সোমড়া মা আনন্দময়ী মন্দিরের আদলে দক্ষিণেশ্বর মন্দির তৈরি করিয়েছিলেন রানী রাসমণি
Kali Puja: হুগলির জেলার সোমড়া বাজারে রয়েছে আনন্দময়ী মন্দির।

মিল্টন সেন,হুগলি: সময়টা ছিল ১১৭০ বঙ্গাব্দ। মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গীরের রাজত্বকালে মাঘ মাসের শুক্লা সপ্তমী তিথিতে সোমড়া বাজারে প্রতিষ্ঠা হয় মা আনন্দময়ীর। কথিত আছে, মা আনন্দময়ীর আরও দুই বোন রয়েছেন। তাঁরা হলেন নিস্তারিণী এবং হরসুন্দরী। সেই বোনদের মন্দির রয়েছে সোমড়া বাজার সংলগ্ন কয়েক কিলোমিটার এলাকার মধ্যেই।
আনন্দময়ী মায়ের প্রতিষ্ঠাতা জমিদার বীরেশ্বর মিত্র মুস্তাফি। তিনি ছিলেন নদীয়া জেলার উলাবীর নগরের মুস্তাফি বংশের। স্বপ্নাদেশ পেয়ে বীরেশ্বর বাবু কষ্ঠি পাথরের মায়ের মূর্তি স্থাপন করেন গঙ্গার ধারে। সম্পূর্ণ আড়ম্বরের সঙ্গেই সেদিন মূর্তি স্থাপন করে ছিলেন তিনি। আনন্দময়ীর সেই মূর্তিতে ছিল নানান বিশেষত্ব। মন্দিরে অধিষ্ঠিত দেবী, ভৈরবী।
পঞ্চমুণ্ডের আসনে মহাদেবের উপর অধিষ্ঠিতা। বিগ্রহের উচ্চতা প্রায় তিন ফুট। মন্দিরে মায়ের আদল আজও একেবারেই জগৎজননী স্বরূপ। মন্দিরের শুরুতেই রয়েছে পঞ্চরত্নের মন্দির। দুই পাশে মহাকাল পাহারায় ঘিরে রেখেছেন মা আনন্দময়ীকে। সম্পূর্ণ টেরাকোটার মন্দিরে আজও কালী পূজিত হন ভৈরবী হিসেবেই।
সমগ্র পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে এমন সুনিপুণ টেরাকোটার মন্দির হাতে গুণে পাঁচটি রয়েছে। তিনটি মন্দির রয়েছে বর্ধমান জেলার কালনায়। বাঁকুড়া জেলার সোনামুখীতে রয়েছে একটি মন্দির। আর হুগলির জেলার সোমড়া বাজারে রয়েছে আনন্দময়ী মন্দির। তবে প্রত্যেকটি মন্দিরের চূড়ায় রয়েছে পার্থক্য।
আনন্দময়ী মন্দির ২৫টি চূড়া বেষ্টিত। আজও এই মন্দির অনেক দূর থেকে দৃশ্যমান। মন্দির সংলগ্ন এলাকায় দুটি সারিতে ছয়টি করে ১২ টি মন্দির রয়েছে। এই মন্দিরের সঙ্গে অদ্ভুত ভাবে মিল রয়েছে দক্ষিণেশ্বর ভবতারিণী মন্দিরের। এই দুই মন্দিরের গঠন বেশ অনেকটাই এক রকম। জনশ্রুতি রয়েছে, ১৮৫০ সালে গঙ্গাবক্ষে বজরায় এই স্থানের পাশ দিয়েই কাশী যাত্রা করছিলেন রানী রাসমণি। তখন তাঁর নজর পরে এই মন্দিরে। তার পরেই ওই এলাকার জমিদারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে মন্দির দর্শন করেন রানী রাসমণি। ফিরে গিয়ে তিনি আনন্দময়ীর মন্দিরের আদলে নির্মাণ করেন দক্ষিণেশ্বরের মন্দির।
স্থানীয় কল্যান মন্ডল জানিয়েছেন, জাহাঙ্গীরের রাজত্বকালে এই মন্দির নির্মাণ হয়েছিল। প্রত্যেক মাঘী সপ্তমীতে মায়ের জন্মতিথি বেশ জাকজমক করেই পালন করা হয়। তাছাড়া প্রতি আমাবস্যাতেও মায়ের পূজো হয়। এই মন্দিরের যারা প্রতিষ্ঠা ছিলেন তারা প্রত্যেকেই ক্ষত্রিয় ছিলেন। তাই কোনও অন্ন ভোগ দেওয়া হয় না। এখানে পুজোয় থাকে লুচি ভোগ। সঙ্গে মিষ্টান্ন এবং সুজির হালুয়া। মন্দিরের সেবা ট্রাস্ট রয়েছে এবং তাদের নির্দেশেই গ্রামের কয়েকজন এই মন্দিরের দেখভাল করেন।
মন্দিরের বর্তমান সেবায়েত বিপরব মুখার্জি জানিয়েছেন, সচরাচর মহাদেবের উপর আসনে অধিষ্ঠিত দেবীর দেখা মেলে না। মন্দিরে প্রতিদিনের নিত্যসেবাতে কোনও ত্রুটি থাকেনা। সকাল সন্ধ্যা আরতি, মায়ের পূজার্চনায় নেই কোনও খামতি। তবে দীপান্বিতা কালিপুজোর দিন বিশেষ পুজো হয়ে থাকে। সকাল থেকেই চরম ব্যস্ততা থাকে মন্দির প্রাঙ্গণে।
ছবি পার্থ রাহা।