অষ্টমীর অঞ্জলিতেই প্রথম দেখা, তাঁকেই বিয়ে! পুজোর ম্যাজিকে জীবনসঙ্গী পাওয়ার গল্প শোনালেন পি সি সরকার জুনিয়র

PC Sorcar Jr: পেরিয়ে গিয়েছে মহালয়া। শুরু হয়ে গিয়েছে বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব। এহেন উৎসবের আমেজে বুঁদ হয়ে অতীতের পাতা উল্টোলেন তারকা জাদুকর প্রদীপচন্দ্র সরকার ওরফে পি সি সরকার জুনিয়র।

Magician P C Sorcar Jr shares his Durga Puja experience

পেরিয়ে গিয়েছে মহালয়া। শুরু হয়ে গিয়েছে বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব। এহেন উৎসবের আমেজে বুঁদ হয়ে অতীতের পাতা উল্টোলেন তারকা জাদুকর প্রদীপচন্দ্র সরকার ওরফে পি সি সরকার জুনিয়র। আসলে, তাঁর জীবনটাই আবর্তিত হয়েছে ম্যাজিককে কেন্দ্র করে। তাই তাঁর ছোটবেলা, কৈশোর এবং প্রিয় পুজোর স্মৃতিতেও যে জুড়ে থাকবে ম্যাজিক এতে আর আশ্চর্যের কী! 


“ছোটবেলায় কলকাতায় বালিগঞ্জে থাকতাম। যখন একটু বড় হই, বাবা তৈরি করলেন ইন্দ্রজাল ভবন। ছোটবেলায় বাবাকে কখনও পুজোয় পাইনি। তখন তিনি হয়তো লন্ডন অথবা নিউ জিল্যান্ডের কোনও জায়গায় তাঁর দলবল নিয়ে ম্যাজিক দেখতে ব্যস্ত। দুর্গাপুজোয় তাই দাদা, দিদি, ভাইদের সঙ্গেই ঘুরতাম একটু এদিক-ওদিক। নতুন এক সেট জামাকাপড় হত, হয়তো একজোড়া জুতোও হত...তাতেই যেন মনে হত সব পেয়েছি। আর তখন কলকাতায় এত কাছাকাছি সব পুজো হওয়ার কোনও চল ছিল না। বেশ খানিকটা দূরে দূরে হত। তবে এখনকার মত না হলেও, তখনও বেশ লোক নামত রাস্তায়,এটুকু মনে আছে। আমরা ভাই-বোনেরা সন্ধ্যের মধ্যে মণ্ডপ ঘুরে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে আসতাম। কী যে সব দিন ছিল...

 
তখন আমার বয়স কুড়ি একুশ। এমনই এক পুজোর অষ্টমীতে পাড়ার মণ্ডপে দেখি জয়শ্রীকে। পরবর্তী সময়ে যিনি আমার স্ত্রী হবেন! তখন বন্ধুদের অনেকেই প্রেম করছে, তবে আমার প্রেমিকা না থাকায় আমার ইজ্জত একটু কম বন্ধু মহলে। যাই হোক, একা একা দীর্ঘশ্বাস ফেলে পাড়ার মণ্ডপে গিয়েছি অঞ্জলি দিতে। মনে আছে পুরুতমশাই যখন দেবীকে ‘যে যার নিজের মনের কথা’ জানানোর নির্দেশ দিলেন, খানিক অন্যমনস্ক হয়ে গিয়েছিলাম। যাই হোক, এক সেট প্রার্থনা রেডি ছিল। সেটা বললেও মনের ভিতর কিন্তু তখন অন্য চিন্তাভাবনা চলছিল। যাই হোক কোনওরকমে মনে মনে বলে উঠেছিলাম, ‘..এক্সকিউজ মি, মা তুমি তো অন্তর্যামী। তুমি তো মা, তাই পুরো বুঝতেই পারছো। মানে আমি তো একদিন বিয়ে করব তো মানে সেই ম্যাডামের সঙ্গে যদি একটু আগে...মানে এখনই যদি আমার দেখা করিয়ে দিতে, একটু আলাপ করিয়ে দিতে তো খুব ভাল হত। প্লিজ, মা দূর্গা বলে দাও কার সঙ্গে আমার বিয়ে হবে... কোনওরকমে বলা শেষ করেছি, তারপর মনে হল কেউ যেন ফিসফিস করে কানের মধ্যে বলছেন, ‘তোর বউ তো তোর কাছেই দাঁড়িয়ে আছে।’ চোখ খুললাম, দেখি সামনে সব পাড়ার মাসি-পিসি-কাকীমারা। খুব মনখারাপ হয়ে গেল। না, না এদের মধ্যে ‘তাঁকে’ পাব কী করে? এঁদের মধ্যে ‘তিনি’ হতেই পারেন না! মনের দুঃখে বেরিয়ে আসছি, এমন সময় দেখি কিছু স্কুলের ছাত্রী নিজেদের মধ্যে আড্ডা দিচ্ছে। দেখলাম, প্রত্যেককেই চিনতাম তবে একজনকে ছাড়া। কিন্তু কী অদ্ভুত! মনে হচ্ছে তাঁকে কত বছর ধরে চিনি। মনে হল - আরে ওই তো আমার বউ! আর কিছু না ভেবেই মন্ত্রমুগ্ধর মতো সটান এগিয়ে গেলাম ওর দিকে। গিয়ে জিজ্ঞেস করেছিলাম – ‘আমাকে চিনতে পারছ? কী নাম তোমার?’ জয়শ্রী কিন্তু মুখ ঘুরিয়ে নীল। পাত্তাই দিল না। পাশ থেকে ওর বান্ধবীরা বলে উঠল, ‘ওর নাম জয়শ্রী, ডাকনাম মিন্টু।’ শুনে ওর দিকে তাকিয়ে বলেছিলাম, ‘কী হল কথা বলছ না কেন? আমি তোমার বড়, আর তুমি আমার বউ তো।’ শুনেই রেগেমেগে বলেছিল, ‘এক থাপ্পড় মারব, বদমায়েশ কোথাকার! দাঁড়ান, আপনার কথা বাবাকে বলছি।’ বলেই এক দৌড়ে চলে গিয়েছিল। 


পরে রাস্তায় টুকটাক দেখা হলেও মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল ও। সাউথ পয়েন্ট স্কুলে উঁচু ক্লাসে তখন পড়ত ও। বছর ঘুরে ফের পুজো এল। ফের পুজোর মণ্ডপে দেখা। আবার ওকে পেয়ে বললাম – “আরে সত্যিই কি আমাকে চিনতে পারছ না তুমি? আমি তো তোমার বর। শোনামাত্রই এবারে আরও রেগে যায় ‘মিন্টু’। বলে ওঠে, ‘অভদ্র, অসভ্য লোক একটা। বাবা বলেছে, আপনাকে জুতোর বাড়ি মারবে!’ সেই হল শুরু। তারপর আলাপ বাড়ল, ফোন তুলে চুপ করে থাকা থেকে অল্প অল্প করে কথা, আমার জিপগাড়িতে উঠলও একসময়। ভোঁ করে একপাক ঘুরে বাড়ি চলে আসা…লেকের ধারে ঠাণ্ডা পানীয় খাওয়া। বুঝেছিলাম, জিতে গিয়েছি আমি। এরপর দুই বাড়ির কথাবার্তায় জয়শ্রীকে পেয়েছিলাম জীবনে। 
এও তো ম্যাজিক! দেবী দুর্গার ম্যাজিক, পুজোর ম্যাজিক!”