দুর্গাপুজো ভৌগোলিক সীমা বা পারিবারিক গণ্ডির উর্ধ্বে, দক্ষিণ কলকাতার সোনালি পার্কের থিমে রয়েছে বড় চমক
তিলোত্তমার অনেক বড় পুজোর মাঝেও এবার বড়সড় চমক দিয়েছে দক্ষিণ কলকাতার সোনালি পার্ক স্পোর্টস অ্যান্ড কালচারাল সোসাইটির পুজো।

আজকাল ওয়েবডেস্ক: বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসবের ঢাকে কাঠি পড়ে গিয়েছে। মহালয়ার দিন থেকেই প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে ঠাকুর দেখতে শুরু করে দিয়েছেন মানুষ। শহর কলকাতার বেশির ভাগ পুজো উদ্বোধন হয়ে গিয়েছে। তবে তিলোত্তমার অনেক বড় পুজোর মাঝেও এবার বড়সড় চমক দিয়েছে দক্ষিণ কলকাতার সোনালি পার্ক স্পোর্টস অ্যান্ড কালচারাল সোসাইটির পুজো। গীতাঞ্জলি মেট্রো স্টেশনের কাছেই ধুমধাম করে আয়োজিত হয় এই সোনালি পার্কের পুজো। এই বছর সোনালি পার্কের দুর্গাপুজো পা দিয়েছে ৪২ বছরে। এই বছর তাদের ভাবনা ‘ঘরে বাইরে’। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিখ্যাত উপন্যাস ‘ঘরে-বাইরে’-র অনুকরণে তৈরি হয়েছে এবারের মণ্ডপ এবং প্রতিমা।
তবে নামটা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উপন্যাসের অনুকরণে দেওয়া হলেও এর পিছনে ভাবনা রয়েছে অন্যরকম। পুজো উদ্যোক্তারা জানাচ্ছেন, তাদের কাছে ‘ঘরে-বাইরে’ শুধুমাত্র একটি উপন্যাস নয়, এক চিরকালীন দ্বন্দ্বের প্রতিচ্ছবি। যেখানে ঘর মানে নিরাপত্তা, বন্ধন ও আত্মীয়তা, আর বাইরে মানে বিস্তার, মুক্তি ও দায়বদ্ধতা। ২০২৫ সালে সোনালি পার্কের দুর্গোৎসব এই চিরন্তন দ্বন্দ্বকে রূপান্তর করেছে ‘ঘর’ আর ‘বাইরে’র সেতুবন্ধনে। বাঁশ, কাপড়ের পাশাপাশি বাটামের নানারকম কাজ দিয়ে তৈরি হয়েছে গোটা মণ্ডপটি।
যার মধ্যে দিয়ে বোঝানো হয়েছে বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপুজো শুধুমাত্র পরিবারের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ এই সময় ফিরে আসে নিজের বাড়িতে, নিজের এলাকায়। দুর্গাপুজো আসলে মিলনের এক আধুনিক ছবি। যেখানে ভৌগোলিক সীমা বা পারিবারিক গণ্ডি পেরিয়ে একত্রিত হন পাশের ফ্ল্যাটের দিদি, পাশের গলির কাকু, স্কুলপড়ুয়া ভাইপো, অবসরপ্রাপ্ত মাস্টারমশাই সকলে। সবাই মিলে, একসঙ্গে, এক মন ও এক চেতনায় পুজো কাটান।
ঘরে বাইরে উপন্যাসে রবীন্দ্রনাথ যেমন নিখিল এবং সন্দীপের মাঝে বিমলার আত্মজিজ্ঞাসা তুলে ধরেছিলেন তেমনই সোনালি পার্কের দুর্গাপুজোর থিম এবার দর্শকদের কাছে প্রশ্ন তুলেছে, ‘শুধুই কী চার দেওয়ালের মধ্যে পুজো নাকি বাইরের সবাইকে নিয়েই পূর্ণতা পাওয়া যায়?’ প্যান্ডেলের নকশায় রয়েছে ঘরোয়া উঠোনের প্রতিচ্ছবি, মাটির দেওয়ালে আঁকা আল্পনা, বারান্দায় ঝোলানো শুকনো তোরণ। থিম শিল্পী ‘অভিন্দ্রা গ্রুপ’ এই ভাবনাকে রূপ দিয়েছেন রাবীন্দ্রিক সংবেদনশীলতা ও লোকশিল্পের যুগ্ম ব্যবহারে। পুজোর কয়েকটা দিন এলাকার সমস্ত মানুষের দিন কাটে এই মণ্ডপেই।
এই কয়েকটা দিন সবাই মিলে একটা পরিবারের মতো করে দুর্গাপুজো কাটান। সমস্ত রীতিনীতির পাশাপাশি সোনালি পার্কের পুজো থাকে অনেক চমক। আয়োজন করা হয় বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের। অনুষ্ঠিত হয় গীতি আলেখ্য, নাটক, সমবেত সঙ্গীত, সমবেত নৃত্যানুষ্ঠানের। সঙ্গে থাকে কুইজ কম্পিটিশন, গানের লড়াইয়ের মতো আকর্ষণীয় প্রতিযোগিতা। আট থেকে আশি সকলেই ভিড় জমান পুজো মণ্ডপে। পুজো উদ্যোক্তারা জানালেন, বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পাশাপাশি ফুচকা খাওয়া, ঢাক বাজানো, ধুনুচি নাচের মতো প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। জিততে পারলে থাকে আকর্ষণীয় পুরস্কারও।