"এবার আবার বড়" সাবেকিয়ানা ও থিমের মিলিত ভাবনায় সমৃদ্ধ ৮৮ বছরের সুপ্রাচীন দেশপ্রিয় পার্ক দুর্গোৎসব!
শহর কলকাতার সনামধন্য পুজো গুলির মধ্যে একটি পুজো দেশপ্রিয় পার্ক দুর্গোৎসব,
                                    গোপাল সাহা, কলকাতা: শহর কলকাতার সনামধন্য পুজো গুলির মধ্যে একটি পুজো দেশপ্রিয় পার্ক দুর্গোৎসব, যার নাম শুনলেই শহরবাসী তথা রাজ্যবাসীর কাছে এক উন্মাদনা ও উচ্ছ্বাসের প্রতিচ্ছবি, যার বয়স ৮৮ বছর অর্থাৎ ২০২৫ এ ৮৮ বছর পূর্ণ হল মাতৃ আরাধনায়। দেশপ্রিয় পার্ক মাতৃ আরাধনায় তৎকালীন সময় পরাধীনতার শৃংখলে আবদ্ধ থাকলেও, তাকে আজ অতিক্রম মা দুর্গা শৃংখল মুক্ত হয়ে বিরাজ করছেন আমাদের মধ্যে। আর এই দেশপ্রিয় পার্ক সার্বজনীন দুর্গোৎসব পূজার আয়োজনে পূর্বে ষোলআনা সাবেকিয়ানায় পরিপূর্ণ থাকলেও বর্তমানে তার সঙ্গে মন্ডপ শয্যায় থিমের ছোঁয়া লাগলেও, মাতৃ প্রতিমা কিন্তু সাবেকিয়ানায় ষোলআনা পরিপূর্ণ, তাই মাতৃ প্রতিমা তৈরি করছেন কুমারটুলির স্বনামধন্য শিল্পী পরিমল পাল।
তবে উল্লেখযোগ্য বিষয়, দেশপ্রিয় পার্ক দুর্গোৎসবের মন্ডপ শয্যায় যে থিমের ছোঁয়া লেগেছে তার নামকরণ হয়েছে 'এবার আবার বড়' যার উচ্চতায় দৈর্ঘ্য প্রায় ৮৫ ফুট এবং তার ৬০০০ স্কয়ার ফিট এরিয়া নিয়ে তৈরি হচ্ছে এই মন্ডপ এবং তার সজ্জা এবং তার চওড়া ১৭০ ফুট, এমনটাই জানিয়েছেন দেশপ্রিয় পার্কের কর্মকর্তারা। তবে মাতৃ প্রতিমায় কোন কার্পণ্য না করা হলেও সমস্ত কিছুর কথা চিন্তা করে এবং সাবেকিয়ানার ছোঁয়ায় অশুর বিনাশিনী দেবী দুর্গার প্রতিমা এবার অন্যবারের তুলনায় আরো বেশি করে নজর কাড়বে সমস্ত ভক্তদের, যেই প্রতিমার শিল্পী হলেন কুমারটুলির পরিমল পাল। মূলত ২০১৫-এর কথা মাথায় রেখে সমস্ত দিক চিন্তা করে তারা মন্ডপ শয্যায় থিমের ছোঁয়া এবং সৌন্দর্য বৃদ্ধি করলেও মাতৃ প্রতিমা দৈর্ঘ্যে বড় না করে সৌন্দর্যে এবং মাতৃরূপে দেবী দুর্গার সাবেকি রূপ দান করায় তারা সচেষ্ট হয়েছেন যেই কারণে এ বছর দায়িত্ব দিয়েছেন কুমারটুলির প্রখ্যাত শিল্পী পরিমল পালকে, এমনটাই জানিয়েছেন দেশপ্রিয় পার্ক দুর্গাপূজা কমিটির শীর্ষকর্তা।
উল্লেখ্য, এই বছর ২০২৫ এ মন্ডপ শয্যায় থিম এবং সাবেকিয়ানা দুটিকে মিলিত করে এক অন্য মাত্রা দেওয়ার কথা চিন্তা করেছেন দেশপ্রিয় পার্ক পূজা কমিটি। তাদের কথায়, যেহেতু এবার প্রচুর পরিমাণ বৃষ্টি হয়ে চলেছে রাজ্যজুড়ে এবং বর্ষার ছোঁয়া পুজোতেও থাকবে বলে অনুমান, তাই সেই কথা চিন্তা করে এবার পূজো মণ্ডপের সজ্জা বজ্রার রূপ তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। যেই বজ্রার রূপ হবে থাইল্যান্ডের বজ্রা, ভারতীয় নয়। ভারতীয় বজ্রার রূপ যেখানে সামনের অংশ ময়ূরের মত অর্থাৎ ময়ূরপঙ্খী বলে পরিচিত, কিন্তু দেশপ্রিয় পার্কের যে 'বজ্রা' তৈরি হচ্ছে যার সামনের অংশ হবে একটি ড্রাগনের মতো। এবং তার যে আলোকসজ্জা হবে তা দূর থেকে দেখলে মনে হবে জলের ঢেউতে প্রবাহিত হচ্ছে এই বজ্রা, যার ভেতরে মা দুর্গা ভ্রমণে বেরিয়েছেন সপরিবারে। একইসঙ্গে বৃষ্টিবহুল পরিবেশের জন্য সমস্ত রকম সুরক্ষা এবং বৃষ্টির জলের কারণে যাতে দর্শনার্থীদের কোনো রকম সমস্যা না হয় সেজন্য কাঠের পাঠাতন দিয়ে পুরো অংশটা ঢেকে দেওয়া এবং একই সাথে পুলিশি সুরক্ষার পাশাপাশি থাকছে দেশপ্রিয় পার্ক দুর্গোৎসব কমিটির নিজস্ব সুরক্ষা বাহিনী। যাতে কোনরকম ভাবে পূজা মন্ডপে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে এবং কোনোভাবে সুরক্ষা বা আইনশৃঙ্খলার ভঙ্গ না হয়, এই সবটাকে মাথায় রেখেছেন দেশপ্রিয় পার্ক সার্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটি।
সবচেয়ে বড় বিষয়, এই দেশপ্রিয় পার্কের পুজো ঘিরে মানুষের উন্মাদনা ও উচ্ছ্বাস এতটাই প্রবল থাকে যে এই চার দিনে মানুষের ঢল নামে কল্পনাতিত, ৫০ লক্ষেরও বেশি, প্রায় প্রতিদিন দশ লক্ষেরও বেশি জনসমাগম থাকে, এমনটাই জানাচ্ছেন পুজো কমিটির শীর্ষ কর্তারা। আর তাই এই বিশাল জনসমাগমকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে সিসিটিভি সারভিলেন্স দিয়ে পুরো জায়গাটিকে মুড়ে ফেলা হয়েছে এবং একই সঙ্গে থাকছে বিজ্ঞানভিত্তিকভাবে নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা, যাতে কোনরকম অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে পূজো মন্ডপে।
আমাদের সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে দেশপ্রিয় পার্ক দুর্গোৎসব কমিটির সাধারণ সম্পাদক সুদীপ্ত কুমার বলেন, "দেশপ্রিয় পার্ক দুর্গোৎসব এবার আমাদের ৮৮ বছর পূর্ণ হওয়ার সাথে সাথে বহু ইতিহাস বহন করছে আমাদের এই দুর্গাপূজা। তাই এ বছর আমাদের পুজোর যে হৃদয় বিদারিত নাম 'এবার আবার বড়'। আমরা মন্ডপ সোজ্জায় থিমের ছোঁয়া রাখলেও, মাতৃ প্রতিমা যেখানে কোন থিম নয় সাবেকিয়ানায় পরিপূর্ণ রয়েছে। কোনরকম কার্পণ্য করা হয়নি মাতৃ প্রতিমার সাজসজ্জা ও রুপদানে। একইসঙ্গে আমাদের এই পুজোয় লাইটিংয়ের যে সৌন্দর্যায়ন তাও থাকবে নজর কারা। দূর থেকে দেখে মনে হবে যেন এক ড্রাগন দ্বারা চালিত বজ্রা যা জলের মধ্যে দিয়ে বেয়ে চলেছে, এবং যার দ্বার বাইছেন মাঝিরা।"
তবে তিনি আরো বলেন, "পূর্বের ঘটনার কথা মাথায় রেখে অর্থাৎ ২০১৫ তে ঘটে যাওয়া ঘটনার কথা মাথায় রেখে আমরা বেশি করে নজর দিয়েছি সুরক্ষার দিকে। থাকছে চারিদিকে সিসিটিভি ক্যামেরা এবং করা পুলিশের নজরদারি, আমাদের নিজস্ব সুরক্ষা ব্যবস্থা। বিজ্ঞানসম্মতভাবে অর্থাৎ সার্পেন্টাইল ব্যবস্থা, যেখানে দর্শনার্থীদের সমাগম একটা এসের মত থাকবে যাতে কোনরকম ভিড় ও উত্তেজনাপূর্ণ ঠেলাঠেলি পরিস্থিতি না হয়। তবে সবচেয়ে বড় বিষয় সাধারণ মানুষকে সচেতন থাকাটা বেশি করে জরুরী কারণ, প্রত্যেকদিনের ১০লক্ষেরও বেশি জনসমাগম সামান্য কিছু সুরক্ষা দিয়ে সুরক্ষিত রাখা সম্ভব নয় যদি সাধারণ মানুষ সুস্থ সচেতন ভাবে চলাফেরা না করে। তাই সাধারণ মানুষের সহযোগিতা যেকোনো পূজোকেই সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।"