দুর্গাপুজোর প্যান্ডেলে জীবন প্রবাহের নকশা, আহিরিটোলা সর্বজনীন দুর্গোৎসবের ৮৬তম বর্ষে নতুন চমক 'প্রবাহ'-তে

Durga Puja 2025 know about Ahiritola Sarbojanin Durgotsab 2025

আজকাল ওয়েবডেস্ক:  বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব মানেই দুর্গোৎসব, আর এই দুর্গোৎসব ঘিরে সর্বধর্ম সমন্বয়ে মানুষের মেলবন্ধন সারা দেশ তথা বিশ্ব জুড়ে। আর মা দুর্গা, শক্তি রূপে এবং একই সঙ্গে মাতৃ রূপে পূজিত হন, তাই বলা হয় 'শক্তিরূপেণ সংস্থিতা, মাতৃরূপেণ সংস্থিতা'। 

পুজোর আমেজের মাঝেই কি মনে আসে না, এই প্রকৃতির রহস্য বোঝা সত্যি দুরূহ ব্যাপার? আর এই প্রকৃতিতে মানুষ-সহ প্রাণীসমাজ প্রত্যেকেই বৈচিত্রময় প্রবাহের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়। কার খেয়ালে ডানা ঝাপটায় পাখি? সিংহশিশুটি কীভাবে খেলতে খেলতে শিকার ধরতে শেখে? কোন মন্ত্রবলে রুখাশুখা পাথুরে জমিতেও সবুজ পাতা মেলে উঠে দাঁড়ায় একলা চারাগাছ? যেন এই বিপুল পৃথিবী, মহাকাশ, ছায়াপথের আঁকেবাঁকে, সভ্যতার জন্মলগ্নে, জীবজগতের সমাজের ভেতরে নিহিত বিভিন্ন সম্পর্কের বৈচিত্র্যের মধ্যেও যেন একই সত্য প্রবাহমান। যে প্রবাহ তারা খুঁজে পেয়েছেন, জঙ্গলের বাস্ততন্ত্রে, প্রাণীর রেচনতন্ত্রে, মানবসভ্যতার গণতন্ত্রে। 

 মানুষের চৈতন্যে, তন্ত্র সাধনার মূল-ধারাতেও এই সত্যকে খুঁজে পাওয়া যাবে যা সাধ্য সাধনার মধ্যে দিয়ে প্রবাহ, আর শরীর সেখানে আধার। যে শরীরের চক্রকে জাগিয়ে তুলে মহাজ্ঞানে পৌঁছতে চান সাধক। বিশ্বনাথে লীন হলেই মোক্ষলাভ, মুক্তি। কুণ্ডলিনীর এই গমনেও মিলবে এক বৃত্তাকার প্রবাহ। 

কেন এবছরের থিমের ভাবনা 'প্রবাহ'?

যে প্রবাহে পাখির ডানার ঝাপটা সঞ্চারিত হয় উড়োজাহাজের সত্যে। যে জ্ঞানকে, যে সত্যকে ছোঁয়ার চেষ্টা করেন পঞ্চদশ শতাব্দীর এক ইতালীয় শিল্পী। জীবজগতের এই সত্যই প্রবাহিত হচ্ছে জড়ের মধ্যে, যন্ত্রের মধ্যে। যন্ত্র থেকে মন্ত্রে, মন্ত্র থেকে তন্ত্রে বয়ে চলেছে এক আবহমান ধারা। সেই আবহমান ধারাকে বুঝতে চেয়েই এই আহিরীটোলা সর্বজনীনের পুজো-ভাবনা। বলাবাহুল্য তারা মূলত প্রকৃতি-মানবের সত্যকে মেলাতে চেষ্টা করেছেন, চেষ্টা করেছেন প্রতিটি বিন্দুকে। আর তাই ৮৬ তম দুর্গোৎসবের মন্ডপ ভাবনা―'প্রবাহ'।

আহিরীটোলা সর্বজনীন দুর্গোৎসব এবছর ৮৬ বছরে পা দিল। এবারের থিমের নাম রাখা হয়েছে 'প্রবাহ'। এই বিপুল পৃথিবী, মহাকাশে, সভ্যতার জন্মলগ্নে, জীবজগতে, মানব-সমাজে যেন একটাই সত্য প্রবাহিত হয়ে চলেছে। যে সত্যে ভর করে পাখির ডানা থেকে মানুষ খুঁজে পাচ্ছে উড়োজাহাজের ভাবনা। যন্ত্র, মন্ত্র ও তন্ত্রের মধ্যেই সেই দর্শনকেই তারা খুঁজতে চেয়েছেন। তন্ত্রকে দু’ভাবে দেখা হয়েছে। ভারতীয় তন্ত্রসাধনার পাশপাশি তন্ত্র মানুষের কাছে ‘অন্তর্ব্যবস্থা’ অর্থাৎ ভিতরের সিস্টেম। যে ব্যবস্থাও একটি নির্দিষ্ট উদ্দেশের দিকে ধাবিত হচ্ছে। দেশকালের সীমানা ভেঙে যাচ্ছে। এই অনন্ত দর্শন ঘিরেই শিল্পী অনির্বাণ দাস আহিরীটোলা দুর্গাপূজা মণ্ডপ সাজিয়ে তুলছেন, এমনটাই জানিয়েছেন পুজো কমিটি কর্তৃপক্ষ। 

 আহিরীটোলা সার্বজনীন দুর্গোৎসব পুজো কমিটির মুখপাত্র প্রীতম ঘোষ তাঁদের পূজো নিয়ে বলেন, 'মানুষ একটি ইকোসিস্টেমের মধ্যে দিয়ে প্রতিনিয়ত প্রবাহিত হয়ে চলেছে। আর সেই ইকোসিস্টেম নিয়ে অর্থাৎ এই ইকো সিস্টেমের মধ্যে দিয়ে মানুষের যে চৈতন্য ও পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের প্রভাব তন্ত্রসাধনার মধ্যে দিয়ে যে যে মূল ধারা, তার প্রতিফলন এই পুজোর মধ্যে দিয়ে আমরা দেখতে পাবো। তন্ত্রসাধনার যে মূল ধারা সেই সত্যকে আমরা এখানে খুঁজে পাব। সাধ্য সাধনার মধ্যে দিয়ে যে প্রবাহ, শরীর যেখানে আধার, সেই শরীরের চক্রকে জাগিয়ে তুলে মহাজ্ঞানে পৌঁছতে চাইছেন সাধক।'

তিনি আরও বলেন, 'আমাদের শরীরে বা প্রাণী সমাজে যে ইকোসিস্টেম বা প্রবাহ তা সম্পূর্ণটাই চালনা করছেন দশভূজা মা দুর্গা। তাই এই 'যন্ত্র মন্ত্র তন্ত্রে'র মধ্যে চিরন্তন সত্য যা বারবার ফিরে আসছে আমাদের ভাবনায়, এবং একই সাথে ভারত যে তন্ত্র সাধনার বিপুল ভান্ডার ও ইকো সিস্টেমের যে অনন্তধারা কিংবা আবহমান ধারাকেই আমরা ফুটিয়ে তুলব আমাদের এই ৮৬ তম বর্ষে আহিরীটোলা সার্বজনীন দুর্গোৎসবের মাতৃ আরাধনার মধ্যে দিয়ে।'