বিকেল হলেই মণ্ডপ ছেড়ে চলে যান সবাই, সন্ধ্যা নামলেই দুর্গার পাহাড়ায় চলে আসে বন্যপ্রাণীরা, কোথায় হয় এই পুজো?

Durga Pujo 2025: ডুয়ার্সের মরাঘাট বনাঞ্চলের এক প্রান্তে তোতাপাড়া জঙ্গল। আর এই জঙ্গলেই বনবস্তির বাসিন্দাদের এই পুজোর আনন্দ শুধু দিনের বেলাতেই। রাত বাড়লেই বন্যপ্রাণীদের দখলে চলে যায় গোটা এলাকা।

Devi Durga in Totapara forest guarded by wild animals at night claim locals
বিকেল হলেই মণ্ডপ ছেড়ে চলে যান সবাই, সন্ধ্যা নামলেই দুর্গার পাহাড়ায় চলে আসে বন্যপ্রাণীরা

আজকাল ওয়েবডেস্ক: বিকেলের সূর্য আস্তে আস্তে রং বদল করতেই ফাঁকা হয়ে যায় মণ্ডপ। এক এক করে বা দলবেঁধে মণ্ডপ ছাড়তে শুরু করেন আয়োজকরা। ডুয়ার্সের মরাঘাট বনাঞ্চলের এক প্রান্তে তোতাপাড়া জঙ্গল। আর এই জঙ্গলেই বনবস্তির বাসিন্দাদের এই পুজোর আনন্দ শুধু দিনের বেলাতেই। রাত বাড়লেই বন্যপ্রাণীদের দখলে চলে যায় গোটা এলাকা। তাঁরাই মণ্ডপ পাহাড়া দেন বলে ধারণা বাসিন্দাদের। 

প্রায় ১৬ বছর আগে বন দপ্তরের আধিকারিকদের হাত ধরে শুরু হয়েছিল এই পুজো। যেখানে সানন্দে যোগ দিয়েছিলেন বনবস্তির বাসিন্দারা। জলপাইগুড়ি বনবিভাগের মোরাঘাট রেঞ্জের অন্তর্গত তোতাপাড়া বিটের পাশেই এই বস্তির অবস্থান। সড়কপথে যেতে হলে জলপাইগুড়ির গয়েরকাটা থেকে নাথুয়াগামী রাজ্য সড়ক দিয়ে গিয়ে খুটিমারি বিট অফিসের সামনে দিয়ে সবুজ জঙ্গল চিড়ে যাওয়া আট কিলোমিটার কাঁচা রাস্তা ধরে তোতাপাড়া বনবস্তিতে পৌঁছে যাওয়া যায়। 

চারিদিকে ঘন জঙ্গল দিয়ে ঘেরা। বাইসন, হাতি এবং লেপার্ডের ভয় রয়েছে। সেজন্য বিকেলের পর বাইরে বেরোনোর কোনও উপায় খুব একটা থাকে না। তাহলে এখানকার কচিকাঁচারা কীভাবে পুজোর আনন্দ উপভোগ করবে। সেই কথা ভেবেই ১৬ বছর আগে তৎকালীন জলপাইগুড়ির বন আধিকারিক কল্যাণ দাসের উদ্যোগে তোতাপাড়া বনবস্তিতে শুরু হয় দুর্গাপুজো। যেহেতু জঙ্গলের মধ্যে পুজোর আয়োজন হয় সেজন্য দুর্গা এখানে 'বনদুর্গা' হিসেবে পূজিতা হন। পুজোয় একদিকে যেমন বন দপ্তরের কর্মী ও আধিকারিকরা বন রক্ষা করেন তেমনি তাঁরা সকলেই পুজোয় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। নবমীর দিন থেকে মেলা বসে।

পুজোয় দুর্গার সঙ্গে পুজো করা হয় হাতিকেও। রাত হলেই তাদের আনাগোনা বেড়ে যায় এলাকায়। ফলে তাদের সামনে যাতে পড়তে না হয় সেজন্য বিকেল গড়ালেই যে যার মতো বাড়ি ফিরে যান। মোরাঘাট রেঞ্জের রেঞ্জ অফিসার চন্দন ভট্টাচার্য বলেন, 'বনবস্তির বাসিন্দাদের সঙ্গে বনকর্মীরাও সক্রিয়ভাবে এই পুজোয় অংশগ্রহণ করেন। পুজোয় আমাদের তরফ থেকে সবরকম সহযোগিতা করা হয়।' 

পুজো কমিটির উদ্যোক্তা রিনা সিং বলেন, 'এক বন আধিকারিক এই পুজোর উদ্যোগ নিয়েছিলেন। এখন আমরা নিজেদের মতো করে দেবীর আরাধনা ও আনন্দ করি। বন দপ্তরের আধিকারিকরাও আমাদের সঙ্গে পুজোয় আনন্দে মেতে ওঠেন। পুজোয় মেলা থেকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, সবকিছুই আয়োজিত হয়।' স্থানীয় বাসিন্দা শান্তি ওঁরাও, শুকো ওঁরাও জানান, নাচগানের জন্য সপ্তমীর দিন থেকেই ধামসা মাদলের ব্যবস্থা করা হয়।