উদযাপনে বহুত্বের মিলনমেলা, তবু শিকড়ে বাঙালি, সিঙ্গাপুরে উজ্জ্বল বেঙ্গলি অ্যাসোসিয়েশন দুর্গা

Durga Pujo 2025: কলকাতার আকাশ যখন শরতের আকাশ ভরা মেঘে ঢেকে যাচ্ছে বারংবার, তখন সিঙ্গাপুরের রাস্তায় কলকাতা থেকে হাজার মাইল দূরে ঝলমল করে উঠছে আলো।

Bengali Association Singapore celebrates Durga Puja 2025
ধর্মীয় আচার তো থাকেই, কিন্তু সবচেয়ে বড় জিনিস হল সাংস্কৃতিক মিলনমেলা। পুরনো স্মৃতি, শেকড় আর নতুন প্রজন্মের উচ্ছ্বাস একসঙ্গে মিলেমিশে যায় এখানে।

আজকাল ওয়েবডেস্ক: কলকাতার আকাশ যখন শরতের আকাশ ভরা মেঘে ঢেকে যাচ্ছে বারংবার, তখন সিঙ্গাপুরের রাস্তায় কলকাতা থেকে হাজার মাইল দূরে ঝলমল করে উঠছে আলো। লায়ন সিটি-তে বাঙালিরা প্রস্তুতি নিতে বেজায় ব্যস্ত, এখানে শরৎ মানেই দুর্গাপুজো, আর পুজোর মানেই শুধু দেবী নয়, স্মৃতি, শেকড় আর আনন্দ। ছোট থেকে বড়, সবাই নিজের মতো করে মণ্ডপ সাজানোর পরিকল্পনায় মগ্ন।

এই আয়োজনের গল্প কিন্তু নতুন নয়। ১৯৫৬ সালে কয়েকটি পরিবার মিলে শুরু হয়েছিল এই ছোট্ট পূজাটির। আজ সেটিই হয়ে উঠেছে সিঙ্গাপুরের অন্যতম বড় উৎসব। বিএএস অর্থাৎ বেঙ্গলি অ্যাসোসিয়েশন-এর পুজো শুধু বাঙালি কেন্দ্রিক নয়, এই উদযাপনে চীন, মালয়েশিয়া, ভারত সব দেশের মানুষ মিলে আনন্দ ভাগ করে নন। ধর্মীয় আচার তো থাকেই, কিন্তু সবচেয়ে বড় জিনিস হল সাংস্কৃতিক মিলনমেলা। পুরনো স্মৃতি, শেকড় আর নতুন প্রজন্মের উচ্ছ্বাস একসঙ্গে মিলেমিশে যায় এখানে।

২০২৫ সালে পূজো অনুষ্ঠিত হচ্ছে ২৭শে সেপ্টেম্বর থেকে ২রা অক্টোবর। Wyn Road, Burma Road এবং Farrer Park Station Road-এর সংযোগস্থলে গড়ে উঠেছে বিশাল অস্থায়ী মণ্ডপ। ভোরে শঙ্খধ্বনি, দিনে পুষ্পাঞ্জলি, ভোগ। সন্ধ্যায় আরতির আলো, ধুনুচি নৃত্য, ঢাকের তালে মাতোয়ারা হয়ে প্রবাসের মাটিতেও যেন কলকাতার ছোঁয়া ফিরে আসে।

প্রতিবছর বেঙ্গলি অ্যাসোসিয়েশন-এর পুজোতে শিশুদের জন্য আলাদা আয়োজন থাকে। তারা আঁকাআঁকি, গান, নাচ শেখে। এবছরও নতুন প্রজন্ম শিখছে শেকড়ের গল্প, পরিচয়, সংস্কৃতি। পাশেই বসছে খাবারের মেলা ফুচকা, রোল, বিরিয়ানি, রসগোল্লা, জিলিপি, পায়েস। খেতে খেতে মনে হবে যেন কলেজ স্ট্রিটের গলি দিয়ে হাঁটছেন দর্শনার্থীরা। সুগন্ধ, স্বাদ, আনন্দ সব মিলিয়ে সিঙ্গাপুরে তৈরি হয় স্মৃতির টাইম মেশিন।

সন্ধ্যায় শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। রবীন্দ্রসঙ্গীত, নজরুলগীতি, আধুনিক বাংলা গান, লোকনৃত্য, নাটক, ড্রামাটিক পারফরম্যান্স সব মিলিয়ে গ্রামের মেলার গল্প থেকে শহুরে জীবনের রঙ- সবই ফুটে ওঠে মঞ্চে। শুধু বাঙালিরাই নয়, অন্যান্য দেশের শিল্পীরাও যোগ দেন, ফলে তৈরি হয় এক অসাধারণ বহু-সাংস্কৃতিক সংলাপ।

বিএএস-এর প্রেসিডেন্ট বলেন, “আমাদের পূজা শুধু দেবীর আরাধনা নয়। এটি আমাদের পরিচয়, আমাদের শিকড়, এবং বাঙালি সম্প্রদায়কে একত্রিত করার শক্তি। প্রবাসে থেকেও আমরা আমাদের সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য বাঁচিয়ে রাখি।”

চারদিন ধরে সিঙ্গাপুরের আকাশে বাজে ঢাক, মণ্ডপে ঝলমলে আলো, চারপাশে খাবারের সুগন্ধ, আর বন্ধু ও পরিবারে কাটানো মুহূর্ত সব মিলিয়ে শহর হয়ে ওঠে এক টুকরো বঙ্গ। 

সিঙ্গাপুরের বেঙ্গলি অ্যাসোসিয়েশন-এর সিঙ্গাপুরের পুজো শুধু ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়। এটি আবেগ, এক পরিচয়, শেকড়ের সংযোগ, এবং প্রবাসে বাঙালির উত্তরাধিকারের উজ্জ্বল প্রমাণ। আর এই গল্পই বারবার মনে করিয়ে দেয় যেখানে বাঙালি, সেখানে শরৎ হয়ে ওঠে জীবন্ত।

সুমনা আদক