চার পরিবারের শুরু করা পুজোর তিন-এ পা, অক্টোবরের শুরুতে জমজমাট লন্ডন

Durga Puja 2025 MOCA Medway This year marks the third year of Durga Puja celebration
আজকাল ওয়েবডেস্ক: শহর থেকে দূরে। ঘর থেকে দূরে। কাশফুল দেখা হয় না। নাড়ু বানাতে দেখেন না আর। কিন্তু দেখুন বা না দেখুক, পা টিপে টিপে হাজির হয় শরৎ কাল। বাঙালি যে দেশেই থাক না কেন, ক্যালেন্ডারে শরৎ এলেই, যেন চোখের সামনে ভেসে ওঠে দুর্গাপুজো। ভেসে ওঠে দুর্গার আগমণ, খিচুড়ি ভোগ, অঞ্জলি। তাই দেশ থেকে কিলোমিটার মেপে যতই দূরে থাক না কেন, বুকে সাহস জুগিয়ে, একে একে তাঁরা শুরু করে ফেলেন দুর্গা পুজো।
 
এরকমই এক পুজোর গল্প এখানে। চার পরিবার মিলে এক বছর ভেবেছিলেন, শুরু করবেন পুজো। শুরু হয়ও। তারপর, এক, দুই পেরিয়ে সেই পুজো তিন-এ পা দিয়েছে। দুর্গাপূজা ২০২৫ – MOCA মেডওয়ে। ছোট্ট একটা মিটিং, কিছু জরুরি আলোচনা, উৎসাহ আর ঘরের সুবাস বিদেশে বয়ে নিয়ে যেতে একদিন ধুমধাম করে, ছোট্ট পরিসরে শুরু হয়েছিল এই পুজো। একটি ছোট সমাবেশ থেকে যা শুরু হয়েছিল, তা এখন একটি প্রাণবন্ত বহুসংস্কৃতির উৎসবে পরিণত হয়েছে, যা মেডওয়েতে আনন্দ এবং সাংস্কৃতিক ঐশ্বর্য ছড়িয়ে দেয়।
 
MOCA (মেডওয়ে ঐকতান কালচারাল অ্যাসোসিয়েশন) দ্বারা আয়োজিত। লক্ষ্য,শিকড়ের সঙ্গে সংযুক্ত থাকা। লক্ষ্য, বৈচিত্র্যময় সম্প্রদায়কে আলিঙ্গন করে দুর্গাপূজার তাৎপর্য উদযাপন করা। চলতি বছরে অক্টোবরের দুই থেকে পাঁচ তারিখ পর্যন্ত চলবে এই পুজোর উদযাপন। কী কী হবে? খাওয়া দাওয়া কী কী? তালিকা বেশ লম্বা। 
 
পুজোর সদস্যরা জানাচ্ছেন, এবারের পুজোতে থাকছে-
সাংস্কৃতিক পরিবেশনা, বলিউড নাইটস, গরবা নাইট, ফ্যাশন শো। থাকছে ভোগ প্রসাদ। প্রায় প্রতিদিন সদস্যরা রান্না করবেন ভোগ, প্রসাদ। পুজো প্রাঙ্গনে থাকছে বিভিন্ন ধরণের সুস্বাদু ভারতীয় খাবারের স্টল। সবথেকে বড় কথা, পুজো ঘরোয়াভাবে শুরু হলেও, এই পুজোয় থাকছে থিম। গতবারেও তাই ছিল। এবারেও অন্যথা নয়। এবারের থিম-আইকনিক লন্ডন টেলিফোন বুথ, যা তা আবার তৈরি করছেন পুজোর সদস্যরা। 
এই শরতে পুজো হচ্ছে রিডিংয়েও। ব্রিটিশ, বাংলাদেশি ও এশিয়ার নানা দেশের মানুষ একত্রিত হয়ে প্রমাণ করছেন ধর্ম যার যার, উৎসব সবার। রিডিংয়ের পূজো শুধুই প্রবাসীদের উৎসব নয়, এ এক আত্মপরিচয়ের উদযাপন। দূর দেশে থেকেও মন খুঁজে পায় ‘বাড়ি’র গন্ধ।প্রবাসেও শরতের হিমেল হাওয়া মনে করিয়ে দেয়, পুজো এসে গেছে।

এই পুজোর আয়োজন করে বেঙ্গলি কালচারাল সোসাইটি, রিডিং। সংগঠনের মুখপাত্র ও কর্ণধার শুভায়ন সেনগুপ্ত বলেন, “তিথি মেনে পূজিত হচ্ছেন দশভূজা দেবী দুর্গতিনাশিনী। আমাদের ঈষ্টদের করে যাওয়া পুজোর আচার, নিয়মকানুন কাস্টমাইজ করার সাহস আমাদের নেই। এখানে কুমারী পুজো, সন্ধিপুজোয় ১০৮টি প্রদীপ, পদ্মফুল, অঞ্জলি ও ঢাক- সবই থাকে। শুধু বদলে যায় ঠিকানা, বদলায় না আত্মার টান।” 

অন্যদিকে, স্লাউয়ের দুর্গাপুজো এ বছর সপ্তম বছরে পা দিল।  হাজার মাইল দূরে থেকেও প্রবাসী বাঙালির কাছে এই পূজো শুধু ধর্মীয় আচার নয়, বরং এক বিশাল সাংস্কৃতিক মিলনমেলা। কলকাতার ভিড় কিংবা কাশবনের হাওয়া না থাকলেও, ঢাকের তালে, মণ্ডপের আলোয় আর পরিচিত মুখের হাসিতে এখানে ভেসে ওঠে ঘরে ফেরার আনন্দ। স্লাউ, হ্যারো, ক্রয়ডন, ইস্ট লন্ডন সব প্রান্তের মানুষ এসে মিলে যায় এক আবেগে, এক উৎসবে।

এবারের আড্ডার পুজোর বিশেষ আকর্ষণ তার থিম। বাংলার চায়ের দোকান। কাঠের বেঞ্চ, কাগজের কাপ, ভাপ ওঠা চা আর অচেনা-চেনা মুখের আড্ডায় যেন ফিরে আসে পাড়ার মোড়ের সেই সাদামাটা ঠেক। সকাল থেকে রাত অবধি চায়ের ধোঁয়ার ফাঁকে গড়ে ওঠে নতুন বন্ধন, ভাঙাগড়া সম্পর্ক, কবিতা কিংবা গান। উদ্যোক্তাদের কথায়, চা শুধুই পানীয় নয়, এটি সম্পর্কের বাঁধন, চিন্তার আদানপ্রদান আর আনন্দের উৎস। প্রবাসেও সেই স্মৃতি জীবন্ত রাখতে আড্ডার পূজোয় তৈরি হচ্ছে এক টুকরো সাবেকি বাংলা।