চকদিঘির জমিদারবাড়ি: বিদ্যাসাগরের স্মৃতি জড়ানো শারদোৎসব আজও অটুট আভিজাত্যে

বাঙালির সেরা উৎসব শারদোৎসবের মাতৃ আরাধনায় শহরের পাশাপাশি গ্রাম বাংলার বনেদিয়ানা ও আভিজাত্য টেক্কা দিয়ে চলেছে বহু যুগ ধরে। আর সেই টেক্কায় ভাটা পরেনি আজও। মূলত শারদোৎসবকে ঘিরে গ্রাম বাংলার জমিদার বা রাজবাড়িগুলির সাবেকিয়ানা ও বনেদিআনার মুগ্ধ করা মাতৃ আরাধনার দৃশ্য যেন চোখ ফেরানো দায়।

Durga Puja 2025 Chakdighi Durga Puja Preperation
সত্যজিৎ রায়ের 'ঘরে বাইরে' থেকে শুরু করে সাম্প্রতিক সিনেমার শুটিং—সবেতেই এই বাড়ি দর্শকদের কাছে চেনা ও প্রিয় হয়ে উঠেছে

আজকাল ওয়েবডেস্ক: বাঙালির সেরা উৎসব শারদোৎসবের মাতৃ আরাধনায় শহরের পাশাপাশি গ্রাম বাংলার বনেদিয়ানা ও আভিজাত্য টেক্কা দিয়ে চলেছে বহু যুগ ধরে। আর সেই টেক্কায় ভাটা পরেনি আজও। মূলত শারদোৎসবকে ঘিরে গ্রাম বাংলার জমিদার বা রাজবাড়িগুলির সাবেকিয়ানা ও বনেদিআনার মুগ্ধ করা মাতৃ আরাধনার দৃশ্য যেন চোখ ফেরানো দায়। একই সঙ্গে মাতৃ আরাধনার যে নিষ্ঠা এবং নিয়মবিধি তা যেন মনকে আবেগঘন করে তোলে। আর ঠিক তেমনি মুগ্ধ করা নজরকাড়া শারদোৎসবে মাতৃ আরাধনার যে ধারাবাহিকতা তা বহন করে চলে আসছে হুগলি জেলার চকদিঘি জমিদার বাড়ি। আলোর রোশনাইতে কিছু ভাটা পরলেও, নিষ্ঠা ও ভক্তির সঙ্গে জাঁকজমকপূর্ণ এই চকদিঘি রাজবাড়ির শারদোৎসবে কোনওরকম ভাটা পড়েনি। 

বলাবাহুল্য, জামালপুরের চকদিঘির সেই জমিদারবাড়ি—যেখানে একসময় সত্যজিৎ রায়ের 'ঘরে বাইরে' ছবির দৃশ্য জীবন্ত হয়েছিল—আজও দুর্গাপুজোর জন্য সমান আকর্ষণের কেন্দ্র। সময়ের স্রোতে অনেক কিছুই বদলেছে, যেমন- হাতিশাল, ঘোড়াশাল, এমনকী বিদ্যাসাগরের সেই প্রিয় ‘হাওয়া মহল’ আজ হারিয়ে যাওয়ার পথে। বাগানবাড়ির সৌন্দর্য হয়েছে ম্লান, ঝোপঝাড়ে ঢাকা পরেছে চারদিক। তবু, এই বাড়ির পুজোর রেওয়াজ আজও অটুট।

পুরনো রীতিতেই মহিলাদের ‘পর্দার আড়ালে’ পুজো: 

জমিদারি আমলের মতোই আজও বাড়ির মহিলারা পুজোতে পর্দার আড়ালেই থাকেন। তাঁদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা করা হয়—ঠিক যেমন একদা হত। বছরের বাকি সময় প্রায় ফাঁকা পড়ে থাকা বাড়ি পুজোর চারদিন ঝাড়বাতির আলোয় ঝলমল করে ওঠে। বিদেশে কিংবা শহরে থাকা পরিবারের সদস্যরাও ফিরে আসেন আপন আঙিনায়।

বিদ্যাসাগরের স্মৃতি, রয়ে গেছে তাঁর প্রিয় চেয়ার: 

স্থানীয়রা বলেন, একসময় ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর নিজে এই বাড়ির পুজো দেখতে আসতেন। প্রিয় ‘হাওয়া মহল’-এর ঘরে বসে তিনি লিখতেন, থাকতেন। সেই ঘর আজ ধুলোয় মলিন, অথচ তাঁর বসার চেয়ারটি আজও ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

নৈবেদ্যের ঐতিহ্য, জাঁকজমকের হালফিল চিত্র: 

আগেকার মতোই আজও নৈবেদ্যে আখরোট, কাজু, কিশমিশ থাকবেই। সঙ্গে মাখাসন্দেশ ও অন্যান্য মিষ্টি। বলা বাহুল্য আলোর রোশনাই কিছুটা কমলেও, আচার-অনুষ্ঠান মেনে, ঢাকের আওয়াজে প্রতিপদ থেকেই চকদিঘিতে উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়ে।

সিনেমার দৌলতে জনপ্রিয়তার শীর্ষে এই জমিদার বাড়ি: 

এই জমিদারবাড়ির আভিজাত্য কেবল পুজোতেই নয়, রূপোলি পর্দাতেও অম্লান। সত্যজিৎ রায়ের 'ঘরে বাইরে' থেকে শুরু করে সাম্প্রতিক সিনেমার শুটিং—সবেতেই এই বাড়ি দর্শকদের কাছে চেনা ও প্রিয় হয়ে উঠেছে।

মানুষের টান আজও অটুট: 

ভিতরে ঢোকার অনুমতি না থাকলেও দূরদূরান্ত থেকে ভিড় জমান মানুষ। জমিদারবাড়ির সামনের আমবাগানের ছায়ায় বসে তাঁরা ভাগ করে নেন পুজোর আবহে। আশপাশে সর্বজনীন পুজো বেড়েছে। তবে কিছু সার্বজনীন পুজোও রয়েছে এই চকদিঘিতে। তবু চকদিঘির জমিদারবাড়ির দুর্গোৎসব আজও আলাদা মর্যাদায় উজ্জ্বল। বলাবাহুল্য, সময়ের সঙ্গে অনেক কিছু হারালেও, জমিদারবাড়ির এই দুর্গাপুজো আজও ইতিহাস, ঐতিহ্য আর আভিজাত্যের মেলবন্ধন।