৭৯ বছরে পদার্পণ পূর্ব কলিকাতা সার্বজনীন দুর্গোৎসবের, এ বারের থিম ‘পারাপার’

Durga Puja 2025: সংস্কৃতির প্রাণকেন্দ্র আমাদের গর্বের বাংলা, গর্বের কলকাতা। যার মধ্যে নিহিত আছে বাংলার ধর্মীয় সংস্কৃতি। এই সংস্কৃতিকে ঘিরে আছে আমাদের অন্তরের দুর্গাপূজা।

Durga Puja 2025: Purba Kalikata Sarbojanin Durgatsob will celebrate 79th year
পূর্ব কলিকাতা সর্বজনীন দুর্গোৎসবের প্রতিমা। নিজস্ব চিত্র।

আজকাল ওয়েবডেস্ক: সংস্কৃতির প্রাণকেন্দ্র আমাদের গর্বের বাংলা, গর্বের কলকাতা। যার মধ্যে নিহিত আছে বাংলার ধর্মীয় সংস্কৃতি। এই সংস্কৃতিকে ঘিরে আছে আমাদের অন্তরের দুর্গাপূজা। আমাদের প্রিয় কলকাতাকে বেষ্টন করে আছে নানা আদি ইতিহাস। যার একটি পরিচ্ছদ হল ‘আদিগঙ্গা’। যা আজ অনাদরে অবহেলায় ক্ষীণধারায় পরিণত এবং স্তব্ধ জীবিকা নির্বাহ। এই আদি গঙ্গাকে কেন্দ্র করেই নারেকেলডাঙ্গা মেন রোডের পূর্ব কলিকাতা সর্বজনীন দুর্গোৎসবের এই বছরের ভাবনা ‘পারাপার’। এবছর পুজোটি ৭৯তম বছরে পদার্পণ করেছে। প্যান্ডেলের ভাবনায় বিট্টু দাস, শানু হালদার এবং শ্রেয়া মজুমদার। প্রতিমা নির্মাণে শ্রেয়া মজুমদার।

একসময় একটি নদী বইত শুধু জল নয়, বইত জীবন, বিশ্বাস আর গল্প। তার নাম ছিল ‘আদিগঙ্গা’। গঙ্গার আদি ধারা, নীরবে প্রবাহিত হত আজকের কলকাতার বুক দিয়ে। তার তীরে গড়ে উঠেছিল প্রাচীন জনপদ, ব্যস্ত ঘাট, টেরাকোটা মন্দির, ভাটিয়ালি গাওয়া মাঝি, উদীয়মান সূর্যকে অর্ঘ্য দেওয়া নারীরা, পাট নামানো ব্যবসায়ী, আর গঙ্গাসাগরের পথে যাত্রা শুরু করা তীর্থযাত্রী।

সে শুধু নদী ছিল না ছিল এক জীবনধারা। মানুষের, দেবতার, পরিবারের, ভাগ্যের সেতুবন্ধন। ভক্তি ও জীবিকা, আচার ও বাণিজ্য, আনন্দ ও বেদনা সবই সে বহন করত তার স্রোতের সঙ্গে। সে ছিল এক সভ্যতার প্রাণস্পন্দন।

‘পারাপার’ এই বিস্মৃত নদীমাতৃক পৃথিবীকে নতুনভাবে কল্পনা করেছে। এটি সেই কলকাতার গল্প বলবে যে কলকাতা একসময় ভেসে যেত, ছুটত না। যখন নদী পার হওয়া মানে ছিল কেবল শারীরিক গমন নয়, মানে ছিল আশা, প্রার্থনা, রূপান্তর, ধারাবাহিকতা। নদী ছিল মেলা ও উৎসবের সাক্ষী, উপনিবেশিক আগ্রাসন ও স্থানান্তরের নীরব দর্শক, প্রতিদিনের অর্ঘ্য ও চিরন্তন আচার-অনুষ্ঠানের ধারক।

কিন্তু কালের স্রোতে এই পবিত্র ধারা হয়ে গেল নিশ্চুপ। অবহেলায় ভরাট হল, কংক্রিটে দমবন্ধ হল। পবিত্র ঘাটগুলোর জায়গায় এল নর্দমার পাইপ। যে জীবন একসময় প্রবাহিত হতো তার বুক জুড়ে, আজ রয়ে গেছে কেবল স্মৃতিতে, গানে, লোককথায়। ‘পারাপার’ সেই স্মৃতিকে পুনরায় জাগিয়ে তোলার প্রয়াস করেছে। এটি কেবল এক নদী পার হওয়া নয়-এটি এক আধ্যাত্মিক যাত্রা, প্রকৃতির সঙ্গে পুনঃসংযোগের আহ্বান, আর এক স্মারক যে আমরা যাকে ত্যাগ করি, সে-ই একদিন আমাদের দেয় ফিরে আসতে।

দেবী দুর্গা শুধু অসুরবিনাশিনী নন, তিনি ভারসাম্যের পুনঃপ্রতিষ্ঠাতা। তিনি আমাদের বিস্মৃতিকে স্মরণ করান, দুষিতকে পবিত্র করেন, আর আমাদের পথ দেখান নিজের ‘পারাপার’-এর পথে-

অজ্ঞতা থেকে সচেতনতায়,

ক্ষয় থেকে পুনরুদ্ধারে,

ধ্বংস থেকে পুনর্জীবনে।