ডাকাতি করতে যাওয়ার আগে কালী পুজো করতেন রঘু ডাকাত, বিধু ডাকাত, আজও অমলিন সেই পুজো, কোথায় হয় জানেন?
কয়েকশো বছর আগের কথা। রঘু ডাকাত, বিধু ডাকাত ছিলেন দুই সহচর। ডাকাতি করতেন। কিন্তু ডাকাতি করে পাওয়া সামগ্রী অর্থ বিলিয়ে দিতেন দুঃস্থদের। ইংরেজদের সঙ্গে লড়াই, দেশ মাতৃকার সেবায় নিয়োজিত ছিলেন রঘু-বিধু দু'জনেই। তাঁরা দু'জনই ছিলেন কালী ঠাকুরের ভক্ত। প্রতিষ্ঠা করেছিলেন কালী পুজোর। ডাকাতি করতে যাওয়ার আগে কালীর পুজো করতেন।

মিল্টন সেন, হুগলি: কয়েকশো বছর আগের কথা। রঘু ডাকাত, বিধু ডাকাত ছিলেন দুই সহচর। ডাকাতি করতেন। কিন্তু ডাকাতি করে পাওয়া সামগ্রী অর্থ বিলিয়ে দিতেন দুঃস্থদের। ইংরেজদের সঙ্গে লড়াই, দেশ মাতৃকার সেবায় নিয়োজিত ছিলেন রঘু-বিধু দু'জনেই। তাঁরা দু'জনই ছিলেন কালী ঠাকুরের ভক্ত। প্রতিষ্ঠা করেছিলেন কালী পুজোর। ডাকাতি করতে যাওয়ার আগে কালীর পুজো করতেন।
ঘন জঙ্গলে ঘেরা ত্রিবেনী কালিতলা ছিল তাঁদের আস্তানা। পরবর্তী সময়ে সেই পুজো বিখ্যাত হয়েছে ডাকাত কালী নামে। কয়েকশো বছরের প্রাচীন কালীতলা এখন পাকা মন্দির হয়েছে। রীতি মেনে পুজো হয় দীপান্বিতা আমাবস্যায়। মগড়া জয়পুরে বাড়ি ছিল বিধু ঘোষের। তাঁর পরিবারের বংশধরেরা এখনও আছেন। প্রত্যেকেই সু প্রতিষ্ঠিত। কেউ ডাক্তার, কেউ ইঞ্জিনিয়ার। উচ্চ শিক্ষিত হয়ে বিদেশেও থাকেন কেউ কেউ। বিধু ঘোষের নাত বউ মধু ছন্দা ঘোষ জানান, তাঁর শ্বশুর নকুইশ্বর ছিলেন বিধু ডাকাতের ছোটো ছেলে। বড় ছেলের নাম ছিল বীরেশ্বর।
শ্বশুর তাঁকে বলেছিলেন, বিধু আর রঘু ডাকাতরা সে সময় জমিদার জোতদারদের বাড়িতে লুট করতেন। যাঁরা স্বেচ্ছায় দিয়ে যেতেন, তাঁদের বাড়ি যেতেন না। আর সেই লুটের সামগ্রী দুঃস্থ মানুষকে বিলিয়ে দিতেন। ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে যাঁরা লড়াই করতেন, তাঁদেরও সাহায্য করতেন। অস্ত্রের যোগান দিতেন।
কুন্তিঘাটে নদীর তীরে ছিল ঘন জঙ্গল। নদীর মোহনায় অস্ত্র লুকিয়ে রাখতেন। ধরাও পরেছেন ব্রিটিশ পুলিশের হাতে। ডাকাতি করলেও নিজেদের পরিবারের জন্য কিছুই রেখে যেতে পারেননি। বিধু ডাকাতের তিন ছেলের এক ছেলের খুব ছোটো বয়সে মৃত্যু হয়। দুই ছেলে নাবালক তখন, বিধু ডাকাতের মৃত্যু হয় ১৮২০-২২ সাল নাগাদ।
বাগাটির বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবার বিধুর নাবালক ছেলেদের পড়াশোনা করিয়ে মানুষ করেন। বিধু ডাকাতের পরিবারের অনেকে এরপর উচ্চ শিক্ষা নিয়ে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হয়েছেন। সেই সাহায্যের কথা তাঁরা ভোলেননি। তাই বিধু ডাকাতের মতো মানুষের সহায় হন তাঁরাও।
মধু ছন্দা দেবীর শ্বশুর ছিলেন ইঞ্জিনিয়ার। তাঁর দুই ছেলে হর প্রসাদ ও দেব প্রসাদ। হর প্রসাদ ইঞ্জিনিয়ার, দেবপ্রসাদ ডাক্তার। হর প্রসাদের স্ত্রী মধুছন্দা। তাঁদের দুই সন্তান ছেলে যীশু ইঞ্জিনিয়ার, মেয়ে পূজা যাদবপুর থেকে পড়াশোনা করেছেন। মধুছন্দা দেবী পশ্চিম মেদিনীপুর থেকে দুই অনাথ শিশুকে দত্তক নিয়েছেন। বোনের বয়স তিন, দিদির বয়স সাত বছর।
মধুছন্দা বলেন, 'আমি পারিবারিক ভাবে যেটা জানি, ব্রিটিশদের যাঁরা পৃষ্ঠপোষক ছিলেন, তাঁদের বাড়ি লুঠ করতেন রঘু, বিধু। কোনও দুঃস্থ পরিবার হয়তো মেয়ের বিয়ে দিতে পারছে না। তাদের বলতেন কী লাগবে লিখে দিতে। সেই মতো বড় পুকুর পারে রেখে আসতেন সব। তবে তিনি মা কালীর সামনে নরবলি দেওয়ার কথা শোনেননি। মানুষকে ধরে ভয় দেখানোর কথা শুনেছেন।
জয়পুরে বিধু ডাকাতের বাড়ি বেদখল হয়েছে আগেই। তবে তাঁদের পীড়তলা আছে। সেখানে কালী পুজো হয়।' স্থানীয় বাসিন্দা রঘুনাথ ভৌমিক বলেন, 'বিধু ঘোষের স্মৃতি আছে এই এলাকায়। কালী মন্দির করা হয়েছে।কালী পুজোর দিন ডাকাত কালীর নিয়মে আচার অনুষ্ঠান হয়। স্থায়ী কালী প্রতিষ্ঠা করার দাবি রয়েছে গ্রামবাসীদের।'
ছবি পার্থ রাহা।