হয় পশুবলি, দেবীকে মড়ার খুলিতে পান করানো হয় কারণ, জমিদারবাড়ির এই পুজোয় রাত যত গড়ায় ততই তৈরি হয় গা ছমছমে পরিবেশ
মুর্শিদাবাদ জেলার খড়গ্রাম থানার এড়োয়ালী গ্রামে রায়চৌধুরী পরিবারে ১৩টি কালীপুজো হয়

আজকাল ওয়েবডেস্ক: মুর্শিদাবাদ জেলার খড়গ্রাম থানার এড়োয়ালী গ্রামে রায়চৌধুরী পরিবারে ১৩টি কালীপুজো হয়। দীপান্বিতা কালীপুজোর সময় এই গ্রামে কোনও বারোয়ারি কালীপুজো হয় না। রায়চৌধুরী বাড়ির পুজো দেখার জন্য জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজার হাজার মানুষ পুজোর দিনগুলোতে এই গ্রামে এসে ভিড় জমান। গোটা গ্রাম সেজে ওঠে আলোর মালায়। বসে একাধিক মেলা। এড়োয়ালী গ্রামে রায়চৌধুরী পরিবারে এখন শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি চলছে দেবীকে বরণ করার জন্য।
রায়চৌধুরী পরিবারে সঠিক কত বছর আগে কালীপুজোর সূচনা হয়েছিল তা বলা না গেলেও অনেকেই মনে করেন প্রায় ৪০০ বছর আগে রাজা রামজীবন রায়ের হাত ধরে প্রথমবার গ্রামে কালীপুজোর সূচনা হয়। শোনা যায় বর্গী আন্দোলনের সময় গ্রামের প্রজাদের রক্ষা করার জন্য এবং সকলের মঙ্গলার্থে প্রথমবার পুজো শুরু করেছিলেন রাজা রামজীবন রায়। এখনও তাঁর বংশধররা সমান নিয়ম নিষ্ঠার সঙ্গে পুজোর সমস্ত আচরণ পালন করে চলেছেন। এই গ্রামের কালীপুজোর অনন্য বৈশিষ্ট্য এখানে হিন্দু -মুসলিম কোনও ভেদাভেদ করা হয় না। পুজোর সময় রাজ পরিবারের সদস্যদের বাড়িতে হিন্দু ও মুসলিম-সহ সমস্ত ধর্মাবলম্বী মানুষের জন্য মন্দিরের দ্বার সর্বদা অবারিত থাকে।
রায়চৌধুরী পরিবারের সদস্যদের কথায়, একসময় তাঁদের পদবী রায় থাকলেও ব্রিটিশ আমলে তাঁদের কাজে সন্তুষ্ট হয়ে তৎকালীন সরকার চৌধুরী উপাধি দিয়েছিল। পরিবারের সদস্যরা জানান, প্রথমে পরিবারে একটি কালীপুজো হলেও পরবর্তীকালে জমিদারি দশআনি এবং ছ'আনিতে ভাগ হয়ে যায়। ভাগ হয়ে যায় এই পরিবারও। আরও পরে দশ আনি পরিবার ছোট পাঁচানি এবং বড় পাঁচানি নামে দু'ভাগ হয়। তাই বর্তমানে রায়চৌধুরী বাড়ির তিনটি ভাগে মোট ১৩ টি কালীপুজো হয়।
কালীপুজোগুলোর মধ্যে বড় কালী ,মঠকালী, নিমকালী, চাতর কালী, বেলকালী, আমড়াকালী, ধর্মকালী ,ষষ্ঠীকালী, রক্ষাকালী অত্যন্ত জাগ্রত বলে এলাকাবাসী মনে করেন। রায়চৌধুরী পরিবারের সদস্য সুশীল রায়চৌধুরী বলেন,'এটি একটি সম্পূর্ণ পারিবারিক পুজো। এই পুজোর মধ্যে বড়মার পুজোতে সব থেকে বেশি ধুমধাম হয়।'
গ্রামে জনশ্রুতি রয়েছে, কয়েকশো বছর আগে এলাকার ডাকাতরা অভিযানে যাওয়ার আগে যে কালী মূর্তির পুজো করতেন তাকেই ধর্মবুড়ি নামে পুজো করা শুরু করেন রাজা রামজীবন। পরিবারের সদস্যদের আরও দাবি, প্রায় ৩০০ বছর আগে বামাক্ষ্যাপা এসে তাঁদের পারিবারিক মন্দিরে পুজো করে গিয়েছেন। রাজ পরিবারে অপর সদস্য শুভব্রত রায়চৌধুরী বলেন,'বেলবুড়ি কালীর পুজোতে পুরোহিত পঞ্চমুন্ডির আসনে বসে পুজো করেন। সেখানে এখনো মেষ এবং মোষ বলিদান হয়।' তিনি বলেন ,'পুজোর সময় গোটা গ্রাম আনন্দে মেতে ওঠে। গ্রামের যে সমস্ত সদস্য কর্মসূত্রের বাইরে থাকেন তাঁরা কালীপুজোর সময় গ্রামে ফিরে আসেন। '
রাজপরিবারের অপর সদস্য তৃপ্তিপ্রসাদবাবু বলেন,' আমাদের বাড়ির কালীপুজোর বেশ কিছু অভিনবত্ব রয়েছে। বড়মার মন্দিরে যে কালীপুজো হয় সেখানে দেবীর ঘটে জলের পরিবর্তে 'কারণ বারি' ভরা হয়। এছাড়াও দেবীকে পুজোর সময় মড়ার খুলি করে 'কারণ' পান করানো হয়।' রায়চৌধুরী পরিবারের দেবী মূর্তির বিসর্জনের শোভাযাত্রা দেখার জন্য প্রচুর লোক ভিড় করেন। নিরঞ্জনের দিন সমস্ত প্রতিমাগুলো একসঙ্গে শোভাযাত্রা করে বার হয় ।সারারাত গ্রামের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে তারপর প্রতিমা নিরঞ্জন হয়।