সাত দশকের ঐতিহ্য, বেঙ্গালুরুর দুর্গাপুজোর ঐতিহ্যকে সম্মান জানাবে আজকালের শারদ গৌরব

Durga Pujo 2025: যতদূর জানা যায়, বেঙ্গালুরুতে দুর্গাপুজোর শুরু ১৯৪৮ সালে।

What is the history of Durga Puja in Bengaluru

আজকাল ওয়েবডেস্ক: এক সময় বেনারস-গয়া থেকে ম্যাকল্যাক্সিগঞ্জ কিংবা দিল্লির চিত্তরঞ্জন পার্ক, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বাঙালির আস্তানা ছিল চোখে পড়ার মতো। এখন সেই তালিকায় যুক্ত হয়েছে দাক্ষিণাত্যের প্রাণ কেন্দ্র, তথা দেশের আইটি হাব বেঙ্গালুরু। আর যেখানে বাঙালি থাকবে সেখানে বাঙালির প্রাণের উৎসব দুর্গাপুজো থাকবে না তা কি হয়? শরৎ এলেই এই দক্ষিণের টেকনগরী যেন পরিণত হয় মিনি-বাংলায়। ঢাকের তালে, আলোর ঝলকে, সুসজ্জিত প্রতিমায় অনুষ্ঠিত হয় দুর্গাপুজো। শুধু বাঙালি নয়, শহরের অন্যান্য সম্প্রদায়ের মানুষও আজ এই উৎসবের সমান অংশীদার।

যতদূর জানা যায়, বেঙ্গালুরুতে দুর্গাপুজোর শুরু ১৯৪৮ সালে। উলসুরের ‘বেঙ্গলি অ্যাসোসিয়েশন’ প্রথমবারের মতো দুর্গা প্রতিমা প্রতিষ্ঠা করে। তার কয়েক বছরের মধ্যেই, ১৯৫৫ সালে, জয়মহলে আয়োজিত সার্বজনীন দুর্গাপুজো বেঙ্গালুরুতে এক নতুন দিগন্তের সূচনা করে। পারিবারিক আয়োজনের বাইরে বেঙ্গালুরুতে বারোয়ারি দুর্গাপুজোর জন্ম হয় এখানেই। সেই ঐতিহ্য আজও অটুট। তৃতীয় প্রজন্মের হাতে উলসুরের পুজো আজও সমান আড়ম্বরেই চলেছে।

এখন আর দুর্গাপুজো শুধু ভক্তির উদযাপন নয়। হয়ে উঠেছে অন্যতম বড় সাংস্কৃতিক মিলনক্ষেত্র। ২০০৩ সালে গড়ে ওঠা সারথি সোশিও কালচারাল ট্রাস্টের আয়োজনে হওয়া পুজো আজ বেঙ্গালুরুর পূজোর মানচিত্রে অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য একটি নাম। পুজোর প্রতিদিন দেড় থেকে দুই লক্ষ মানুষ ভিড় জমান সেই মণ্ডপে। দর্শকসংখ্যা ও আয়োজনের জাঁকজমক দেখে বোঝার উপায় থাকে না যে বাংলার বাইরে রয়েছেন।


বেঙ্গালুরুর পূজো কেবল বাঙালি সংস্কৃতির মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। মণ্ডপে মণ্ডপে দেখা যায় নানা থিম। ওড়িশার জগন্নাথ ধাম, বিহারের মধুবনী শিল্পকলা, এমনকি কর্নাটকের ঐতিহ্যবাহী যক্ষগান নৃত্যও দেখা যায় পুজোতে। এই ‘ফিউশন’-এই বেঙ্গালুরুর দুর্গোৎসব পেয়েছে এক অনন্য মাত্রা। একদিকে ধুনুচি নাচ, অন্যদিকে স্থানীয় কন্নড়  শিল্পকলা দুটিই সমানভাবে মাতিয়ে তোলে দর্শকদের।

এখন কলকাতার মতোই বেঙ্গালুরুর পুজো মানেই শহরের সর্বত্র আলো, মিলনমেলা আর খাবারের হাট। কলকাতার কুমারটুলি থেকেও আনা হয় প্রতিমা। থাকে শাড়ির-বাজার, ঢাকের বাদ্যি, ফুচকা থেকে মটন কষা সব কিছুই। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, নাটক, সংগীতানুষ্ঠান থেকে শুরু করে আধুনিক ফ্যাশন শো পর্যন্ত বেঙ্গালুরুর দুর্গোৎসব এখন আক্ষরিক অর্থেই বহুমাত্রিক।

৭৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে বেঙ্গালুরু দুর্গাপুজো প্রবাসী বাঙালির মনে মাটির গন্ধ বয়ে আনছে। যাঁরা পুজোতেও বাড়ি ফিরতে পারেন না তাঁদের জন্য এই আয়োজন যেন বুকভরা অক্সিজেন। বেঙ্গালুরুর দুর্গোৎসব আজ শুধু বাঙালির নয়, বরং বহু ভাষা, বহু সংস্কৃতির মিলিত আনন্দোৎসব। ব্যস্ততার শহরে কয়েক দিনের অবসর, ভক্তি আর আনন্দের এক অনন্য মেলবন্ধন।
বাঙালির দুর্গোৎসব মানেই শুধু কলকাতার অলিগলি, ঠাকুরঘর আর থিমপুজোর ঝলক নয়। এবার সেই পরিধি ছাপিয়ে যাচ্ছে সুদূর বেঙ্গালুরু পর্যন্ত! প্রথমবারের মতো এই শহরের পুজোগুলিকে জাতীয় মঞ্চে স্বীকৃতি দিতে চলেছে ‘শারদ গৌরব পুরস্কার ২০২৫’। আয়োজক আজকাল ডট ইন। বেঙ্গালুরুতে বর্তমানে প্রায় দু’শোর বেশি দুর্গাপুজো হয়। বহুমাত্রিক থিম, সৃজনশীলতার ঝলক আর প্রবাসী বাঙালির আবেগ - এই তিনে মিলে প্রতিটি মণ্ডপ হয়ে ওঠে অনন্য শিল্পকর্ম। কিন্তু এতদিন এই বর্ণাঢ্য আয়োজন, অনুষ্ঠানের স্বীকৃতি সীমাবদ্ধ ছিল স্রেফ স্থানীয় পরিসরে। ‘শারদ গৌরব’ সেই সীমারেখা ভেঙে কলকাতাসহ গোটা দেশের বাঙালির সামনে তুলে ধরবে বেঙ্গালুরুর দুর্গোৎসবের ঐশ্বর্য।