ফিরে দেখা শৈশব: হারানো দিন ফিরিয়ে আনতে চলেছে কালীঘাট শ্রী সংঘের এবারের পুজো
Durga Puja 2025: সময় বদলায়, শৈশবও বদলায়। আজকের শিশুর হাতে স্মার্টফোন, ভিডিও গেমস আর মলের চকচকে খেলনার ভিড়ে আমরা ভুলে যাচ্ছি সেই নির্দোষ আনন্দ—তালপাতার হেলিকপ্টার, কাঠের গাড়ি, মাটির পুতুল।

সৌরভ গোস্বামী: সময় বদলায়, শৈশবও বদলায়। আজকের শিশুর হাতে স্মার্টফোন, ভিডিও গেমস আর মলের চকচকে খেলনার ভিড়ে আমরা ভুলে যাচ্ছি সেই নির্দোষ আনন্দ—তালপাতার হেলিকপ্টার, কাঠের গাড়ি, মাটির পুতুল। একসময়ের অমূল্য স্মৃতি যেন হারিয়ে গেছে ভোগবাদী আধুনিকতার স্রোতে। অথচ, সেই সরল খেলনাগুলোই ছিল আমাদের আত্মপরিচয়ের নিঃশব্দ বাহক, সংস্কৃতি আর পারিবারিক জীবনের রঙিন প্রতিচ্ছবি।
এ বছর কালীঘাট শ্রী সংঘ ক্লাব তাদের ৩১তম বর্ষে ফিরিয়ে আনছে সেই হারিয়ে যাওয়া দিনগুলো। থিম—“ফিরে দেখা, শৈশব”। এটি কেবল একটি পুজোর থিম নয়, বরং এক হৃদয়ের সন্ধান। মায়ের ঘর সাজানো হচ্ছে স্মৃতির কোলাজে—যেখানে মিশে আছে দুপুরবেলায় পাড়ার মাঠে ছুটে চলা ছোট্ট পায়ের ছাপ, বারোয়ারি ঢাকের নিক্কণে ভেসে আসা হাসির শব্দ, আর পুতুল খেলার নির্দোষ দুনিয়া। প্রতিমা শিল্পী দীপেন মন্ডল সেই অনুভূতিগুলিকে মূর্ত করছেন মাটির স্পর্শে, আর আবহসংগীতে রাজীব ও নম্রতা (খোয়াব) তুলে ধরছেন স্মৃতির গোপন সুর। আলোকসজ্জার দায়িত্বে নির্মল মাইতি। ছবিতে দীপ্তরূপ। ক্লাব চেয়ারম্যান ও ৮৩ নং ওয়ার্ডের পৌর প্রতিনিধি প্রবীর কুমার মুখার্জি।
আরও পড়ুন: কাশফুলে 'অর্পণ', ৩০তম বর্ষে নাকতলা উদয়ন সংঘের পুজোয় বাঙালির চিরন্তন সুর
“আমাদের উদ্দেশ্য শুধু একটি শারদোৎসব করা নয়, বরং মানুষের মনে শৈশবের হারানো আনন্দ ফিরিয়ে দেওয়া,” জানালেন মণ্ডপ শয্যার নেপথ্যে থাকা শিল্পী শঙ্কর দে। এই পুজোর খরচ রাজ্য সরকারের এক লক্ষ দশ হাজার টাকার অনুদান এবং বিজ্ঞাপন থেকেই মেটে, চাঁদা তোলা হয় না। প্রতিদিন এখানে ভিড় হয় প্রায় দুই লক্ষ মানুষের। পুজোকে কেন্দ্র করে থাকে সামাজিক উদ্যোগও। রক্তদান শিবির, দরিদ্রদের জন্য বস্ত্রদান, শিশুদের ড্রয়িং স্কুল, এমনকি সারা বছর জুড়ে ডেঙ্গু-ম্যালেরিয়া প্রতিরোধে নানা কর্মসূচি চলে। এই মানবিক উদ্যোগগুলির পৃষ্ঠপোষক হিসেবে আছেন মেয়র পরিষদের সদস্য দেবাশীষ কুমার।
আজকের শিশু হয়তো মোবাইলের স্ক্রিনে আঁকড়ে থাকে, ফাস্ট ফুড আর শপিং মলের জগতে বড় হতে থাকে। কিন্তু কালীঘাট শ্রী সংঘের এবারের থিম মনে করিয়ে দিচ্ছে—শৈশব মানে শুধু ভোগ নয়, ছিল অনুভবের এক চিরন্তন ভুবন। আর সেই হারিয়ে যাওয়া ভুবনকে নতুন প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেওয়াই যেন এই পুজোর আসল প্রার্থনা। এই উৎসব তাই কেবল প্রতিমার সামনে অঞ্জলি নয়, বরং আমাদের অন্তর্লীন শৈশবকে ফিরে পাওয়ার এক আন্তরিক প্রয়াস।