কালীপুজোর রাতে আরাধনা হয় ৩৩ কোটি দেবতার, রাজ্যের এই গ্রামে পুজোর রীতিনীতি চমকে দেবে আপনাকেও
এই বিশেষ দিনে কালীপুজো ছাড়াও হিন্দু ধর্মের ‘৩৩ কোটি’ দেবতার আরাধনা করা হয় এই গ্রামে। কেবল মনসা এবং বিশ্বকর্মা পুজো সেদিন করা হয় না।

আজকাল ওয়েবডেস্ক: আর মাত্র কয়েক দিনের অপেক্ষা। এরপরই দীপাবলির আলোকমালায় সেজে উঠবে গোটা দেশ। কার্তিক অমাবস্যার গাঢ় অন্ধকার কাটাতে হাজার হাজার আলোকে সঙ্গে নিয়ে দীপান্বিতা কালীপুজোর রাতে অজস্র দেবদেবী নেমে আসেন মুর্শিদাবাদের বংশবাটি গ্রামে।
জানা গিয়েছে, এই বিশেষ দিনে কালীপুজো ছাড়াও হিন্দু ধর্মের ‘৩৩ কোটি’ দেবতার আরাধনা করা হয় এই গ্রামে। কেবল মনসা এবং বিশ্বকর্মা পুজো সেদিন করা হয় না। মুর্শিদাবাদ জেলার প্রত্যন্ত এই গ্রামের লোকেরা দুর্গাপুজোর পরিবর্তে কালীপুজোর সময় পরিবারের লোকেদের নিয়ে আনন্দে মেতে ওঠেন।
তবে দেবদেবীদের মধ্যে মহাকাল ভৈরবের পুজো পুজোর সাম্প্রতিক সময়ে এলাকায় ব্যাপক জনপ্রিয় হয়েছে। কালীপুজোর প্রায় এক সপ্তাহ পর একটি বিশেষ দিনে মহাকাল ভৈরবের নিরঞ্জন হয়।
সেদিন গ্রামে মানুষের ঢল নামে। শুধু মুর্শিদাবাদ জেলার বিভিন্ন এলাকা নয় পার্শ্ববর্তী বীরভূম এবং ঝাড়খন্ড থেকেও বহু মানুষ আসেন মহাকাল ভৈরবের নিরঞ্জন দেখার জন্য।
স্থানীয় গ্রামবাসীরা জানান, কার্তিক অমাবস্যাতে মহাকাল ভৈরবের পুজোয় সময় ওই গ্রামে অন্তত শতাধিক দেবদেবীর পূজো হয়। এই সময় ওই গ্রামের বিভিন্ন পাড়ায় মনসা ও বিশ্বকর্মা বাদ দিয়ে সরস্বতী, অন্নপূর্ণা, হর-পার্বতী, ব্রহ্মা সহ বিভিন্ন দেবদেবীর পুজো হয়।
বংশবাটী গ্রামের লোকেরা সারা বছর অপেক্ষা করে থাকেন কার্তিক মাসের অমাবস্যার জন্য। এই সময় গ্রামে বিভিন্ন দেবদেবীর পুজো হলেও মহাকাল ভৈরবকে সম্মান জানাতে তাঁর মূর্তি সব থেকে বেশি উঁচু করা হয়।
সুতির হাটতলায় বংশবাটি তরুণ তীর্থ ক্লাবের সদস্যরা গত প্রায় ৪৩ বছর ধরে এই পুজো করছেন। প্রায় ৩৫ ফুটের মহাকাল ভৈরবের মূর্তি তৈরিতে কয়েক হাজার আঁটি খড়, ৪০-৫০ কেজি সুতলি দড়ি, প্রচুর পরিমাণে ধানের তুষ এবং মাটির ব্যবহার করা হয়।
ক্লাবের কয়েকজন সদস্য মিলে নিজেরাই সুবিশাল মহাকাল ভৈরবের প্রতিমা তৈরি করেন। কালী পুজোর রাতে জাঁকজমকের সঙ্গে মহাকাল ভৈরবের পুজো করা হয়।
এই পুজোর উদ্যোক্তারা জানান, প্রথমবার যখন এই পুজো শুরু হয় সে সময় প্রতিমার উচ্চতা ছিল মাত্র দু’ফুট। সেই সময়ে রাজরাজেশ্বরী মন্দিরে মহাকাল ভৈরবের পুজো করা হয়েছিল। তারপর ক্লাবের কর্তাদের উদ্যোগে রাজরাজেশ্বরী মন্দির থেকে প্রায় ১০০ মিটার দূরে মহাকাল ভৈরবের বিশালাকার মূর্তি গড়ে পুজোর শুরু হয়।
গ্রামের বাসিন্দা মাধব মজুমদার জানান, ‘বংশবাটি গ্রামের বাসিন্দারা সারা বছর মহাকাল ভৈরবের পুজোর জন্য অপেক্ষা করে থাকেন। এই সময়ে মন্দিরের কাছে একটি বিশাল মেলা বসে। কেবলমাত্র বংশবাটি নয় হিলোরা, আলুয়ানি, নাজিরপুর, রাতুড়ি সহ আশেপাশের বহু এলাকা থেকে প্রচুর মানুষ মহাকাল ভৈরবের মূর্তি দেখা এবং মেলাতে অংশগ্রহণ করতে আসেন।’
তিনি বলেন, ‘গ্রামের যে সমস্ত পরিবারের সদস্যরা চাকরি সূত্রে বাইরে থাকেন, তাঁরাও এই সময় গ্রামে ফিরে আসেন। এর পাশাপাশি গ্রামের বিভিন্ন বাড়িতে আত্মীয়-স্বজনদের আনাগোনা বেড়ে যায়। সবই হয় মহাকাল ভৈরবের মূর্তি দেখার জন্য।’
জানা গিয়েছে, প্রতিবছর ‘ডিজে’ চালিয়ে প্রতিমা নিরঞ্জন করা হলেও গত কয়েক বছর থেকে সেই রীতির পরিবর্তন করে ঢাক-ঢোল বাজিয়ে মহাকাল ভৈরবের প্রতিমা নিরঞ্জন হয়।
পুজোর দিন সাতেক পর বিশেষ দিন দেখে সন্ধ্যায় আতশবাজির প্রদর্শনীর পর রাত প্রায় এগারোটা নাগাদ মহাকাল ভৈরবের নিরঞ্জন হয় গ্রামেরই একটি পুকুরে। আর সেই নিরঞ্জন দেখার জন্য সকাল থেকে উৎসবে মেতে থাকেন সুতির বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দারা।