চিলেকোঠার চুপকথা, থিম ভাবনায় এবার চমকে দিয়েছে পাতিপুকুর আদি সর্বজনীন, দেখলেন তো?

পুজো মণ্ডপে ঢুকলেই উস্কে উঠেছে বাঙালির স্মৃতি।

Theme of the Patipukur Adi Sarbojonin Durga Puja Committee in 2025 is Chilekothar Chupkatha
আজকাল ওয়েবডেস্ক: থিমের চমক, সেই সঙ্গে ভরপুর সাবেকিয়ানা। পুজো মণ্ডপে ঢুকলেই উস্কে উঠেছে বাঙালির স্মৃতি। ৯১তম বর্ষে এবার পাতিপুকুর আদি সর্বজনীন দুর্গা পুজোর থিম ছিল 'চিলেকোঠার চুপকথা'। কালের নিয়মে পাঁচ মহলা বাড়ি ভেঙে তৈরি হচ্ছে ফ্ল্যাট বাড়ি। বাঙালি এখন তাতেই অভ্যস্ত। কিন্তু, বাংলার অতীত তেমনটা নয়। কলকাতা-সহ সমগ্র বঙ্গজুড়ে ছিল ছোট, বড় সব অট্টালিকা। বেশিরভাগ বাড়িতেই ছাদের উপর ছিল চিলেকোঠার ঘর। নির্জনে সেই ঘরই হয়ে উঠত বাড়ির সদস্যদের কাছে ভালবাসার জায়গা। ভাগলাগা, ভালসবাসার সূচনাও হত চিলেকোঠার ঘর থেকেই। কিশোর থেকে যৌবনে উত্তরণের সেতু রচনা হল এই ঘরে। তবে, এখন সেসব ঘর অতীত। যেকটা রয়েছে, সেগুলিও যেন চুপ করে তাদের সোনালী অতীতকে হাতরাচ্ছে। বাঙালিকে স্মৃতিমেদুর করে তুলতেই তাই এবার পাতিপুকুর আদি সর্বজনীন দুর্গা পুজোর থিম ছিল 'চিলেকোঠার চুপকথা'।
 
মণ্ডপে প্রবেশের সময়েই মনে হয়েছে দর্শক যেন কোনও রাজবাড়ির ছাদে এসেছেন। সেখানেই রয়েছে চিলেকোঠা। সেই চিলেকোঠাতেই মাতৃবন্দনা চলছে সাড়ম্বরে। বাড়ির অব্যবহৃত হাঁড়ি, কলসি থেকে শুরু করে ট্রাঙ্ক সবকিছুই রাখা থাকতো এই চিলেকোঠার ঘরে। এই রাজবাড়িতেও তার অন্যথা হয়নি। মায়ের মূর্তির কাছে রয়েছে রাজবাড়ির সদস্যের অব্যবহৃত সেইসব জিনিস। 
 
থিমের সঙ্গে সাযুজ্য রেখেই তৈরি হয়েছিল দুর্গামূর্তি। একচালার সাবেকি প্রতিমা এখানে। কিন্তু তাতেও ছিল অভিনবত্বের ছোঁয়া। মা ও তাঁর ছেলে-মেয়েদের 
পোশাকে রয়েছে চিলেকোঠার স্পর্শ।
 
পাতিপুকুর আদি সর্বজনীন দুর্গা পুজোর সহসম্পাদক রাহুল সেনের কথায়, "বাঙালির জীবনে চিলেকোঠার ঘর ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিশোর থেকে যৌবনে উত্তরণের অপরিহার্য অঙ্গ ছিল এই ছাদের এককোণার ঘরগুলি। আগে বাঙালি যুবক লুকিয়ে প্রথম সিগারেটে সুখটান দিত চিলেকোঠায় বসেই। প্রেমের কবিতা পড়া বা প্রেমিকাকে নিয়ে গল্পের আসরও জমতো সেখানে। কিন্তু, এখন সেসব বাড়িও নেই, চিলেকোঠাও উধাও হয়ে গিয়েছে। ফলে বাঙালির ছোটবেলার এই দিকটা এখনকার কিশোর-কিশোরীদের কাছে অজানা হয়ে রয়ে গিয়েছে। এখনকার প্রজন্মকে তাই অতীতের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতেই আমাদের এবারের থিম ভাবনা চিলেকোঠার চুপকথা।"
 
পুজো কমিটির সম্পাদক ত্রীনাথ দাস বলেন, "থিমের মোড়কে সাবেকিয়ানা ধরে রাখার চেষ্টা করা হয়েছে। আমরা চেষ্টা করি থিমের মধ্যে দিয়ে যাতে কোনও বার্তা সমাজের কাছে পৌঁছে দেওয়া যায়।"