নদীতে কাল্পনিক সীমারেখার দুই ধারে দুই বাংলার প্রতিমা বিসর্জন, এই পাড়ে জমিদার বাড়ির প্রতিমা দিয়ে শুরু ইচ্ছামতীতে নিরঞ্জন

Durga Pujo 2025: নদীতে কাল্পনিক সীমারেখার দুই ধারে দুই বাংলার প্রতিমা বিসর্জন।

Ichamati river at Taki in North 24 Parvana turns a place of exchanging wishes between India and Bangladesh people on Vijaya Dashami
প্রথা অনুযায়ী টাকিতে ইছামতীর জলে প্রথম বিসর্জন হয় টাকি পুবের জমিদারদের বাড়ির প্রতিমা।

প্রবীর মণ্ডল,বসিরহাট: প্রথা মেনে সকাল থেকেই টাকির ইছামতী নদীতে শুরু হয়েছে প্রতিমা বিসর্জন। অবিভক্ত ভারতের টাকির জমিদাররা রীতিনীতি মেনে ইছামতীর বুকে বিসর্জন শুরু করেন আনুমানিক সাড়ে ৩০০ বছর আগে। সেই থেকে এখনও প্রথা মেনে চলে আসছে টাকির ইছামতীতে এই বিসর্জন। ১৯৪৭-এর পর ভারত পাকিস্তান এবং পরবর্তী সময়ে স্বাধীন বাংলাদেশ তৈরি হলেও এখনও ইছামতীর পশ্চিম পাড়ে টাকির জমিদারদের বাড়ির প্রতিমার বিসর্জন দিয়ে শুরু হয় ইছামতী নদীতে বিসর্জন। কয়েক বছর আগেও টাকি ইছামতীর বুকে দুই দেশের হাজার হাজার দর্শনার্থীর মিলন হত। তবে পরবর্তী সময়ে এই নিয়ে সমস্যা তৈরি হওয়ায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ইছামতীর বুকে টানা হবে কাল্পনিক সীমারেখা।

আর সেই থেকেই ইচ্ছামতীর জল ভাগাভাগি করে দুই দেশের দর্শনার্থীরা নৌকা নিয়ে তাঁদের জলসীমার ভিতরেই বিসর্জন দিতে শুরু করেন। এখনও ইছামতীর পশ্চিম পাড়ের মানুষ ভিড় জমান নদীর তীরে। দূরদূরান্ত থেকে এই বিসর্জনের দিন মানুষ এসে ভিড় জমান নদীর পশ্চিমপাড় টাকিতে। প্রথা অনুযায়ী টাকিতে ইছামতীর জলে প্রথম বিসর্জন হয় টাকি পুবের জমিদারদের বাড়ির প্রতিমা । এই বছরও তার অন্যথা হয়নি। 

নিয়ম রীতি মেনে দশমী পূজা শেষে সিঁদুর খেলার পর ২৪ বেহারার কাঁধে চাপিয়ে টাকি পুবের বাড়ির জমিদারদের প্রতিমা নিয়ে আসা হয় নদীর তীরে রাজবাড়ীর ঘাটে। সেখানে প্রতিমাকে সাতপাক ঘোরানোর পর নদীতে বিসর্জন দেওয়া হয়। এরপর ধীরে ধীরে টাকির অন্যান্য জমিদার বাড়ির পাশাপাশি সর্বজনীন দুর্গাপূজার প্রতিমাগুলি নিয়ে আসা হয় ইছামতী নদীতে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে একটি একটি করে নৌকা প্রতিমা ও দর্শনার্থীদের নিয়ে ইছামতীর দখল নেয়। সূর্য অস্ত যেতেই একে একে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়। আর দুই দেশের হাজার হাজার মানুষ ইছামতীর দুই পাড়ে দাঁড়িয়ে এই মনোরম দৃশ্য উপভোগ করেন। কয়েকশো বছর ধরেই টাকিতে ইচ্ছামতীর তীর বরাবর বাস করতেন জমিদাররা ৷ প্রাক্তন সেনা প্রধান জেনারেল শঙ্কর রায় চৌধুরীর বাড়ি ছাড়াও ঘোষবাড়ি , পূবের বাড়ি-সহ একাধিক জমিদাররা এই টাকিতে ইছামতী নদীর সংলগ্ন এলাকায় বাস করতেন ৷ সেই সময় তাঁদের হাত ধরে শুরু হয়েছিল এই এলাকার দুর্গাপুজো। 

টাকি পুরসভার চেয়ারম্যান সোমনাথ মুখার্জি জানান, 'আগে এই ঐতিহ্যপূর্ণ টাকির ইছামতী নদীর ভাসানে এপার বাংলা এবং ওপার বাংলার নাগরিকরা যখন যোগ দিতেন তখন লক্ষাধিক মানুষের সমাগম হত৷ একটি দুর্ঘটনার পর থেকে প্রশাসন কড়াকড়ি করার জন্য ভাসানের ঐতিহ্যে ভাঁটা পড়েছে। প্রতি বছর ভাসানের আগে বিএসএফ ও বিজিবিকে নিয়ে দু'দেশের প্রশাসনের মধ্যে নদীর মাঝে ফ্ল্যাগ মিটিং করা হয়। সেখানেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় কীভাবে এই বিসর্জন সম্পূর্ণ হবে৷' সেই মতোই দুই দেশের নিরাপত্তারক্ষীদের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, দুপুর দুটো থেকে সন্ধ্যা ছ'টা পর্যন্ত প্রতিমা নিয়ে ও সাধারণ মানুষ ভুটভুটি কিংবা নৌকা করে ইছামতী নদীবক্ষে ভ্রমণ করতে পারবেন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রতিমা নিরঞ্জন করতে হবে নদীতে। জানা গিয়েছে, ইছামতীর বুকে দু'দেশের মিলন উৎসবের ঐতিহ্য পুনরায় ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চালানো হচ্ছে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৷ এবছরও প্রাকৃতিক দুর্যোগকে অপেক্ষা করে বহু মানুষ ভিড় জমিয়েছেন ইছামতীর তীরে।

তবে এদিন সকালে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া থাকায় সেইভাবে স্থানীয় ক্লাবের তরফে ইছামতীতে প্রতিমা বিসর্জন করতে পারেনি বলে জানা গিয়েছে। তবে কয়েকটি নৌকাকে প্রতিমা নিয়ে ইছামতীতে ঘোরাঘুরি করতে দেখা গিয়েছে। অন্যদিকে ওপার বাংলায় একটি প্রতিমা নিয়েও সেখানকার পুজো উদ্যোক্তাদের ইছামতীতে নামতে দেখা যায়নি বলে খবর৷ তবে প্রশাসনের সহযোগিতায় এই পাড়ে নির্বিঘ্নেই টাকির ইছামতীতে বিসর্জন সম্পূর্ণ হতে চলেছে আর কিছুক্ষণের মধ্যে ৷