লাতিন আমেরিকায় দেবীর বোধন! গুয়াদালাহারা দুর্গাপূজায় মেক্সিকোর সঙ্গে মিশে যাবে বঙ্গ সংস্কৃতি

Durga Pujo 2025: এই পুজো শুরু হয় ২০১২ সালে।

Durga Puja 2025: famous Durga Puja of Mexico
এই একটি দিন বাঙালি-অবাঙালি সকল প্রবাসী ভারতীয় এবং স্থানীয় মেক্সিকান মানুষ মেতে ওঠেন বাঙালির সবথেকে বড় আনন্দোৎসবে।

আজকাল ওয়েবডেস্ক: লাতিন আমেরিকার দেশ মেক্সিকো। সেখানে হালিস্কো প্রদেশের এক জনপদ গুয়াদালাহারা। সেখানেও পৌঁছে গিয়েছে বাঙালির অতিপ্রিয় দুর্গাপূজা।

এই পুজো শুরু হয় ২০১২ সালে অল্প কয়েকজন ভক্তের হাত ধরে। সেই সময় পূজার ধূপ পর্যন্ত সংগ্রহ করতে হয়েছিল স্থানীয় এক জাদুবিদ্যার দোকান থেকে। ধীরে ধীরে এই পূজা আজ এক মহোৎসবে রূপ নিয়েছে। ২০১৬ সালে, টাটা কনসালট্যান্সি সার্ভিসেস তাদের প্রাঙ্গণ এই পূজার জন্য উন্মুক্ত করে দেয়। এর পর থেকে ধীরে ধীরে আবাসিকদের সহায়তায় অনুষ্ঠানস্থল ভাড়া করে একদিনব্যাপী দুর্গোৎসবের আয়োজন করা হয়। এই একটি দিন বাঙালি-অবাঙালি সকল প্রবাসী ভারতীয় এবং স্থানীয় মেক্সিকান মানুষ মেতে ওঠেন বাঙালির সবথেকে বড় আনন্দোৎসবে। এই অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়েদুই দেশের সংস্কৃতির এক অপূর্ব মেলবন্ধন ঘটে ।

প্রতি বছর মেক্সিকোর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রায় ৫০০-৬০০ জন মানুষ এই উৎসবে যোগ দেন। প্রবাসী ভারতীয়, মেক্সিকান বন্ধু এবং অন্যান্য রাজ্য থেকে আগত অতিথিদের মিলনমেলায় পূজা হয়ে ওঠে বৈশ্বিক সাংস্কৃতিক মিলনমঞ্চ। ভারতীয় দূতাবাস ও মেক্সিকান সরকারের কর্মকর্তারা নিয়মিত উপস্থিত থেকে উৎসাহ জোগান এই অনুষ্ঠানে। উদ্দেশ্য ভারত-মেক্সিকোর সম্পর্ক আরও দৃঢ় করে তোলা। ভারতীয় এবং মেক্সিকানদের অক্লান্ত সহযোগিতায় এই দুর্গাপূজা আজ কেবল একটি ধর্মীয় উৎসব নয়, বরং বিশ্বভাতৃত্ব, ঐক্য, ভক্তি এবং আনন্দ-উৎসবের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

প্রসঙ্গত, গত বছর এই পুজোর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়েছিল মেক্সিকোতে ভারতীয় রাস্ত্রদুতের স্ত্রী ডঃ শ্রুতি শুক্লা এবং মেক্সিকোর ফেডেরাল ডেপুটি সালভাদর কারো-র হাত ধরে। সমস্ত রকম আচার মেনে নিষ্ঠা সহকারে এই পুজো সম্পন্ন করা হয়। মেক্সিকান নাচের দলের মাধ্যমে ভারতীয় শাস্ত্রীয় নৃত্য এবং ভারতীয় বলিউড নৃত্য আয়োজিত হয়। এছাড়াও বিভিন্ন প্রবাসী ভারতীয় এবং স্থানীয় মেক্সিকান শিল্পীদের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। পুজোর আচার এবং সাংস্কৃতিক অনুস্থানের বাইরে রসনা তৃপ্তির জন্য ভারতীয় এবং মেক্সিকান নানান খাবারের স্টল ছিল।

এই বছরের পূজা অনুষ্ঠিত হবে আগামী ৫ই অক্টোবর, স্থানীয় ভারদে মেদেরা প্রাঙ্গনে। এই বছরের পুজোর প্রধান আকর্ষণ- নারীশক্তির হাতে দেবী দুর্গার বোধন। এই বছরের পূজায় পৌরহিত্য করবেন দুইজন মহিলা পুরোহিত- সোয়ান্তি চক্রবর্তী মুখার্জি ও আলোলিকা চক্রবর্তী। আধ্যাত্মিক ক্ষেত্রে নারীর ভূমিকা ও অন্তর্ভুক্তিকে সম্মান জানাতেই এমন উদ্যোগ। গুয়াদালাহারার মেক্সিকান শিল্পীদের হাতেই নির্মিত হচ্ছে মা দুর্গার প্রতিমা। এটি ভারতীয় ঐতিহ্য ও মেক্সিকান সৃজনশীলতার এক সুন্দর সেতুবন্ধন। পূজা পরিচালনার মূল দায়িত্বে থাকছেন ইপ্সিতা সাহা। মণ্ডপসজ্জার দায়িত্বে আছেন উৎসব দাস, রাতুল, প্রীতম মণ্ডল, দিব্যানী, রণিত ও বিদিশা। ফটোগ্রাফি এবং ভিডিওগ্রাফি করবেন দেবায়ন ও পায়েল চন্দ্র। প্রচার ও যোগাযোগ সামলাচ্ছেন তথাগত বন্দ্যোপাধ্যায়। আর্থিক দিক দেখাশোনার দায়িত্বে আছেন দীপ্ত প্রামাণিক। মা দুর্গার ভোগ রান্না ও বিতরণের দায়িত্বে আছেন মিলন ও শ্রেয়সী। এই বছরের পুজোতে ভারতীয় রাষ্ট্রদুতের উপস্থিত থাকার কথা আছে।

এই বছর ভারতনাট্যম পরিবেশনার মাধ্যমে উৎসবের সূচনা হবে, সঙ্গে থাকবে ঐতিহ্যবাহী ধুনুচি নাচ। সংগীতে থাকবে সন্দীপন শিকদারের নেতৃত্বে এক ভারতীয় রক ব্যান্ড। শিশুরা উপস্থাপন করবে পৌরাণিক নাটক রামলীলা- যা এই মেক্সিকোতে প্রথমবার অনুস্থিত হবে। অভিনয়ে থাকবে আরনা, আশারিকা, আদিত্য, আকাশ, শিব, অকশতা ও চক্রিকা | এর পরই থাকবে বর্ণাঢ্য আতশবাজির প্রদর্শনী, নির্দেশনায় প্রদিপ্ত চক্রবর্তী। অনিন্দিতা প্রামাণিক ও অভিষেক ঘোষের তত্ত্বাবধানে ভারতীয় নানা শহরের স্বাদ নিয়ে আসবে খাবারের স্টল।