সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান থেকে ফুটবল টুর্নামেন্ট, বাংলা-ঝাড়খণ্ড সীমান্তের এই পুজোয় উন্মাদনা তুঙ্গে, আর কী চমক রয়েছে?

পুজোর ঢাকে কাঠি পড়ে গেছে। রবিবার মহালয়াতেই জেলায় জেলায় পুজোর উদ্বোধন হয়ে গেছে। হাজার হাজার পুজো প্যান্ডেলে শেষ মুহূর্তের কাজ চলছে জোরকদমে। উৎসবের আবহে মেতে উঠেছে আপামর বাঙালি। এই আবহেই বাংলার সীমান্তে, খাস ঝাড়খণ্ডেও দুর্গাপুজো ঘিরে দেদার আয়োজন। যে পুজো ঘিরে গ্রামবাসীদের উন্মাদনা তুঙ্গে।

Durga Puja 2025 Arya Samiti Cultural Committee Durga Puja
বাংলা ও ঝাড়খণ্ডের সীমান্তে আর্য সমিতি কালচারাল কমিটি ধুমধাম করে দুর্গাপুজো পালন করে।

আজকাল ওয়েবডেস্ক: পুজোর ঢাকে কাঠি পড়ে গেছে। রবিবার মহালয়াতেই জেলায় জেলায় পুজোর উদ্বোধন হয়ে গেছে। হাজার হাজার পুজো প্যান্ডেলে শেষ মুহূর্তের কাজ চলছে জোরকদমে। উৎসবের আবহে মেতে উঠেছে আপামর বাঙালি। এই আবহেই বাংলার সীমান্তে, খাস ঝাড়খণ্ডেও দুর্গাপুজো ঘিরে দেদার আয়োজন। যে পুজো ঘিরে গ্রামবাসীদের উন্মাদনা তুঙ্গে। 

আর্য সমিতি কালচারাল কমিটি: 

বাংলা ও ঝাড়খণ্ডের সীমান্তে আর্য সমিতি কালচারাল কমিটি ধুমধাম করে দুর্গাপুজো পালন করে। কীভাবে পৌঁছবেন এই পুজো প্রাঙ্গণে? বাংলার বীরভূমের সিউরি থেকে মাত্র আট কিলোমিটার দূরেই অবস্থিত। সীমান্ত পেরিয়ে প্রথম গ্রামেই আর্য সমিতি কালচারাল কমিটির জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজনে দুর্গাপুজোয়। 

ঝাড়খণ্ড পশ্চিমবঙ্গ সীমান্ত লাগোয়া একটি ছোট্ট গ্রাম দিগুলী। যার পাশ দিয়ে বয়ে চলছে সুন্দরী ময়ূরাক্ষী নদী।গ্রামের অর্ধেক অংশ বন্যার বালিতে ঢাকা। সোশ্যাল মিডিয়া থেকে অনেকটাই দূরে। কিন্তু আছে মানুষ, গাছপালা, পশুপাখিদের কোলাহল। এমনই একটি গ্রামে ১০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে দুর্গাপুজো হয়ে আসছে।

শতবর্ষ পেরিয়ে যাওয়া পুজোর রয়েছে অনেক একটি প্রাচীন ইতিহাস। গুরুজনদের মুখে শোনা শতাব্দী পূর্বে এক সাধক মহতাব দেবশর্মা তিনি তাঁর বাড়ির পুজো প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এই গ্রামের পঞ্চমুন্ডির আসনে। এর পূর্বে এই গ্রামে কোনও দুর্গাপুজো হতো না।

কত বছর ধরে দুর্গাপুজো হচ্ছে? 

আর্য সমিতি কালচারাল কমিটির এক সদস্য আজকাল ডট ইন-কে জানিয়েছেন, একশো বছরের বেশি পুরনো এই পুজো। গত ১১৪ বছর ধরেই একটানা ঝাড়খণ্ডের এই ছোট্ট গ্রামে দুর্গাপুজো পালিত হয়। ঝাড়খণ্ডের বাসিন্দারা তো বটেই, বাংলার বহু বাসিন্দারাও এই পুজোর আনন্দে মেতে ওঠেন। 

থিম পুজো নয়। ছিমছাম এই পুজোর মূল আকর্ষণ পুজোর দিনগুলোতে দেদার হুল্লোড়।‌ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ফুটবল টুর্নামেন্ট, দুঃস্থদের বস্ত্র বিতরণ, সব মিলিয়ে অনুষ্ঠানে ঠাসা থাকে দুর্গাপুজোর দিনগুলো। পুজোর কয়েক মাস আগেই শুরু হয় প্রস্তুতি। কখনও কখনও বাংলার শিল্পীরাও জমিয়ে রাখেন আর্য সমিতি কালচারাল কমিটির পুজোর অনুষ্ঠান। 

এই অনুষ্ঠানের মূল আহ্বায়ক হলেন বিদ্যুৎ রায় এবং সুব্রত রায়। মূল উদ্যোক্তা হলেন আর্য সমিতি কালচারাল কমিটির সদস্যরা। বিগত নয় বছর ধরে চার দিন ব্যাপী পুজোতে নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে মেতে ওঠেন গ্রামবাসীরা। মহাসপ্তমীর দিন আগমনী পত্রিকার উন্মোচন করা হয়। এই অনুষ্ঠানের মূল উদ্দেশ্য থাকে গরিব মানুষদের সাহায্য করা অর্থাৎ দুঃস্থ মানুষদের একটি করে বস্ত্র তুলে দেয়। প্রায় ১০০টিরও বেশি পরিবারকে এই বস্ত্র দেওয়া হয়।

কমিটির এক সদস্য জানিয়েছেন, গতবছর বীরভূমের বাউল শিল্পীরা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে এসেছিলেন। সপ্তমী থেকে অনুষ্ঠান শুরু হয়। চলে দশমী পর্যন্ত। এর মধ্যেই দুবেলা ঠাসা অনুষ্ঠান। রোজ সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন থাকে। যা দেখার জন্য দূরদূরান্ত থেকে মানুষ ছুটে আসেন। মন্দিরে দুর্গাপুজো হলেও, ভিড়ে জমজমাট থাকে পুজোর কদিন। 

চলতি বছরে নবমীতেও ফুটবল টুর্নামেন্টের আয়োজন করা হয়েছে। ১৬টি দল এই ফুটবল টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করে। যার ফাইনাল হবে নবমীতে। পাশাপাশি একদিন গরিব, দুঃস্থদের জামাকাপড়, কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। কয়েক শো দুঃস্থকে জামাকাপড় বিতরণ করে পুজো কমিটির। পুজোর প্রসাদ দেওয়া হয় দর্শনার্থী থেকে গ্রামবাসীদের। 

তাছাড়াও রয়েছে চমক। পুজোর সময় একটি শারদীয়া পত্রিকা প্রকাশিত হয়। 'আগমনী' নামের এই পত্রিকা প্রকাশিত হয় পুজোর আবহে। এবছর দশম সংখ্যায় সেটা প্রকাশ হতে চলেছে আর্য সমিতি কালচারাল কমিটির পরিচালনায়। গত ২০১৬ সাল থেকে এই পত্রিকা প্রকাশিত হয় এই কমিটির তরফে। যেখানে নামী লেখক, কবিদের গল্প, কবিতায় ভরা থাকে। ঝাড়খণ্ডের তো বটেই, বাংলার পাঠক মহলেও এই পত্রিকার সাড়া পড়েছে। যা চলতি বছরেও প্রকাশিত হবে।