জীবন্ত কালী পুজো — মির্জাপুরে বাড়ির বড় বউই হন দেবী কালী!

গলায় রক্তজবার মালা, কপালে রক্তচন্দনের তিলক—এই সাজেই দেবী আসনে বসেন তিনি, আর পরিবারের সদস্যরা ও গ্রামবাসীরা তাঁকেই জীবন্ত শ্যামা মা বলে পুজো করেন।

Santra family of Bankura worship their family member as Goddess Kali
জীবন্ত শ্যামা মা

আজকাল ওয়েবডেস্ক: বাঁকুড়া জেলার ইন্দাস থানার মির্জাপুর গ্রামে দীপান্বিতা অমাবস্যায় দেখা যায় এক অনন্য পুজো প্রথা। এখানকার সাঁতরা পরিবারের বাড়ির বড় বউ-ই পূজিতা হন দেবী কালী রূপে। গলায় রক্তজবার মালা, কপালে রক্তচন্দনের তিলক—এই সাজেই দেবী আসনে বসেন তিনি, আর পরিবারের সদস্যরা ও গ্রামবাসীরা তাঁকেই জীবন্ত শ্যামা মা বলে পুজো করেন।

এই পুজো প্রথার ইতিহাস প্রায় ১২৫ বছরেরও পুরনো। সাঁতরা পরিবার সূত্রে জানা যায়, তাঁদের এক পূর্বপুরুষ স্বপ্নাদেশে সোনা বা অষ্টধাতুর কালী মূর্তি স্থাপনের নির্দেশ পান। কিন্তু আর্থিক কারণে তা সম্ভব না হওয়ায়, সেই থেকেই পরিবারের বড় বৌকে দেবী রূপে পূজা করার প্রচলন শুরু হয়। সেই প্রথাই আজও সমান শ্রদ্ধা ও বিশ্বাসে টিকে রয়েছে। বর্তমানে এই বাড়ির মা কালী হিসেবে পূজিতা হন হীরালালা সাঁতরা। গত প্রায় ৪০ বছর ধরে তিনি দেবীর রূপে আরাধ্য হয়ে আসছেন। তাঁর মেয়ে প্রীতিকণা সাঁতরা বলেন, 'আমাদের পারিবারিক এই প্রথা বহু প্রাচীন। আমার মা প্রায় ৪০ বছর ধরে মা কালী হিসেবে পূজিতা হচ্ছেন। পরিবারের সবাই এই সময় বাড়িতে উপস্থিত থাকেন। কারণ এটি আমাদের জন্য বিশ্বাস ও ভক্তির উৎসব।' 

হীরালালা সাঁতরার জামাই তথা রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী শ্যামল সাঁতরাও বলেন, 'এই পূজা দেবীর স্বপ্নাদেশ থেকেই শুরু হয়েছিল। প্রথম দিকে মূর্তি পূজা হত, পরে দেবীর আসনে পরিবারের বড় বৌমাকে বসিয়েই পুজো করার রীতি চালু হয়।'

ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণের মতোই, যিনি ফলহারিণী কালীপুজোর দিন মা সারদাদেবীকে ষোড়শী রূপে পুজো করেছিলেন, সেই ঘটনার প্রতিচ্ছবি যেন আজও জীবন্ত হয়ে ওঠে মির্জাপুরের এই সাঁতরা বাড়িতে। এখানে দেবী দূরে নন, সংসারের মধ্যেই জীবন্ত রূপে আরাধ্যা।