রুদ্ররূপে ডাকাত রুখেছিলেন কালী, এই পুজোয় সামিল হয়েছিলেন স্বয়ং নজরুল
Kali Puja:জনশ্রুতি, ভক্তদের উপর অত্যাচার দেখে দেবী সহ্য করতে পারেননি। রুদ্ররূপ ধারণ করেন।

আজকাল ওয়েবডেস্ক: প্রায় ২০০ বছর আগের কথা। ঘন জামের জঙ্গল। গভীরতা এতটাই তীব্র দিনের বেলায় যেখানে সূর্যের আলো ঢুকতে পারত না। পশ্চিম বর্ধমানের এই জায়গাতেই গড়ে ওঠে কাঁকসার জামবন গ্রাম। বসতি স্থাপন হতে দেখে বাড়ে ডাকাতদের উপদ্রব। উৎপাতে আতঙ্কিত হয়ে গ্রাম ছাড়তে থাকে একের পর এক পরিবার। কথিত আছে, সেইসময় গ্রামের বাগদি পরিবারের এক মহিলা কমলা বাগদি স্বপ্নাদেশ পেয়ে তালপাতার ছাউনি করে কালীকে 'বড়মা' রূপে পুজো করেন। কালীপুজোর রাতে যখন পূজা চলছিল তখনই আচমকা একটি ডাকাত দল গ্রামে লুঠপাট চালাতে আসে।
জনশ্রুতি, ভক্তদের উপর অত্যাচার দেখে দেবী সহ্য করতে পারেননি। রুদ্ররূপ ধারণ করেন। ঝড়ের মাধ্যমে তিনি তাণ্ডব দেখান। সেই তাণ্ডব সহ্য করতে না পেরে এলাকা ছাড়ে ডাকাতরা। ঘটনার পর গ্রামবাসীরা বিশ্বাস করতে থাকেন বসবাসের জন্য দেবী তাঁদের অভয় দিলেন। গড়ে ওঠে রাঙামাটি আর মাটির ছাউনি দেওয়া একের পর এক ঘর। কয়েকবছর কমলা বাগদি পূজা পরিচালনার পর গ্রামের মানুষরা পুজো পরিচালনার দায়িত্ব নেন।
সেইসময় সাধক কবি নীলকন্ঠ মুখোপাধ্যায় ওই গ্রামে গিয়ে বড় মায়ের পঞ্চমুণ্ডি আসনে বসে তন্ত্র সাধনা শুরু করেন। গ্রামে এসেছিলেন ছোট্ট নজরুল। তিনিও বিভোর হয়েছিলেন মাতৃ আরাধনায়। ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে পাকাপোক্ত মন্দির। আজও অমলিন পুজো। ভাটা পড়েনি এতটুকু। পুজোয় হয় যাত্রা-সহ নানা অনুষ্ঠান। কয়েকশো মানুষের জন্য আয়োজন থাকে খিচুড়ি ভোগের। হয় যাত্রা ও অন্যান্য অনুষ্ঠান। পুজো পরিচালন কমিটির অন্যতম সদস্য সুদেব রায় বলেন, 'আমরা শুনেছি আমাদের গ্রামে নিয়মিত সঙ্গীত চর্চা করতে আসতেন রাঢ় বঙ্গের সাধক কবি নীলকন্ঠ মুখোপাধ্যায়। তিনি বড় মায়ের পঞ্চমুণ্ডি আসনে বসেছিলেন। বেশ কয়েকবার কালীপূজায় এসেছেন কবি নজরুল ইসলাম। পূজার পরের দিন প্রতিমা নিরঞ্জন করতে হয়। আজও নিরঞ্জনের সময় প্রচণ্ড ঝড় আসে। সেইসময় এলাকার জমিদার ছিলেন বীরভূমের বোলপুরের বাতিকারের ষষ্ঠীচরণ চট্টোপাধ্যায়। আজও তাঁর নামে সংকল্প হয়। ভক্তদের সকল মনোবাঞ্ছা পূর্ণ করেন মা।'