হারিয়ে যাওয়া সুরই আজ জীবনের প্রতিধ্বনি, ১৩তম বর্ষে বিজয়গড় ৬ পল্লীর আয়োজন ‘বহমান’

Kali Puja 2025: সময় থেমে থাকে না— সে বয়ে চলে নিজের ছন্দে, অবিরাম, অচঞ্চল। সময়ের এই অদম্য গতির মধ্যে মানুষ যেন আজ বন্দি।

Kali Puja 2025: Bijaygarh 6 Pally will highlight the circle of life this year
চলছে চূড়ান্ত পর্বের প্রস্তুতি। নিজস্ব চিত্র।

আজকাল ওয়েবডেস্ক: সময় থেমে থাকে না— সে বয়ে চলে নিজের ছন্দে, অবিরাম, অচঞ্চল। সময়ের এই অদম্য গতির মধ্যে মানুষ যেন আজ বন্দি। জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত, প্রতিটি নিঃশ্বাস, প্রতিটি সম্পর্ক এখন ঘড়ির কাঁটায় বাঁধা। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত মানুষের দিনযাপন যেন এক নির্দিষ্ট তালিকার মধ্যে সীমাবদ্ধ। কখন উঠতে হবে, কখন কাজ করতে হবে, কখন বিশ্রাম নিতে হবে, সব কিছুই সময়ের কঠোর নিয়ন্ত্রণে আবদ্ধ।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছিলেন, “ঘড়ির কাঁটায় বাঁধা জীবনে, হৃদয়ের সুর হারিয়ে যায়।” এই হারিয়ে যাওয়া সুরই আজ আমাদের জীবনের প্রতিধ্বনি হয়ে ফিরে আসে। আমরা কাজের চাপে, লক্ষ্যপূরণের দৌড়ে, সমাজের প্রত্যাশার ভারে এতটাই ব্যস্ত যে হৃদয়ের মৃদু সঙ্গীত আর শোনা যায় না। সময় আমাদের বেঁধে ফেলেছে এক অদৃশ্য শৃঙ্খলে, যেখানে আত্মার স্বাধীনতা যেন হারিয়ে গিয়েছে। সেই ধারণাকেই এবছর নিজেদের মণ্ডপে ফুটিয়ে তুলতে চলেছে বিজয়গড় ৬ পল্লীর সর্বজনীন শ্যামা পুজো কমিটি। ১৩তম বর্ষে তাদের উদ্যোগ ‘বহমান’। পুজোটির ডিজিটাল মিডিয়া পার্টনার আজকাল ডট ইন।

‘বহমান’ শুধু সময়ের গতির প্রতীক নয়, এটি মানুষের অস্তিত্বের অজান্তে বয়ে চলার প্রতিচ্ছবি। আমরা সবাই ছুটছি, কেউ সাফল্যের দিকে, কেউ সুখের সন্ধানে, কেউ আবার শুধুই অন্যদের ছাপিয়ে যাওয়ার অন্ধ প্রতিযোগিতায়। কিন্তু এই ছুটে চলার পথে আমরা কতটা জানি, আসলে কোথায় যাচ্ছি? অনেক সময় এই দৌড়ের গন্তব্য শূন্যতায় মিলিয়ে যায়। মানুষ তখন বুঝতে পারে, সে যা চেয়েছিল, তা পেতে গিয়ে নিজের ভিতরের মানুষটিকেই হারিয়ে ফেলেছে।

থেমে যাওয়া আজকের দিনে যেন এক প্রকার বিলাসিতা। যদি আমরা এক মুহূর্তের জন্য থামি, তাহলে হয়তো মুখোমুখি হতে হবে নিজেরই প্রশ্নগুলির সঙ্গে— আমি আসলে কে? আমি কোথায় যাচ্ছি? আমার এই ছুটে চলার মানে কী? এই প্রশ্নগুলির উত্তর সহজ নয়, তাই মানুষ থামে না। সে দৌড়য়, যেন নিজেরই ছায়াকে ছুঁতে চায়।

তবুও, সময়ের এই নিরন্তর স্রোতের মধ্যে একটু বিরতি নেওয়া দরকার। সেই বিরতিতে আমরা হয়তো ফিরে পেতে পারি হারিয়ে যাওয়া হৃদয়ের সুর, অনুভব করতে পারি জীবনের আসল অর্থ। সময়কে থামানো যায় না, কিন্তু তার মধ্যে নিজেকে খুঁজে পাওয়া যায়।

আজকের মানুষ যদি সেই ‘বহমান’ সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাঁচতে শেখে, কিন্তু তাতে নিজের আত্মাকে হারিয়ে না ফেলে—তাহলেই হয়তো জীবনের অর্থ নতুন করে ধরা দেবে। কারণ সময় বহমান, সে তার গতিতে চলবে, কিন্তু মানুষ যদি সেই স্রোতের মধ্যে নিজের সত্তাকে জাগিয়ে রাখে, তবে তার জীবন সত্যিই অর্থবহ হয়ে উঠবে।

পুজোর ভাবনা নিয়ে বিজয়গড় ৬ পল্লী সর্বজনীন শ্যামা পুজো কমিটির যুগ্মসচিব রবি দত্ত বলেন, “সাধারণ মানুষের কারও কাছে দুর্গাপুজো পাঁচ দিনের, কারও কাছে কালীপুজো এক দিনের। পুজো চলে গেলেই সাধারণ নিজেদের জীবনে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। কিন্তু একজন পুজো উদ্যোক্তা বা শিল্পীর কাছে পুজোটা এক দিনের নয়, সেটা ৩৬৫ দিনের। ঠাকুর বিসর্জনের পরের দিন থেকেই আগামী বছরের প্রস্তুতি শুরু করে দিতে হয়। সংগঠকদের কাছে পুজোটা ‘বহমান’-এর মতোই। চলতেই থাকে।” তিনি আরও বলেন, “আমাদের এই বছরের মণ্ডপে দু’টি অংশ থাকবে। প্রথম অংশে, সাধারণ মানুষ নিজেদের জীবনের ছবি দেখতে পাবেন। অপর অংশে, পুজোর আয়োজনের ৩৬৫ দিনের যে প্রক্রিয়া, তার ছবি তুলে ধরে হবে দর্শকদের সামনে।”