্গী 'চন্ড' ও 'মুন্ড' দেবী দুর্গাকে পিছন থেকে আক্রমণ করে। যুদ্ধের নীতি ভঙ্গ হওয়ায় ক্রোধোন্মত্ত দেবী দুর্গার তৃতীয় নয়ন উন্মীলিত হয় এবং তিনি চামুন্ডা রূপ ধারণ করে অষ্টমী এবং নবমী তিথির সন্ধিক্ষণে ভয়ঙ্কর দুই অসুরকে নিধন করেন। ছাতিনাকান্দির গোপীবাবুর বাড়িতে ঠিক কত বছর আগে ,কে দুর্গাপুজো শুরু করেছিলেন তা জানা না গেলেও এলাকার মানুষের মুখে মুখে ঘোরে জমিদার গোপীকৃষ্ণের সিংহের আমলে ছাতিনাকান্দির এই পুজো এলাকায় ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে। সেই থেকেই এই পুজো গোপীবাবুর বাড়ির পুজো নামে পরিচিত। গোপীবাবুর পরিবারের সদস্যরা বলেন, আজ থেকে প্রায় সাড়ে ৫০০ বছর আগে গ্রামের প্রত্যেক মানুষের বাড়িতে ঘড়ি ছিল না। তাই সন্ধিপুজোর সময় অনেকেই বুঝতে পারতেন না। সেই কারণে দুর্গাপুজোর সময় গ্রামের সাধারণ মানুষ প্রচন্ড অসুবিধার মধ্যে পড়তেন। এই অসুবিধার কথা জমিদার গোপীকৃষ্ণ সিংহকে জানালে তিনি সন্ধিপুজোর শুরু এবং পুজো শুরুর ২৪ চব্বিশ মিনিট পর দ্বিতীয়বার কামান দাগার ব্যবস্থা চালু করেছিলেন, যা আজও নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করেন তাঁর পরিবার এবং গ্রামের লোকেরা।
শোনা যায় কয়েকশো বছর আগে গোপীবাবুর বাড়িতে বড় একটি কামান দেগে সন্ধি পুজোর সূচনা হতো। সেই কামানের আওয়াজ প্রায় ২০-২৫ কিলোমিটার দূরের গ্রামগুলো থেকেও শোনা যেত। গোপীবাবুর বাড়ির কামানের আওয়াজ শুনে খড়গ্রাম , বড়ঞা, ভরতপুর-সহ আরও একাধিক এলাকার বাড়িগুলোতে দুর্গাপুজোর সন্ধিপুজোর সূচনা হত একসময়। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নিরাপত্তার কারণে কামানের আকার এবং আয়তন অনেকটাই ছোট হয়ে গিয়েছে। তবে এখনও সন্ধি পুজোর সময় ছোট্ট একটি কামানে বারুদ ভরে গোপীবাবুর বাড়ির চতুর্ভুজা দেবী দুর্গার সন্ধি পুজোর সূচনা হয়। সন্ধি পুজো শুরু হওয়ার ঠিক ২৪ মিনিট পর নবমী তিথির শুরুতে বলিদানের সময় আরও একবার সেই কামান থেকে 'গোলা' দাগা হয়।
মঙ্গলবার সন্ধি পুজোর শুরুর সময় এই কামান দাগা দেখতে হাজির ছিলেন গ্রামের কয়েকশো মানুষ। তবে এখন নিরাপত্তার স্বার্থে কামান দাগার সময় সাধারণ মানুষকে বেশ কিছুটা দূরে রাখা হয়। অগ্নিসংযোগের পর 'গোলা' ফাটলে কামানটি পেছনদিকে অনেকটা ছিটকে চলে যায়। সেই কারণে সকলকে কামান থেকে নিরাপদ দূরত্বে রেখে এই বাড়িতে পালন হয়ে চলেছে শতবর্ষ প্রাচীন রীতি।