সাবেকিয়ানা না থিম পুজো—আজকাল ডট ইন-এর ‘শারদ গৌরব’-এ সেরার সম্মান পাবে কে? ইঙ্গিত বিচারক দেবলীনা দত্তর
Sharod Gourab: বেঙ্গালুরুর বাঙালিদের পুজো আজ আর শুধু উৎসব নয়, হয়ে উঠেছে একতা ও আবেগের প্রতীক। এবার সেই আবেগকে সম্মান জানাচ্ছে আজকাল ডট ইন ‘শারদ গৌরব’। এই প্রথমবার আয়োজিত হতে চলেছে ‘শারদ গৌরব’-এর আসর। সেই প্রতিযোগিতায় বিচারকের ভূমিকা পালন করছেন অভিনেত্রী দেবলীনা দত্ত।

শুধু কলকাতা নয়, এখন বেঙ্গালুরুর দুর্গাপুজো মানেও থিমের ঘনঘটা। শহর জুড়ে ছড়িয়ে থাকা বারোয়ারি পুজোগুলি এ বারও তাঁদের ভাবনায় এক সময় বেনারস-গয়া থেকে ম্যাকল্যাক্সিগঞ্জ কিংবা দিল্লির চিত্তরঞ্জন পার্ক, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বাঙালির আস্তানা ছিল চোখে পড়ার মতো। এখন সেই তালিকায় যুক্ত হয়েছে দাক্ষিণাত্যের প্রাণ কেন্দ্র, তথা দেশের আইটি হাব বেঙ্গালুরু। আর যেখানে বাঙালি থাকবে সেখানে বাঙালির প্রাণের উৎসব দুর্গাপুজো থাকবে না তা কি হয়? শরৎ এলেই এই দক্ষিণের টেক-নগরী যেন পরিণত হয় মিনি-বাংলায়। ঢাকের তালে, আলোর ঝলকে, সুসজ্জিত প্রতিমায় অনুষ্ঠিত হয় দুর্গাপুজো। শুধু বাঙালি নয়, শহরের অন্যান্য সম্প্রদায়ের মানুষও আজ এই উৎসবের সমান অংশীদার।একে অপরকে টেক্কা দিতে প্রস্তুত। কোথাও সাবেকিয়ানার সঙ্গে মিশেছে আধুনিকতার ছোঁয়া, তো কোথাও আবার কর্ণাটকের লোকশিল্পের সঙ্গে বাংলার ঐতিহ্যের মেলবন্ধন ঘটছে। বেঙ্গালুরুর বাঙালিদের পুজো আজ আর শুধু উৎসব নয়, হয়ে উঠেছে একতা ও আবেগের প্রতীক। এবার সেই আবেগকে সম্মান জানাচ্ছে আজকাল ডট ইন ‘শারদ গৌরব’। এই প্রথমবার আয়োজিত হতে চলেছে ‘শারদ গৌরব’-এর আসর। সেই প্রতিযোগিতায় বিচারকের ভূমিকা পালন করছেন অভিনেত্রী দেবলীনা দত্ত।
এই বিষয়ে আজকাল ডট ইন-কে তিনি বললেন, “ আজকাল-এর সঙ্গে আমার সম্পর্ক বহু বছরের। আবার ব্যক্তিগতভাবে বেঙ্গালুরুর সঙ্গেও আমার একটা সম্পর্ক রয়েছে। এটা আমার বেঙ্গালুরুর পুজোতে প্রথমবার নয় কিন্তু। এর আগেও পুজোর সময় বেঙ্গালুরুর এক বাঙালি ক্লাবের নিমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে সেখানে গিয়েছিলাম। যাই হোক, সেখানকার পুজো দেখার অভিজ্ঞতা থেকে বুঝেছি, বেঙ্গালুরুর বাঙালিরা একটা পরিবারের মত থাকেন। ওখানকার পুজোগুলো ঠিক যেন আমাদের ছোটবেলায় দেখা পাড়ার পুজোর মত। কলকাতায় পাড়ার পুজো কনসেপ্টটা আজকাল অতটাও খুঁজে পাওয়া যায় না কিন্তু। বেঙ্গালুরুতে কিন্তু যায়, মানে একটা বাড়িতে পুজোর সমস্ত রান্না হচ্ছে, সবাই মিলে রান্না করছে, ছেলেমেয়েরা মণ্ডপের বাইরে বসে আড্ডা মারছে, হাসাহাসি করছে...এই যে ঘরোয়া পরিবেশের বিষয়টা, এটা ওখানে দেখা যায় স্পষ্ট। আর ব্যাপারটা আমারও ভীষণ পছন্দের।”
অভিনেত্রী আরও বলেন, “বেঙ্গালুরুর বাঙালিরা কিন্তু কলকাতাকে বড্ড মিস করেন। শুধু পুজোর সময়টুকুই নয়, সারা বছরই। তিনবার পুজোর সময় বেঙ্গালুরুতে পুজোর অনুষ্ঠানে গিয়ে এটা বুঝেছি। তবে এই দুঃখ যেন মাথা ছাড়িয়ে না যায়, সেইজন্য সবাই মিলে হইহই করে, সমস্তটুকু দিয়ে এই পুজোয় এগিয়ে আসেন, মেতে ওঠেন এই ক'টা দিন। তাঁরা একটা ছোট্ট কলকাতা তৈরি করার চেষ্টা করেন বেঙ্গালুরুতে। অর্থাৎ পুজোর সময়ে যাঁরা কলকাতায় আসতে পারছেন না, তাঁরা যেন কলকাতার পুজোর স্বাদটুকু ওখানে যতটা সম্ভব পান, সেই চেষ্টাই ওঁরা সবাই মিলে করেন। খুব কলকাতার কথা বলেন, জানতে চান। কলকাতাবাসীদের কথা জানতে চান। মানে, বাঙালিয়ানায় ভরপুর। ”
আর এই শারদ গৌরবের বিচারক হিসেবে কীভাবে প্রতিটি বিভাগে নম্বর দেবেন দেবলীনা? কোন কোন বিষয়গুলো তাঁর নজর কাড়বে আগে? অভিনেত্রীর জবাব, “সত্যি বলছি, খুব কঠিন কাজ। খুবই গুরুদায়িত্ব। আসলে, প্রতিটি পুজোর ব্যবস্থাপকের তো নিজেদের সবটুকু উজাড় করে দেন, তাই সেখান থেকে বাছাই করে সেরাদের বের করে আনাটা...বুঝতেই পারছেন কতটা কঠিন। দশটি পুজো মণ্ডপের মধ্যে এই প্রতিযোগিতা, সেখান থেকে সেরা পাঁচ বাছাই আবার তার থেকে প্রথম তিনজন, সত্যিই কঠিন। থিম পুজো ভাল লাগলেও আমি কিন্তু বাঙালিয়ানার খোঁজেই থাকব। তবে, থিম পুজোর সঙ্গে প্রাসঙ্গিকতা জড়িয়ে থাকলে তা আমার হৃদয় ছুঁয়ে যায়। বলতে চাইছি, এমন সদ্য ঘটা কোনও বিষয় যা আমাদের মাথায় রয়ে গিয়েছে, সেরকম কিছু যদি থিমে ছোঁয়া থাকে, তাহলে তা আমাকে ভাবায়। কিন্তু হ্যাঁ, পুজোর ক্ষেত্রে সাবেকিয়ানার কোনও বিকল্প নেই। সাবেকিয়ানা বাঙালিয়ানার প্রতি অদ্ভুত একটা টান আছে আমার।”
কথাশেষে দেবলীনা হাসতে হাসতে জানান, বেঙ্গালুরুতে মণ্ডপ ঘুরে ঘুরে দেখার পাশাপাশি চুটিয়ে স্ট্রিট ফুড খাবেন তিনি। পুজোর চারদিনই ডায়েটকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে পেটপুরে সেখানকার হরেক কিসিমের লোভনীয় স্ট্রীট ফুড খাবেন তিনি।
এইভাবেই কলকাতার সুবাস ছড়িয়ে পড়ছে হাজার কিলোমিটার দূরে বেঙ্গালুরুর প্যান্ডেল-প্রাঙ্গণে। দেবলীনাকে পাশে পেয়ে এবার আরও জমজমাট দক্ষিণের শারদ উৎসব।