ইংল্যান্ডে বাঙালিয়ানার বাহক ‘পঞ্চমুখী’, শ্রমে শিকড়ে সৃজনে যেন উৎসবের আরেক নাম!
Durga Pujo 2025: ২০০৬ সালের এক শরতের দুপুর। লন্ডনের হ্যারোর এক নিঃশব্দ ঘরে কয়েকজন স্বপ্নবাজ বাঙালি বসেছিলেন। কেউ এক কাপ চা নিয়ে, কেউ হাতে কাগজ-কলম নিয়ে।

আজকাল ওয়েবডেস্ক: ২০০৬ সালের এক শরতের দুপুর। লন্ডনের হ্যারোর এক নিঃশব্দ ঘরে কয়েকজন স্বপ্নবাজ বাঙালি বসেছিলেন। কেউ এক কাপ চা নিয়ে, কেউ হাতে কাগজ-কলম নিয়ে। চোখে আলো, মনে একটাই স্বপ্ন- দূরে থেকেও ভারতীয় সংস্কৃতির আলো যেন নিভে না যায়, নতুন প্রজন্ম যেন নিজের ‘আপন ঘর’-এর ছোঁয়া থেকে বিচ্ছিন্ন না হয়। কথায় কথায়, পরিকল্পনা আর স্বপ্নের মিশ্রণে জন্ম নিল ‘পঞ্চমুখী’। নামের ভেতরেই ছিল বহুমুখী চিন্তার প্রতিফলন। ঐতিহ্যের শেকড় ধরে আধুনিকতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে চলার প্রতিশ্রুতি।
প্রথম দিনগুলোতে মণ্ডপ খুব ছোট, বাজনা আর ধূপ-ধুনোর গন্ধে ভরা। শঙ্খ-ঢাকের তালে সবাই মাতোয়ারা। মায়েরা ভোগ রান্নায় ব্যস্ত, ছোটরা ব্যস্ত নৃত্য-গীতের মহড়ার আনন্দে। পুরোহিতের কণ্ঠে শ্লোকধ্বনি যেন গঙ্গার ঘাটের স্নিগ্ধতা ফিরিয়ে আনে। প্রত্যেক অঞ্জলিতেই যেন অনুভূত হয় ভারতীয়তার স্পন্দন।
হারো থেকে শুরু হলেও, আজ পঞ্চমুখীর সুর ছড়িয়ে পড়েছে ব্রিটেন জুড়ে। লন্ডনের বহুজাতিক আবহে এটি এক অনন্য ক্যানভাস। ভারতীয় হোন বা অ-ভারতীয়, সবাই খুঁজে পান এক টুকরো ঘরের উষ্ণতা, এক টুকরো স্মৃতির আলো। প্রতিটি পূজা শুধু ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, আত্মপরিচয় এবং আবেগের পুনর্জন্ম।
কিন্তু শুধু পূজা নয়। পঞ্চমুখী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মকে শেকড়ের সঙ্গে যুক্ত রাখে আজও। বঙ্গ সংস্কৃতি সম্মেলন হল তার অন্যতম উদাহরণ। ভারতের খ্যাতনামা শিল্পী থেকে শুরু করে ব্রিটিশ-ভারতীয় তরুণ প্রতিভা সবাই একই মঞ্চে। গান, নাচ, নাটকে মিলেমিশে যায় ভৌগোলিক সীমারেখা। রয়ে যায় শুধু বাঙালিয়ানা, ভারতীয়তার স্পন্দন।
আরও একটি উজ্জ্বল অধ্যায় হল সমাজসেবা। দুঃস্থদের সাহায্য, প্রান্তিকদের পাশে দাঁড়ানো, চ্যারিটি- সবকিছু প্রমাণ করে, প্রকৃত পূজা শুধু দেবীর নয়, মানুষের সেবাতেও নিহিত। মণ্ডপ থেকে সংগৃহীত অনুদান ব্রিটেন এবং ভারতের নানা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থায় পৌঁছয়।
সবচেয়ে বড় শক্তি অবশ্যই প্রথম দিনের থেকে পাশে থাকা একনিষ্ঠ সমর্থকরা। যাঁরা সময়, শ্রম, ভালবাসা সব দিয়ে গড়ে তুলেছেন পঞ্চমুখীকে। কর্পোরেট জগতও যুক্ত হয়েছে এই উদ্যোগে, কিন্তু মাটির গন্ধ কখনও হারায়নি। বরং প্রতিটি উদ্যোগে শেকড়ের টান আরও স্পষ্ট হয়েছে।
আজ, বিশ বছর পেরিয়ে পঞ্চমুখী কেবল একটি সংগঠন নয়। এটি এক অনুভূতি, এক পতাকা, যেখানে ভারতীয়তা, শিকড়, সাধনা আর সম্প্রীতি মিলেমিশে উড়ে বেড়ায়। শঙ্খের ধ্বনি, ঢাকের গর্জন, শিশুর হাসি সবই লন্ডনের বাতাসে ভেসে যায়, মনে করিয়ে দেয়, শেকড় থেকে উঠে আসা ঐতিহ্য দূর দেশেও ম্লান হয় না, বরং নতুন আলোয় আরও উজ্জ্বল হয়।
দুই দশকের এই পদযাত্রা শুধু ইতিহাস নয়, ভবিষ্যতের জন্য আলো। যেখানে শিকড়, সাধনা আর সম্প্রীতি একসঙ্গে পথ দেখায় আগামী প্রজন্মকে।
সুমনা আদক