ষোলো আনা সাবেকিয়ানায় পরিপূর্ণ একডালিয়া এভারগ্রিন, এবারেও পুজোতে একগুচ্ছ আকর্ষণ!

একডালিয়া এভারগ্রিন দুর্গাপুজো। নামটা শুনলেই মনে হয় সাবেকিয়ানায় পরিপূর্ণ। আর বাস্তবেও তাই। ষোলো আনা সাবেকিয়ানায় পরিপূর্ণ শহর কলকাতায় দুর্গোৎসবের আরেক নাম একডালিয়া এভারগ্রিন। যার বয়স ৮৩ বছর। যারা শারদ উৎসবের মাতৃ বন্দনায় থিমের পূজায় বিশ্বাসী নন, বিশ্বাসী ষোলো আনা সাবেকিয়ানায়। আর যেই পুজোর ধারক ও বাহক সেই ১৯৭১ সাল থেকে প্রয়াত প্রাক্তন মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়।

Durga Puja 2025 South Kolkata Ekdalia Evergreen Durga Puja Preperation
একডালিয়া এভারগ্রিন দুর্গাপুজো। নিজস্ব চিত্র।

আজকাল ওয়েবডেস্ক: একডালিয়া এভারগ্রিন দুর্গাপুজো। নামটা শুনলেই মনে হয় সাবেকিয়ানায় পরিপূর্ণ। আর বাস্তবেও তাই। ষোলো আনা সাবেকিয়ানায় পরিপূর্ণ শহর কলকাতায় দুর্গোৎসবের আরেক নাম একডালিয়া এভারগ্রিন। যার বয়স ৮৩ বছর। যারা শারদ উৎসবের মাতৃ বন্দনায় থিমের পূজায় বিশ্বাসী নন, বিশ্বাসী ষোলো আনা সাবেকিয়ানায়। আর যেই পুজোর ধারক ও বাহক সেই ১৯৭১ সাল থেকে প্রয়াত প্রাক্তন মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। 

২০২১ সালে প্রয়াত হয়েছেন তিনি। কিন্তু রীতিনীতি এবং সাবেকিয়ানা কিঞ্চিত মাত্র পরিবর্তন হয়নি ৮৩ তম বর্ষে দাঁড়িয়েও। আর তাইতো সাধারণ মানুষের আবেগ উচ্ছ্বাস এই পুজো ঘিরে রেখেছে সীমাহীন। আর সেই সাবেকিয়ানার ছোঁয়ায় আবেগঘন চিত্তে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি বিগত ১৪ বছর ধরে উদ্বোধন করে আসছেন, যার বদল হচ্ছে না এই বছরেও। 

বলাবাহুল্য, সেই সবেকিয়ানার ধারা বজায় রাখতে একডালিয়া এভারগ্রিন পূজা কমিটি কোনওরকম থিমের পুজোকে প্রাধান্য না দিয়ে অন্যান্য বারের মতো এই বছরেও মাতৃ বন্দনায় রেখেছেন সাবেকিয়ানার ছোঁয়া। আর সেই সাবেকিয়ানার এই ধারা বজায় রাখতে প্রত্যেক বছরই তাঁরা দেশের প্রাচীনতম মন্দিরের আদলে দুর্গা মণ্ডপ সজ্জিত করে থাকেন এবং মাকে অধিষ্ঠান করা হয় সেই মন্দিরের আদলে। 

এই মণ্ডপ সজ্জায় পূর্বেও দেখা গেছে রামেশ্বরম মন্দিরের আদল কিংবা মীনাক্ষী মন্দিরের আদল। আর এই বছর ২০২৫ এ দাঁড়িয়ে তার কোনও পরিবর্তন হয়নি বলেই দাবি পূজা কমিটির কর্মকর্তাদের। কারণ বর্তমান বছরেও অন্যবারের মতো এবারের মণ্ডপসজ্জা ভারতের প্রাচীন ইতিহাসকে স্মৃতিচারণ করে। মূলত গত বছর ২০২৪ সালে মণ্ডপ সজ্জিত হয়েছিল পুরীর জগন্নাথ দেবের মন্দিরের আদলে। আর এই বছর ২০২৫ সালে দক্ষিণের তিরুপতি মন্দিরের নিচে অরুণাচল পাহাড়ে শিবের মন্দিরের আদলে তৈরি হচ্ছে এ বছরের মণ্ডপ নির্মাণ।

প্রাক স্বাধীনতা একডালিয়া এভারগ্রিন-এর মাতৃ বন্দনায় আনাচে-কানাচে রয়েছে ইতিহাস। ৮৩ বছরে এই দুর্গোৎসব যা শহর কলকাতা আর পাঁচটি প্রাচীন পুজোর মধ্যে একটি। যা বহন করছে শহর কলকাতা দুর্গোৎসবের একাধিক স্মৃতি। দক্ষিণ কলকাতার এই পুজো মণ্ডপ শহরের বহু কিছুর সাক্ষী হয়ে রয়েছে। বহন করছে বহু সুমধুর স্মৃতি। আর এই মাতৃ আরাধনার দর্শন করতে এবং সাবেকিয়ানার ছোঁয়াকে অনুভব করতে যেমন ছুটে আসেন দূর-দূরান্ত থেকে সাধারণ মানুষ, তেমনি খ্যাতনামা ব্যক্তিদেরও আনাগোনা এই মণ্ডপে নেহাত কম নয়। এই পুজো কমিটির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, একডালিয়া এভারগ্রিনের মাতৃ বন্দনার স্বাদ গ্রহণ করতে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ছাড়াও স্বয়ং রাজ্যপাল, প্রধান বিচারপতি, রাষ্ট্রদূতরা পর্যন্ত এখানে উপস্থিত থাকেন।

একডালিয়া এভারগ্রিন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, ২০২১ সালে সুব্রত মুখার্জি প্রয়াত হবার পর থেকে বিগত চার বছর ধরে তাঁরা খুঁটিপুজো সুব্রত মুখার্জির জন্মদিনটাতেই করে আসছেন। অন্যান্য পুজো মণ্ডপগুলি যেমন খুঁটি পুজো করেন রথযাত্রা বা রাখি বন্ধন কিংবা গুরু পূর্ণিমার মত বিশেষ শুভদিনে, কিন্তু তাঁরা সুব্রত মুখার্জিকে স্মরণে রেখে তাঁর জন্মদিনে খুঁটি পুজো সম্পন্ন করেন, তাঁর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন ও স্মৃতিচারণের উদ্দেশ্যে।

আজকাল ডট ইনের মুখোমুখি হয়ে এই পুজো কমিটির সাধারণ সম্পাদক স্বপন মহাপাত্র বলেন, "এবার আমাদের দুর্গাপুজো ৮৩ বছরে পা দিল। আর তাই এবারের পুজোর বিশেষ আকর্ষণ আজমীর শরিফ থেকে আসা ঝাড়লন্ঠন দুইটি। মূল মণ্ডপের উপরে যে ঝাড় লন্ঠন অন্যবারের মতো এবারও থাকছে অসাধারণ মানুষের কাছে অত্যাধিক আকর্ষণ, কিন্তু সেটা ছাড়াও আরও একটি ঝাড় লন্ঠন থাকছে প্রবেশদ্বারে যার দৈর্ঘ্য ২৮ ফুট। যা ততধিক আকর্ষণীয় এবং পুরো প্রবেশদ্বার থাকবে সেই ঝাড় লন্ঠনের মধ্যে দিয়ে। এবং একই সঙ্গে থাকছে চন্দননগরের নজরকাড়া আলোকসজ্জা। অন্যবারের তুলনায় আরও বেশি আকর্ষণীয়। এছাড়াও থাকছে মাতৃ প্রতিমার পিছনে যে চালচিত্র যা শহর কলকাতায় অন্যতম নজরকাড়া। পুরনো রাজবাড়ির যে কারুকার্য রয়েছে, সেই কারুকার্যকেই ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করা হয়েছে এই চালচিত্রের মধ্যে। আশা করা যায় যা আগামী বছর থেকে শহর কলকাতার অন্যান্য মণ্ডপে দেখা যাবে।" 

সাধারণ সম্পাদক স্বপন মহাপাত্র আরও বলেন, "এছাড়াও অন্যান্যবারের মত দুঃস্থ মানুষদের শাড়ি, কম্বল, মশারি ইত্যাদি বিতরণ করা হবে ভারত সেবাশ্রমের মধ্যে দিয়ে এবং মায়ের ভোগ বিতরণ করা হবে। অর্থাৎ আমরা চেষ্টা করেছি প্রত্যেকবারের মতো এবারও আমাদের পুজোয় ষোলো আনা সাবেকিয়ানাকে বজায় রাখতে।"