ভক্তের ভিড়ে আজও প্রাণ পায় নৈহাটির বড়মা, অবাক হবেন জাগ্রত কালীর অজানা কথা শুনে
শক্তির আরাধনায় দক্ষিণেশ্বর, কালীঘাট ও তারাপীঠের নাম সকলেই জানেন। পাশাপাশি রাজ্যে আরও এক বিখ্যাত ও জাগ্রত দেবী কালী রয়েছেন। তিনি হলেন নৈহাটির বড়মা।

শক্তি আরাধনায় দক্ষিণেশ্বর, কালীঘাট ও তারাপীঠের নাম সকলেই জানেন। পাশাপাশি রাজ্যে আরও এক বিখ্যাত ও জাগ্রত দেবী কালী রয়েছেন। তিনি হলেন নৈহাটির বড়মা। চলতি বছর এই পুজো ১০১ বছরে পড়েছে। একশো কেজি সোনার গয়না পরা বড়মার থানে প্রতি বছর হাজার হাজার ভক্ত মানত করেন, পুজো দেন, এক ঝলক দেখার জন্য ভিড় করেন। নেপথ্যে রয়েছে অনেক অজানা কথা।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, আজ থেকে প্রায় ১০১ বছর আগে নৈহাটির বাসিন্দা ভবেশ চক্রবর্তী ও তাঁর চার বন্ধু মিলে নবদ্বীপে ভাঙা রাস দেখতে গিয়েছিলেন। সেখানে গিয়ে বড় বড় মূর্তি দেখে তাঁদের চোখ কার্যত কপালে উঠেছিল। বিশাল আকৃতির ওই মূর্তি দেখে ওই যুবকের দল বিস্মিত হয়ে পড়েন। রাস মেলা থেকেই তাঁরা মনস্থির করেন, নৈহাটিতে বিশাল আকার একটি রক্ষাকালী মূর্তি গড়বেন। কথিত আছে, নৈহাটির বড় মায়ের পুজো ভবেশ চক্রবর্তী স্থাপন করেছিলেন। তাই, স্থানীয় বাসিন্দারা অনেকেই এই দেবীকে ভবেশ কালীও বলে থাকেন। ভবেশ চক্রবর্তী ও তাঁর বন্ধুরা মিলে প্রায় ২১ ফুট উচ্চতার একটি কালী মায়ের মূর্তি স্থাপন করেন। আকারে বিশালতার জন্য এই কালী মাকে এখানে বড় মা বলে ডাকা হয়। বঙ্গ সমাজের অনেকেই শনিঠাকুরকে বড় ঠাকুর বলে থাকেন। গ্রহের অধিপতি বলে তাঁকে অনেকেই বড়ঠাকুর বলে ডাকেন। ঠিক তেমনই ২১ ফুটের ওই কালী মায়ের মূর্তিকে তখনকার দিনে ১৪ হাত কালীমাতা বলেও অনেকে ডাকতেন।
নৈহাটিতে বড় মায়ের একটি স্থায়ী মন্দির রয়েছে। সেখানে নিয়মিত পুজো হয়। অতীতে যে জায়গায় রক্ষাকালী পুজো করা হত, সেখানেই প্রতিবছর বড় মাকে মৃন্ময়ী রূপে প্রতিষ্ঠা করা হয়। স্থানীয়দের মতে, এই পুজো সর্বজনীন হলেও কারও কাছ থেকে কখনও চাঁদা বা দক্ষিণা নেওয়া হয় না। দেবীর গায়ের গয়না থেকে ভোগ, পুজোর সামগ্রী সাধারণ ভক্তরা পুজোর সমস্ত খরচ করে থাকেন।
নৈহাটির বড়মায়ের গায়ে গয়না দেখে অনেকেই অবাক হয়ে যান। গোটা মূর্তিটাই সোনা-রুপোর বিভিন্ন আকারের গয়নায় মোড়া থাকে। শোনা যায়, বড় মা সোনা ও রুপো ছাড়া আর কোনও ধাতুর অলঙ্কার পরেন না। তাই, ভক্তরাই মনোবাসনা পূরণ করার জন্য বিভিন্ন সময় সোনা ও রুপোর গয়না মানত হিসেবে দিয়ে থাকেন। মন্দির কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, বড় মা প্রায় দেড় কোটি টাকার গয়না পরেন। প্রতিবছর কালীপুজোয় সেই গয়না পরিয়ে পুজো করা হয়। স্বর্ণালঙ্কারে সেজে ওঠেন বড়মা।
পুজোর দিন বড়মাকে ১০০ কেজির সোনার গহনা পরানো হয়। মন্দির চত্বরে থাকে কড়া নিরাপত্তা। রীতি অনুযায়ী, বড়মার পুজো শুরু না হলে নৈহাটির কোনও পুজো শুরু হয় না। একদিন নয়, টানা পাঁচদিন ধরে চলে বড়মার উপাসনা। বিসর্জনের দিন দেবীমূর্তিকে ফুলের সাজে সাজিয়ে বিশাল শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়। বড় মায়ের বিসর্জন না হওয়া পর্যন্ত নৈহাটির অন্য কোনও কালীমূর্তিকে বিসর্জনও করা যায় না। বড়মার বিসর্জন উপলক্ষে আলোর কার্নিভালেরও আয়োজন করা হয়।
মা বড় কালী পুজো সমিতি ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য অয়ন সাহা বলেন, 'চলতি বছর আমাদের পুজো ১০১তম বছরে পড়েছে। বড়মার পুজোকে অবলম্বন করে সারা বছর আমরা বিভিন্ন সামাজিক কাজ করে থাকি। শুধু রাজ্যের নয়, দেশ-বিদেশের বহু ভক্ত বড় মায়ের থানে পুজো দিতে আসেন। মানত করেন। আমরা বড়মাকে জাগ্রত কালী রূপেই বিশ্বাস করি।'