বাতাসে পুজোর গন্ধ, শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি ঢাকিপাড়ায়

আর মাত্র কয়েকটা দিন। দীর্ঘ এক বছরের অপেক্ষার অবসান প্রায় শেষের মুখে। উমা আসছেন সপরিবারে বাপের বাড়িতে। দুর্গাপুজো মানে ঢ্যাং কুড়াকুড় ঢাকের বাদ্যি আর ধুনুচি নাচ।

Durga Puja 2024 south 24 Pargana dhakipara last minute preparation gnr

আজকাল ওয়েবডেস্ক: আর মাত্র কয়েকটা দিন। দীর্ঘ এক বছরের অপেক্ষার অবসান প্রায় শেষের মুখে। উমা আসছেন সপরিবারে বাপের বাড়িতে। দুর্গাপুজো মানে ঢ্যাং কুড়াকুড় ঢাকের বাদ্যি আর ধুনুচি নাচ। এক বছর ধরে বাকিদের সঙ্গে পূজোর এই পাঁচটা দিনের অপেক্ষা করে থাকেন ঢাকি পাড়ার বাদ্যকাররা। প্রতীক্ষার শেষপর্বে এসে এবার নিজেদের বাদ্যযন্ত্র ঝালিয়ে নিচ্ছেন তাঁরা। 

ঢাকি পাড়াগুলিতে এখন চরম ব্যস্ততা। সারা বছর বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও পুজোর পাঁচটা দিন সব ছেড়ে কাঁধে ঢাক তুলে নেন তাঁরা। মণ্ডপে মণ্ডপে বাজানোর জন্য ডাক পড়ে তাঁদের। পরিবার পরিজন ছেড়ে লক্ষ্মীলাভের আশায় পাশের গ্রাম বা শহরতলীর সঙ্গে ভিন রাজ্যেও পাড়ি দেন তাঁরা। এবারও তাঁরা মুখিয়ে আছেন উৎসব কবে শুরু হবে? সেইসঙ্গে ঢাকের কাঠিতে ভর করে কবে হাতে আসবে 'লক্ষ্মী'? গ্রাম থেকে শহরে আসার জন্য তাই শুরু হয়ে গিয়েছে তাঁদের তোড়জোড়। তাঁদের ছাড়া উৎসব তো অসম্পূর্ণ। 

এখন তাই বাজনার তালে পুজো মাত করার জন্য জোর কদমে চলছে তাঁদের মহড়া। সারা রাজ্যের ঢাকিদের সঙ্গে ডায়মন্ড হারবারের হটুগঞ্জে রুইদাস পাড়াতে এখন ঢাকিদের নাওয়া খাওয়ার সময় নেই। সব ভুলে এখন তাঁরা ব্যস্ত তাদের বাদ্যযন্ত্র প্রস্তুত করে বাজনায় আরও ধার বাড়াতে। সকাল-বিকাল এই পাড়ায় ঢুকলেই শোনা যাবে ঢাক ও অন্যান্য বাদ্যযন্ত্রের আওয়াজ। 

 যার বাজনায় যত ধার তাঁর তত কদর এবং কদরের সঙ্গে সঙ্গে বাড়বে রোজগার। কারণ, বাজনার হাত ধরেই পুজোর সময় তাঁদের ঘরের লক্ষীর ভান্ডার ভরে ওঠে। সারাবছরের অর্থের খরা অনেকটাই দূর হয়। স্ত্রী-সন্তানের মুখে ফুটে ওঠে হাসি। ঢাকিরা বলছেন,পুজো প্রাঙ্গণে ঢাকের বোল জোরালো হোক। যাতে অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে শুভশক্তির জয়গানের বার্তা ছড়িয়ে পড়ে।

গোষ্ঠ রুইদাস নামে এক ঢাকির কথায়, 'সারা বছর আমরা চাষবাস এবং অন্যান্য কর্মক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও পুজোর এই পাঁচটা দিনের জন্য অপেক্ষা করে থাকি। ইতিমধ্যেই শহরতলীর বিভিন্ন দুর্গোৎসব কমিটির সদস্যরা এসে আমাদেরকে বায়না দিয়ে গিয়েছেন। আমরা এখন আমাদের বাদ্যযন্ত্র প্রস্তুতির কাজে লেগে পড়েছি। পরিবার ছেড়ে পুজোর পাঁচটা দিন দূরে থাকলেও ফিরে এসে পরিবারের সঙ্গে আনন্দ খুশিতে মেতে উঠি।' ভগীরথ রুইদাস নামে এক বাদ্যকার বলেন, 'পুজো এলেই আমাদের এই ঢাকি পাড়াতে প্রস্তুতি শুরু হয়। বাদ্যযন্ত্র প্রস্তুত করা থেকে মহড়া সমস্ত কিছুই চলে। এই পাড়াতে প্রায় ১০০ টি বাদ্যকার পরিবার রয়েছেন। সকলেই পূজোর পাঁচটা দিনের অপেক্ষায় বসে থাকেন। এখান থেকে বহু ঢাকির ভিন রাজ্যেও পাড়ি দেন পুজোর দিনে।' 

গ্রামের মাঠে কাশফুলের দোলা। বাতাসে পুজোর গন্ধ। ঢাকের বোলে গ্রাম থেকে শহর মাতাতে অপেক্ষায় ঢাকিপাড়ার বাদ্য কাররা।