রক্তের বলিদান কখনও বৃথা যায় না, ৬৯তম বছরে টালিগঞ্জ অগ্রণী ক্লাবের থিম ‘রক্তপাত’
Kali Puja 2025: আগামী সোমবার অর্থাৎ ২০ অক্টোবর কালীপুজো। এই শুভ দিন উদযাপনে উদ্যোগী কলকাতার নামীদামি সব ক্লাব। এর মধ্যে অন্যতম টালিগঞ্জের অগ্রণী ক্লাব।

আজকাল ওয়েবডেস্ক: আগামী সোমবার অর্থাৎ ২০ অক্টোবর কালীপুজো। এই শুভ দিন উদযাপনে উদ্যোগী কলকাতার নামীদামি সব ক্লাব। এর মধ্যে অন্যতম টালিগঞ্জের অগ্রণী ক্লাব। তাদের পুজোটি ‘অগ্রণী শ্যামা কালী পুজো’ নামে পরিচিত। ২০২৫ সালে ক্লাবের পুজোটি ৬৯তম বর্ষে পদার্পণ করতে চলেছে। এই বছরের থিম ‘রক্তপাত’।
‘রক্তপাত’ কেবল একটি ভৌতিক গল্প নয়। এটি কর্তব্যের বোঝা, আকাঙ্ক্ষার আগুন এবং অভিশাপের অন্ধকার ছায়ার মধ্য দিয়ে একটি দীর্ঘ যাত্রা। ভালবাসা বা ন্যায়বিচারের নামে করা প্রতিটি ত্যাগ আত্মাকে পুড়িয়ে দেয়। সীমা ছাড়িয়ে যাওয়া কর্তব্য অবশেষে একটি শৃঙ্খলে আবদ্ধ হয়ে যায়। আর যে স্বপ্নের পিছনে অতিরিক্ত তাড়া করা হয় তার মূল্য রক্তের বিনিময়ে দিতে হয়।
এই পৃথিবী রক্তের স্মৃতি ভোলে না- এটি মাটির গন্ধ, বাতাসের কম্পন এবং হৃদয়ের গভীরতার সঙ্গে মিশে যায়। মুক্তির পথ সর্বদা সেই সব মানুষের অশ্রুতে ভিজে থাকে যারা সঠিক পথে চলতে চেয়েছিলেন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত সব কিছু হারিয়েছেন। সেই ভাবনাই তুলে ধরা হবে এই বছরের থিমে। মণ্ডপের সাজসজ্জার দায়িত্ব নিজেদের কাঁধে তুলে নিয়েছেন ক্লাবের সদস্যরাই। ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে সমগ্র পুজোর আয়োজনের বিষয়টি পরিচালনা করা হচ্ছে।
টালিগঞ্জ অগ্রণী ক্লাবের এই বছরে ডিজিটাল মিডিয়া পার্টনার আজকাল ডট ইন। অগ্রণী পুজোকে টালিগঞ্জের সবচেয়ে প্রিয় উৎসবগুলির মধ্যে একটি করে তুলেছে এমন আলো, শব্দ, ভিড়, সাজসজ্জা সব কিছুর ঝলক আপনারা দেখতে পাবেন শুধুমাত্র আজকাল ডট ইন-এ।
এ বিষয়ে টালিগঞ্জ অগ্রণী ক্লাবের পুজো কমিটির সভাপতি রাজ সেনগুপ্ত বলেন, “আমাদের এই বছরে থিম আর্টিস্ট বিশাল দাস। তাঁরই ভাবনা। আমরা বলি বলতে কী বুঝি, পাঁঠাবলি, ছাগবলি ইত্যাদি। অর্থাৎ কালীপুজোর সময় মাকে যে উৎসর্গ করে যে বলিদান দেওয়া হয়। এ সবের বাইরে সমাজে প্রতিনিয়ত কেউ না কেউ পরিস্থিতির বলি হচ্ছি। উদাহরণস্বরূপ, কোনও ভাল খেলোয়াড় সামাজিক বা পারিবারিক পরিস্থিতির চাপে নিজের স্বপ্নটিকে বলি দিয়ে দিল। এই ধরণের বিষয়গুলিই তুলে ধরা হবে।” তিনি আরও বলেন, “এ ভাবেই সমাজের নানা দিক তুলে ধরা হবে। আমাদের পুজোমণ্ডপে প্রতি বছর লাইভ শো হয়। এই বছর লাইভ শোয়ে এই ধরণের নানা বিষয় তুলে ধরা হবে। কিন্তু মুখ্য চরিত্র পালন করবে সমাজ। দর্শকদের দেখানো হবে সমাজ কীভাবে এই সব বলি নিচ্ছে। দর্শকদের দৃষ্টিভঙ্গি ঠিক কী হতে পারে তাই এ বছরের আমাদের ভাবনা।”
প্রতি বছর পুজোটির জনপ্রিয়তা ক্রমশ বেড়েই চলেছে। ২০২১ সালে সাড়ে তিন হাজার দর্শনার্থী থেকে ২০২২ সালে সাড়ে ছয় হাজারের বেশি, ২০২৩ সালে দশ হাজারের বেশি এবং ২০২৪ সালে রেকর্ড-ব্রেকিং ১৬ হাজারেরও বেশি দর্শনার্থী পা রেখেছিলেন এই পুজো মণ্ডপে। এই বছর উদ্যোক্তারা আশা করছেন ২০ হাজারেরও বেশি ভক্ত এবং দর্শনার্থীর সমাগম ঘটবে। এই বিপুল সংখ্যক দর্শনার্থীদের ভিড় সামলাতে টালিগঞ্জ অগ্রণী ক্লাব প্রস্তুত। শিল্প এবং ভক্তির সংমিশ্রণ প্রত্যক্ষ করতে একবার যেতেই হবে অগ্রণী ক্লাব শ্যামা পুজো চাক্ষুস করতে।
দীর্ঘ দিনের যাত্রা পথে প্রাপ্ত সম্মানও নেহাত কম নয়। ২০২৪ সালে ডিবি নিউজ কলকাতা কর্তৃক প্রথম পুরস্কার, জনতার কন্ঠ কর্তৃক সেরা প্রতিমা। ২০২৩ সালে ডিবি নিউজ কলকাতা কর্তৃক প্রথম পুরস্কার, মাই নেচার কোচ কর্তৃক কালী সম্মান। ২০২২ সালে সুরক্ষা ডায়াগনস্টিক্স কর্তৃক সেরা থিম রানার-আপ এবং ডিবি নিউজ কলকাতা কর্তৃক বছরের সেরা চিন্তাভাবনার পুরস্কার পেয়েছে টালিগঞ্জ অগ্রণী ক্লাবের শ্যামা পুজো।