জলের ছোঁয়ায় দৃষ্টি ফিরেছিল ভাস্কর পণ্ডিতের! তাঁর দেওয়া নামেই পরিচিত এই পুজো, চিনুন সোনামুখীর 'মা-ই তো কালী'কে

Kali Puja 2025 Sonamukhi maito-kali-puja
শিল্পী চার
 
বাংলা জুড়ে কালীপুজো ঘিরে প্রচলিত রয়েছে অসংখ্য লোককথা ও প্রাচীন ঐতিহ্য। তেমনই এক কাহিনি ছড়িয়ে বাঁকুড়ায়। এমন এক মন্দির রয়েছে বাঁকুড়ার সোনামুখীতে— যা ভক্তমহলে পরিচিত 'মা-ই তো কালী' নামে। কেবল ভক্তি বা আরাধনার জন্য নয়, এই পুজো আজও অমর হয়ে আছে এর নামকরণের পিছনের এক অলৌকিক জনশ্রুতির কারণে। সেই কাহিনি জুড়ে রয়েছে বর্গী সেনাপতি ভাস্কর পণ্ডিতের নাম।
 
কথিত আছে, ১৭৪২ খ্রিষ্টাব্দ বা ১১৪৯ বঙ্গাব্দে যখন বাংলা জুড়ে বর্গী হামলা চলছে, তখন বিষ্ণুপুর পেরিয়ে ভাস্কর পণ্ডিতের নেতৃত্বে এক বিশাল বর্গী দল সোনামুখীতে এসে পৌঁছয়। আতঙ্কে যখন গোটা এলাকার মানুষ ঘরবন্দি, ঠিক সেই সময়েই এক নিঝুম সন্ধ্যায় বর্গী সেনাপতি ভাস্কর পণ্ডিত সোনামুখীর এক পর্ণকুটিরের সামনে এসে দাঁড়ান। সেখানে তিনি দেখেন, এক বৃদ্ধ হাড়িকাঠের সামনে বসে পুজো করছেন।
 
শোনা যায়, বর্গী সেনাপতি ভাস্কর পণ্ডিত যখন সেই বৃদ্ধকে আঘাত করার জন্য অস্ত্র তুলে ধরলেন, তখনই নাকি এক অলৌকিক ঘটনা ঘটে। জনশ্রুতি, হঠাৎই তিনি তাঁর দৃষ্টিশক্তি হারান। তাঁর মনে হতে থাকে, কেউ যেন পিছন থেকে তাঁর অস্ত্র টেনে ধরেছে। অস্ত্র চালাতে অক্ষম হয়ে তিনি যখন দিশেহারা, ঠিক সেই সময়ই নাকি সেই বৃদ্ধ মন্দিরের ঘটের জল ছিটিয়ে দেন ভাস্কর পণ্ডিতের চোখে। আর সঙ্গে সঙ্গেই ফিরে আসে তাঁর দৃষ্টিশক্তি, নেমে আসে তাঁর অস্ত্রও।
 
এই অলৌকিক ঘটনার পর, ভাস্কর পণ্ডিত ওই বৃদ্ধকে জিজ্ঞাসা করেন, সেখানে কোনও দেবস্থান আছে কিনা। বৃদ্ধ উত্তরে জানান, কালী পুজোর কথা। তখনই নাকি বিস্ময়ে এবং ভক্তিভরে ভাস্কর পণ্ডিত চিৎকার করে ওঠেন, "মা-ই-তো কালী!" সেই থেকেই নাকি এই কালী প্রতিমার নাম হয়ে যায় 'মা-ই তো কালী'।
 
বর্গী সেনাপতি এরপর ওই বৃদ্ধের হাতে তাঁর অস্ত্রটি দিয়ে যান বলেও জনশ্রুতি আছে। সেই থেকে সোনামুখীর মানুষের কাছে 'মা-ই তো কালী' অত্যন্ত ভরসা, বিশ্বাস ও ভক্তির এক নাম। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই পর্ণকুটির আজ এক বিশাল মন্দিরে পরিণত হয়েছে। নিত্যদিন দূরদূরান্ত থেকে অসংখ্য ভক্ত এখানে পুজো দিতে আসেন। মনের ইচ্ছা পূরণ করার জন্য এই কালী প্রতিমার কাছে কার্তিকের অমাবস্যায় কালীপুজোর দিন ভক্তের ভিড় কয়েক গুণ বেড়ে যায়।