'মুখোমুখি': বাগুইআটির অর্জুনপুর দুর্গোৎসবে প্রথম আত্মপ্রকাশ দিল্লির প্রবাসী বাঙালি শিল্পী শোভেন ভট্টাচার্যের

বাংলার শারদোৎসব বিশ্বের দরবারে স্থান করে নিয়েছে। ইউনেস্কো হেরিটেজ তকমা দিয়েছে বাংলার শারদোৎসবের মাতৃ আরাধনাকে। শুধু তাই নয়, বাংলার দুর্গোৎসব বিশ্বের সর্ববৃহৎ উৎসবের তকমাও পেয়েছে। যা বিশ্বের দরবারে এক বিরাট গৌরবময় অধ্যায়।

Durga Puja 2025 Arjunpur Durga Puja Theme Artist Came From Delhi
'অর্জুনপুর আমরা সবাই' দুর্গোৎসবের থিম- 'মুখোমুখি'

আজকাল ওয়েবডেস্ক: বাংলার শারদোৎসব বিশ্বের দরবারে স্থান করে নিয়েছে। ইউনেস্কো হেরিটেজ তকমা দিয়েছে বাংলার শারদোৎসবের মাতৃ আরাধনাকে। শুধু তাই নয়, বাংলার দুর্গোৎসব বিশ্বের সর্ববৃহৎ উৎসবের তকমাও পেয়েছে। যা বিশ্বের দরবারে এক বিরাট গৌরবময় অধ্যায়। 

সাবেকিয়ানা নাকি থিমের পুজো: 

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে থিমের পুজোকে কেন্দ্র করে কলকাতার শারদোৎসব বিশ্বের দরবারে এক অনন্য স্থান করে নিয়েছে। শহর কলকাতায় দুর্গোৎসবে সাবেকিয়ানা এবং থিমের পুজো পাশাপাশি টেক্কা দিয়ে চলেছে একে অপরকে। একদিকে যেমন ষোলো আনা সাবেকিয়ানায় মাতৃ আরাধনা, অন্যদিকে থিমের পুজোয় সমানতালে চলছে প্রতিযোগিতা। আর দুর্গোৎসবে সেই থিমের মণ্ডপ সজ্জা ও প্রতিমা সজ্জায় শিল্পীরা উজাড় করে ঢেলে সাজিয়ে চলেছেন। বলা যায় তাঁদের শিল্পের নিদর্শন রেখেছেন দেশ তথা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসে। 

এমনই এক প্রতিভার নিদর্শন দেখা গেছে বাগুইআটি 'অর্জুনপুর আমরা সবাই' ক্লাবের দুর্গোৎসবে। যাদের থিমের নাম 'মুখোমুখি'। দায়িত্বে শিল্পী শোভেন ভট্টাচার্য। শিল্পী শোভেন ভট্টাচার্য সুদূর দিল্লি থেকে এই প্রথম বাংলায় মণ্ডপ এবং প্রতিমা সজ্জায় নিজেকে নিমজ্জিত করেছেন। মূলত 'অর্জুনপুর আমরা সবাই' ক্লাবের অনুরোধেই তিনি বাংলায় এই প্রথম। বলা বাহুল্য জীবনে প্রথম দুর্গোৎসবে মণ্ডপ সজ্জায় যুক্ত হয়েছেন। 

উল্লেখযোগ্য বিষয়, বাংলায় তাঁর জীবনের প্রথম শারদ উৎসবে মাতৃ আরাধনায় নিজেকে উৎসর্গ করে তাঁর একাধিক অভিজ্ঞতার কথাও জানিয়েছেন। বাংলার একাধিক ভাল-মন্দের এক অসাধারণ অভিজ্ঞতার কথাও জানিয়েছেন শিল্পী নিজে। তবে তিনি ভালর অংশটাই বেশি করে প্রাধান্য দিয়েছেন শহর কলকাতায় এসে। শারদ উৎসবে নিজেকে সম্মিলিত করতে পেরে এবং মণ্ডপ সজ্জায় নিজেকে যুক্ত করতে পেরে নানা অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিয়েছেন। শিল্পীর কথায়, 'সত্যি শহর কলকাতা জানে শিল্পের মর্যাদা দিতে এবং শিল্পীর গুণ ও মান রাখতে।' তিনি আপ্লুত 'অর্জুনপুর আমরা সবাই' ক্লাবের শারদ উৎসবের এই মণ্ডপ সজ্জায় নিজেকে যুক্ত করতে পেরে। 'অর্জুনপুর আমরা সবাই ক্লাবে'র দুর্গোৎসবে মণ্ডপ সজ্জায় শোভেন ভট্টাচার্য হলেও, প্রতিমার শিল্পী শোভেন ভট্টাচার্যের সহধর্মিনী শম্পা ভট্টাচার্জ। বলাবাহুল্য স্বামী-স্ত্রীর যৌথভাবে অর্জুনপুরের দুর্গোৎসবে শিল্পী হিসাবে এই প্রথম আত্মপ্রকাশ।

'অর্জুনপুর আমরা সবাই' দুর্গোৎসবের থিম- 'মুখোমুখি':

এই পুজো মণ্ডপের থিম 'মুখোমুখি'। অর্থাৎ জীবনের প্রতিটা মুহূর্তকে মুখোমুখি অনুভব করা। একটা মানুষ আরেকটা মানুষের মুখোমুখি, একটা প্রজন্ম আর একটা প্রজন্মের মুখোমুখি, মানুষের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সমস্ত পরিস্থিতির মুখোমুখি। মুখোমুখি অর্থাৎ প্রতিটি মুহূর্তের মুখোমুখি ও অতীত বর্তমান ও ভবিষ্যত একে অপরের মুখোমুখি বলেই জানিয়েছেন শিল্পী শোভেন ভট্টাচার্য।

শিল্পীর পরিচয় এবং তাঁর শিল্পকলা: 

শিল্পী জানিয়েছেন, তিনি নিজে প্রথম থেকেই মণ্ডপ সজ্জা বা এ ধরনের কোনও কাজ করবেন বলে ভাবেননি। কিন্তু এবার এই ভাবনার কারণ, শিল্পকে চার দেওয়ালের মধ্যে আর আবদ্ধ করে না রেখে এবার প্রকাশ্যে আনার সময় হয়েছে। শিল্পের যে সৌন্দর্য এবং তার যে মান ও মূল্যবোধ তাকে মানুষের সামনে তুলে না ধরলে কোথাও যেন একটা অসম্পূর্ণতা থেকে যায়। তাই তিনি বাংলার ডাকে সাড়া দিয়ে জীবনে প্রথম শারদ উৎসবে পুজোর মণ্ডপসজ্জা এবং মাতৃ প্রতিমা সজ্জায় নিজের এই প্রথম আত্মপ্রকাশ। তিনি দিল্লিতে থাকলেও তাঁর শিল্পের প্রকৃত পরিচয় শহর কলকাতা দিয়েই শুরু করেছেন শারদ উৎসবের মধ্যে দিয়ে। একই সঙ্গে শহর কলকাতার অন্যান্য মণ্ডপ সাজসজ্জার শিল্পীদেরও ভূয়সী প্রশংসা করেছেন।

শিল্পী শোভেন ভট্টাচার্য আজকাল ডট ইন-এর মুখোমুখি হয়ে বলেন, 'আমি কোনওদিন ভাবতে পারিনি যে আমার শিল্পকলাকে এইভাবে প্রকাশ্যে নিয়ে আসতে পারব বা আনব। কারণ আমি নিজে হার্ডকোর কন্ট্রিবিউট আর্টিস্ট এবং আমার স্ত্রীও একজন শিল্পী। তাই কোনওদিন ভাবিনি এ ধরনের শিল্পে নিজেকে নিযুক্ত করব। তবে এখানে যে থিম বা শিল্প দেখছেন তা সম্পূর্ণ আমার চিন্তা ভাবনা, এবং আমাকে সহযোগিতা করেছে আমার স্ত্রী। এছাড়াও আমাদের একটা বিরাট টিম রয়েছে যারা প্রতিনিয়ত আমাদের সঙ্গে কাজ করে চলেছে।' 

তবে তিনি এই মণ্ডপ সজ্জা নিয়ে বিবরণ দিতে গিয়ে আরও বলেন, 'এখানে যে 'মুখোমুখি' থিম দেখতে পাচ্ছেন তা সবটাই প্রাকৃতিক এবং বাস্তব দিয়ে গড়া, এর মধ্যে কোনওটাই কৃত্রিমভাবে তৈরি নয় অর্থাৎ যে গাছ বা প্রকৃতির দৃশ্য সবটাই বাস্তবের মাটিতে দাঁড়িয়ে কৃত্রিমভাবে নয়। শুধুমাত্র প্যান্ডেল অর্থাৎ মণ্ডপ সজ্জা ও তার মধ্যে যে ব্যবহৃত ধাতব বস্তু রয়েছে সেগুলি ছাড়া সবটাই প্রাকৃতিক। কারণ 'মুখোমুখি' যে থিম আমার চিন্তাভাবনা তা বাস্তবের মাটিতে দাঁড়িয়ে সব কিছুর 'মুখোমুখি' তা গড়ে তুলতে গেলে সবকিছু কৃত্রিম দিয়ে তার প্রকৃত প্রকাশ সম্ভব নয়। আর আমি যখন এই জায়গাটার প্রথম দেখতে এসেছিলাম তখন এই পরিবেশ এবং গাছপালা দেখে এই থিমের কথাই মনে পড়ে, যার বাস্তব রূপ আমি দিতে পেরেছি এই পরিস্থিতি এবং পরিবেশের জন্য।'