নেপথ্যে অনুব্রত মণ্ডল, সেজন্য রটন্তী বা শ্যামা'র মতো বীরভূমের এই কালী পরিচিত 'কেষ্টকালী নামে
বামা কালী, শ্যামা কালী, রটন্তী কালী—নানারকম কালীপুজোর নাম শুনেছেন, তবে কেষ্টকালীর কথা শুনেছেন কি? বীরভূম জেলার তৃণমূলের দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতা অনুব্রত মণ্ডল এই পুজো শুরু করেছিলেন মাত্র ১১ বছর বয়সে।

আজকাল ওয়েবডেস্ক: বামা কালী, শ্যামা কালী, রটন্তী কালী—নানারকম কালীপুজোর নাম শুনেছেন, তবে কেষ্টকালীর কথা শুনেছেন কি? বীরভূম জেলার তৃণমূলের দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতা অনুব্রত মণ্ডল এই পুজো শুরু করেছিলেন মাত্র ১১ বছর বয়সে।
সারা বছর রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত থাকলেও তিনি এখনও সক্রিয়ভাবে এই পুজোয় অংশগ্রহণ করেন। তাই তাঁর নামেই এই পুজো পরিচিত 'কেষ্টকালী'র পুজো হিসেবে।
ঠাকুরের উচ্চতাই এই পুজোর অন্যতম বিশেষত্ব। প্রতিবছর ৪৫ ফুট উচ্চতার মা কালীর প্রতিমা তৈরি হয়। কিন্তু এই বছর সেই উচ্চতা নেমে এসেছে মাত্র ১২ ফুটে। ক্লাবের অধিকাংশ সদস্য শারীরিকভাবে অসুস্থ, ফলে চাঁদা সংগ্রহ কম হওয়ায় এই বছর ছোট আকারে পুজো করা হচ্ছে বলে উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন।
বোলপুর শহরের বারিপুকুর সম্মিলনীর এই কালীপুজো এখন প্রায় ছয় দশকের ঐতিহ্য বহন করছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ছেলেবেলায় নেহাত খেলাচ্ছলে মাত্র ১১ বছর বয়সে এই পুজো শুরু করেন অনুব্রত মণ্ডল।
তখন কয়েকজন বন্ধুকে নিয়ে সামান্য উপকরণে পাড়ার মাঠেই প্রথমবার পুজো হয়। তারপর থেকে দু’বছর করোনা পরিস্থিতি বাদে টানা হয়ে আসছে এই পুজো। এ বছর ৫৫ বছরে পা দিল বারিপুকুর সম্মিলনীর কালীপুজো।
নবদ্বীপের শিল্পীদের হাতে গড়ে উঠত বিশাল ৪৫ ফুট প্রতিমা, যা দেখতে জেলার নানা প্রান্ত থেকে মানুষ ভিড় করতেন। শাক্ত মতে দেবীর পূজা হলেও, বলিদানহীন সর্বজনীন পুজো হিসেবে এর খ্যাতি রয়েছে। নিজে অনুব্রত মণ্ডল প্রতি বছর উপস্থিত থাকতেন পুজোর নানা অনুষ্ঠানে।
যদিও গত বছর পরিবারের এক সদস্যের মৃত্যুর কারণে অশৌচ চলায় তিনি অংশ নিতে পারেননি। তবুও তাঁর অনুপ্রেরণায় প্রতি বছরই এই পুজোর আয়োজন হয়।
পুজোর সভাপতি রবীন্দ্রনাথ দত্ত জানিয়েছেন, দেবীর উচ্চতাই এই পুজোর প্রধান আকর্ষণ। তাই বোলপুর ছাড়াও শান্তিনিকেতন, মুলুক, নানুর ও লাভপুর থেকেও পূণ্যার্থীরা এসে ভিড় করেন।
তবে এ বছর চিত্র একেবারেই আলাদা। ক্লাবের সদস্যদের অসুস্থতা ও আর্থিক সংকটের কারণে পুজোর বাজেট ১৩ লক্ষ টাকা থেকে কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র এক লক্ষ টাকায়। সেই সঙ্গে প্রতিমার উচ্চতাও ৪৫ ফুট থেকে নেমে এসেছে ১২ ফুটে।
বারিপুকুর সম্মিলনীর অন্যতম উদ্যোক্তা তথা অনুব্রত মণ্ডলের ভাই প্রিয়ব্রত মণ্ডল বলেন, এবছর প্রায় সব সদস্যই শারীরিকভাবে অসুস্থ, তাই চাঁদা সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি। ফলে বাধ্য হয়েই স্বল্প বাজেটে পুজো আয়োজন করতে হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, দাদা এই পুজো শুরু করেছিলেন ছোটবেলায়, তাই আমরা তাঁর ভাবনাটিকে টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করি। দাদা এবছরও পুজোয় উপস্থিত থাকবেন বলে জানিয়েছেন। তবে আগের মতো সক্রিয় থাকতে পারবেন না।
ক্লাবের সম্পাদক তরুণ মুখোপাধ্যায় জানান, সভাপতি রবীন্দ্রনাথ দত্তও অসুস্থ, তাই এবার ক্লাবের তরুণ সদস্যরাই উদ্যোগ নিয়েছে পুজোর দায়িত্ব পালনের। আগে চাঁদা তুলতে নতুনহাট বা আউশগ্রাম পর্যন্ত যাওয়া হতো, কিন্তু এবছর তা সম্ভব হয়নি।
তবুও, স্থানীয়দের উৎসাহ কিন্তু কমেনি। তাঁদের মতে, দেবীর উচ্চতা কমলেও কেষ্টকালীর পুজোর ঐতিহ্য ও বিশ্বাস অটুট রয়েছে। এই পুজো কেবল ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, বরং বোলপুরের সংস্কৃতি, আবেগ ও ঐতিহ্যের এক গুরুত্বপূর্ণ প্রতীক।