একমাত্র কালী পুজোর দিনই রুদ্র মূর্তি থাকে হংসেশ্বরী মায়ের

বছরে এক দিনই জিভ দেখা যায় মা হংসেশ্বরীর। কালী পুজোর দিন রুদ্র রূপে পুজো হয় মন্দিরে। সেই দিন হাজার হাজার ভক্তের ঢল নামে বাঁশবেড়িয়ার মন্দিরে। এই মন্দিরে পুজোর বৈশিষ্ট্য নজিরবিহীন।

kalipuja celebrated on hansweswari temple in bansberia

মিল্টন সেন

বছরে এক দিনই জিভ দেখা যায় মা হংসেশ্বরীর। কালী পুজোর দিন রুদ্র রূপে পুজো হয় মন্দিরে। সেই দিন হাজার হাজার ভক্তের ঢল নামে বাঁশবেড়িয়ার মন্দিরে। এই মন্দিরে পুজোর বৈশিষ্ট্য নজিরবিহীন। সারা বছর পুজো হয় শান্তরূপে দক্ষিণাকালী হংসেশ্বরীর। কালীপুজোর দিন দেবী হংসেশ্বরী রুদ্র রূপ ধারণ করেন। এদিন সকালেই মুখে রুপোর মুখোশ, সোনার জিভ এবং মাথায় সোনার মুকুট পড়ানো হয়। রাজবেশে রুদ্র রূপ ধারণ করে দেবী হংসেশ্বরী। অমাবস্যা শুরুর সঙ্গে শুরু হয় পুজো। আবার পুজো শেষ হওয়ার পর রাজবেশ খুলে ফেলা হয়। মন্দিরে দেবী আবার শান্তরূপ ধারণ করেন।


বর্তমানে যেখানে হংসেশ্বরী মন্দির রয়েছে তার পাশেই রয়েছে রাধা গোবিন্দ মন্দির। এ ছাড়া গোটা মন্দির ঘিরে রয়েছে একাধিক শিবলিঙ্গ। মন্দিরের ঠিক পেছনেই রয়েছে দরজা। খুললেই দেখা মিলবে সিঁড়ির। যেটা এঁকেবেঁকে উঠে গেছে মন্দিরের চূড়ায়। সেখানে ঠিক হংসেশ্বরী মায়ের উপরেই রয়েছে একটি সাদা এবং একটি কালো দুটি শিবলিঙ্গ। মন্দির ঘিরে রয়েছে খারি। সংলগ্ন এলাকায় রাজ পরিবারের বাড়ির কিছু অবশিষ্ট অংশ আজও নজরে পরে। একমাত্র কালী পুজোর দিনই রুদ্র মূর্তি ধারণ হংসেশ্বরী মায়ের নজরে পরে। মন্দিরের ইতিহাস থেকে জানা যায়, রাজা নৃসিংহ দেব রায় ১৮০১ সালে এই মন্দির তৈরির কাজ শুরু করেন। মন্দির তৈরির কাজ শেষ হতে প্রায় ১৪ বছর সময় লেগে যায়। তারপর রাজা সেই মন্দিরে মা হংসেশ্বরীর মূর্তি প্রতিষ্ঠা করেন। প্রথম অবস্থায় বেনারস থেকে গঙ্গায় ভেসে আসা নিম কাঠের গুড়ি দিয়ে মূর্তি তৈরির কাজ শুরু হয়। মূর্তিতে কোনও জোড়া ছাড়াই গোটা নিম কাট কেটে তৈরি করা হয় মূর্তি। বছরে দুটো বড় উৎসব হয় হংসেশ্বরী মন্দিরে। কালীপুজো এবং স্নান যাত্রা। সাধারণত বছরের অন্যান্য সময়ে সকাল সাতটায় মন্দির খোলে। রাত দশটায় পুজো শুরু হয়। ভোগ নিবেদন করা হয়। দুপুরে কুপন কেটে ভোগ নিতে পারেন ভক্তরা। হংসেশ্বরী মন্দির হেরিটেজ সম্পত্তি। বর্তমানে আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার তত্বাবধানে রয়েছে মন্দির।

মন্দিরের সেবাইত বসন্ত চ্যাটার্জি জানিয়েছেন, বছরে এক রাতের জন্য রুদ্রমূর্তি ধারণ করেন মা।কালী পুজোর দিন সন্ধ্যা আরতির পর তাকে রাজবেশ পরানো হয়। রুপোর মুখোশ ও সোনার জিভ পড়ানো হয়। গায়ে কোনও বস্ত্র থাকে না। গোটা মূর্তি ফুলমালা দিয়ে ঢাকা থাকে। মায়ের চুল থাকে এলোমেলো। পুজো শেষে ভোর চারটে নাগাদ সেই সব সাজ আবার খুলে ফেলা হয়। দেবী মূর্তিতে শান্ত রূপে ফিরে আসে। কালীপুজোয় সারাদিন ভক্তের ঢল নামে হংসেশ্বরী মন্দিরে। লাইন দিয়ে পুজো দেন ভক্তরা। বিশেষ করে রাতে পুজোর সময় মন্দির এবং সংলগ্ন চত্বরে অগণিত ভক্তের সমাগম হয়।