কোথাও ঐতিহ্যের সাজ, কোথাও আধুনিকতার ছোঁয়া, ‘শারদ গৌরব’-এর সেরা পুজোর তালিকায় বেঙ্গালুরুর কোন কোন পুজো?

Durga Puja 2025: প্রথমবার আয়োজিত হতে চলেছে আজকাল ‘শারদ গৌরব’-এর আসর। এক নজরে দেখে নেওয়া যাক শহরের সেরা পুজোগুলির থিম।

Durga Puja 2025: Aajkaal Sharod Gourab contestants in Bengaluru

আজকাল ওয়েবডেস্ক: শুধু কলকাতা নয়, এখন বেঙ্গালুরুর দুর্গাপুজো মানেও থিমের ঘনঘটা। শহর জুড়ে ছড়িয়ে থাকা বারোয়ারি পুজোগুলি এ বারও তাঁদের ভাবনায় একে অপরকে টেক্কা দিতে প্রস্তুত। কোথাও সাবেকিয়ানার সঙ্গে মিশেছে আধুনিকতার ছোঁয়া, তো কোথাও আবার কর্ণাটকের লোকশিল্পের সঙ্গে বাংলার ঐতিহ্যের মেলবন্ধন ঘটছে। আর এই সব পুজোকে সম্মান জানাতে বেঙ্গালুরুতে হাজির আজকাল ডট ইন। প্রথমবার আয়োজিত হতে চলেছে আজকাল ‘শারদ গৌরব’-এর আসর। এক নজরে দেখে নেওয়া যাক শহরের সেরা পুজোগুলির থিম।

ত্রিনয়নী কালচারাল সমিতি: পাড়ার পুজো। অর্থাৎ এবছর এই পুজোয় বাঙালির অতিপ্রিয় ‘পাড়া কালচার’-এর উদযাপন দেখবে বেঙ্গালুরু।

আর টি নগর বেঙ্গলি সোশিও-কালচারাল ট্রাস্ট (পূর্বতন আর টি নগর সার্বজনীন দুর্গা পূজা সমিতি): এ বছর এই দুর্গাপুজোর ভাবনা শাশ্বত মুক্তির আকাঙ্ক্ষাকে কেন্দ্র করে আবর্তিত। মহিষাসুরকে পরাভূত করে মা দুর্গার বিজয় শুধুমাত্র অশুভ শক্তির উপর শুভ শক্তির জয়কেই চিহ্নিত করে না, ভয়, অবিচার এবং অন্ধকার থেকে মুক্তির এক চিরন্তন প্রতীক হিসাবেও তা প্রতিভাত হয়। এই মুক্তি আসলে অজ্ঞানতা থেকে জ্ঞানে, হতাশা থেকে আশায় এবং বন্ধন থেকে শক্তিতে উত্তরণের মূলমন্ত্র। দুর্গা যেমন জীবনে আলো নিয়ে আসেন, তেমনই এই বছরের ভাবনা সকলকে মনে করিয়ে দিতে চায় যে প্রকৃত মুক্তি কেবল রাজনৈতিক বা সামাজিক স্তরেই সীমাবদ্ধ নয়, তা এক গভীর আধ্যাত্মিক এবং ব্যক্তিগত উপলব্ধিও বটে।

দুর্গা পূজা কমিটি জাল্লাহাল্লি ইস্ট: এবছরের থিম ‘শক্তি’। এবছর মাতৃ আরাধনাকে সংজ্ঞায়িত করা যায় একটি বাক্যে - ‘শাশ্বতী জননী, শাশ্বত চেতনা।’

প্রবাসী অ্যাসোসিয়েশন: বেঙ্গালুরু প্রবাসী অ্যাসোসিয়েশনের এবারের বিষয়বস্তু গ্রামীণ বাংলা। ধন-ধান্য-পুষ্পে ভরা বাংলার প্রতিচ্ছবি উঠে আসবে এই পুজোর থিমে।


বঙ্গদল বেঙ্গালুরু: মণ্ডপের নাম দেওয়া হয়েছে পিকক রয়ালিটি। ময়ূরের মতো সাজে সজ্জিত এই মণ্ডপের মাধ্যমে সঞ্জয় লীলা বনসালীর সিনেমার রাজকীয় জাঁকজমককে জীবন্ত করে তুলে ধরা হবে। রাজকীয় নীল মখমল এবং হাতে বোনা কাপড়ে সজ্জিত এই মণ্ডপসজ্জা ভারতীয় শিল্পের শাশ্বত আভিজাত্যকে প্রতিফলিত করে। চলচ্চিত্রের রাজকীয় সেটের কথা মনে করিয়ে দেওয়ার মতো ঝাড়লণ্ঠন এবং হাতে বোনা কাপড়ের আস্তরণে মূল মণ্ডপটি সজ্জিত। 

হারমনি কালচারাল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন: এই সার্বজনীন দুর্গোৎসবের মেজাজ কলকাতার পুজোগুলির দ্বারা অনুপ্রাণিত। যেখানে ঐতিহ্যের সঙ্গে উৎসব মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। এই পুজোর ট্যাগলাইন, ফেস্টিভ্যাল অব টুগেদারনেস বা ‘একতার উৎসব’। প্রতিমা কৃষ্ণনগরের ঐতিহ্যবাহী ডাকের সাজে সজ্জিত। সামাজিক দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে, এ বছর ১৩ জন অনাথ বালিকা ষষ্ঠী থেকে এই পুজোয় অংশ নেবে।

স্বস্তিকা দুর্গোৎসব: বাড়ির পুজো

এসআরএস দুর্গোৎসব: ‘শক্তি: অন্তরের তেজ’ এই বিষয়বস্তু মাথায় রেখে এ বছর এসআরএস দুর্গোৎসব শক্তির শাশ্বত রূপকে উদযাপন করছে। দিব্য নারীশক্তি যা সাহস, সহনশীলতা এবং ঐকতানের প্রতীক। দুর্গার শক্তি কেবল অশুভকে বিনাশ করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং তা আমাদের সকলের মধ্যেকার অন্তর্নিহিত শক্তি, একতা এবং ইতিবাচকতাকে অনুপ্রাণিত করার মধ্যেও নিহিত। এই ভাবনাই উঠে আসবে এই পুজোতে।

বর্ষা বেঙ্গলি অ্যাসোসিয়েশন: ২০২৫ সালের মণ্ডপটির নামকরণ করা হয়েছে ‘চিত্রাঙ্গন’। মণ্ডপটি যক্ষগান (কর্ণাটকের ঐতিহ্যবাহী লোকনাট্য) দ্বারা অনুপ্রাণিত। ভারতের বর্ণময় লোককথার-ঐতিহ্যকে শ্রদ্ধার্ঘ্য জানাতেই এমন ভাবনা। বাংলার ছৌ মুখোশ, পটচিত্র এবং কর্ণাটকের দোল্লু কুনিথা ও যক্ষগানের শিল্পকলাকে তুলে ধরা হয়েছে। মণ্ডপটিতে কান্তারা চলচ্চিত্রের দৃশ্যকল্পও থাকবে।

এমজেআর হাইড্রা ই-সিটি দুর্গোৎসব সমিতি, এম-এইচইডিএস ব্যাঙ্গালোর: এবারের বিষয়বস্তু ঢাকের সাজ।


বঙ্গধারা কালচারাল অ্যাসোসিয়েশন: ‘দশভুজা’-র চেতনাকে ধারণ করে তৈরি হয়েছে বিষয়বস্তু। দুর্গার দশটি হাতকে শক্তি, সুরক্ষা এবং সম্মিলিত ক্ষমতায়নের প্রতীক হিসেবে সম্মান জানানো হয়েছে। এই দিব্য শক্তির প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য হিসেবে, পুজোর সমস্ত কার্যভার দশ জন মহিলা দ্বারা পরিচালিত হবে। 

দুর্গা পূজা কমিটি সানসিটি: অপারেশন সিঁদুর এবারের থিম। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রতাপকে তুলে ধরা হবে পুজোয়।


জিজিএলসিএ (গ্রিন গ্লেন লেআউট কালচারাল অ্যাসোসিয়েশন): জিজিএলসিএ আয়োজিত বেলান্দুরের দুর্গাপুজোর মূল ভাবনা নটরাজের ‘আনন্দ তাণ্ডব নৃত্য’। যা ঋগ্বেদের মহাজাগতিক তত্ত্ব এবং হিন্দু দর্শনের চক্রাকার প্রকৃতি থেকে অনুপ্রাণিত। প্রতিমাটিও নৃত্য-মুদ্রায় গড়া হয়েছে, যা সৃষ্টি, স্থিতি এবং লয়ের ভারসাম্যকে উদযাপন করে। মণ্ডপের মন্দির-সদৃশ নকশায় প্রাচীন দক্ষিণ ভারতীয় স্থাপত্যের মোটিফ ব্যবহার করা হয়েছে, যার পুরোটাই সমিতির সদস্যরা হাতে তৈরি করেছেন।

আরোহণ- আ সোশিও কালচারাল ফোরাম: দুর্গেশগড়ের দেবীদ্বার এবারের থিম।

দ্য বেঙ্গলি অ্যাসোসিয়েশন ব্যাঙ্গালোর: এই পুজোতে ফুটিয়ে তোলা হবে শোভাবাজার রাজবাড়ি। কলকাতার এই সাবেকি পুজোর স্বাদ এবার বেঙ্গালুরুতে পাবেন প্রবাসী বাঙালিরা।

সারথি সোশিও কালচারাল ট্রাস্ট: দুর্গা পুজো মানেই মহামানবের মিলনক্ষেত্র। বিবিধের মাঝে মিলনের এই সঙ্গীত নিয়েই এবারের বিষয়বস্তু ‘মিলে সুর মেরা তুমহারা’।

ইস্ট ব্যাঙ্গালোর কালচারাল অ্যাসোসিয়েশন (ইবিসিএ): পুজোর বিষয়বস্তু অনন্ত শক্তি। এখানে এবার নবরূপে নবদুর্গা পূজিত হবেন। দুর্গার ন'টি রূপ তথা জীবনের নয়টি ধারা।