ব্যাঘ্র রূপে পূজিত হন দোহালিয়ার মা দক্ষিণা কালী

মুর্শিদাবাদ জেলার কান্দি শহরের অদূরেই অবস্থিত দোহালিয়া কালী মন্দির। এই মন্দিরের রহস্যময় ইতিহাস আজও ঘুরে বেড়ায় এলাকাবাসীর মুখে মুখে।

Dakshina Kali is worshiped as a tiger Idol in Kandi temple in Murshidabad

আজকাল ওয়েবডেস্ক: মুর্শিদাবাদ জেলার কান্দি শহরের অদূরেই অবস্থিত দোহালিয়া কালী মন্দির। এই মন্দিরের রহস্যময় ইতিহাস আজও ঘুরে বেড়ায় এলাকাবাসীর মুখে মুখে। শোনা যায়, প্রায় এক হাজার বছর আগে রাজা লক্ষণ সেন, বল্লাল সেনের আমলে দোহালিয়া কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। সেই সময় ওই অঞ্চল সম্পূর্ণ জঙ্গলে ঘেরা ছিল। লোকমুখে প্রচলিত, সেন রাজাদের রাজত্বকালে কোনও এক পরিব্রাজক সন্ন্যাসী নাগাল্যান্ড থেকে নদীপথে যাওয়ার সময় কান্দির দোহালিয়া এলাকায় বসে তপস্যা করেছিলেন। তখন জঙ্গলের বিভিন্ন জীবজন্তু তাঁর তপস্যা ভঙ্গের অনেক চেষ্টা করে।

অবশেষে সেই পরিব্রাজক সন্ন্যাসীর যখন তপস্যা ভাঙে, তিনি তাঁর সামনে ব্যাঘ্র আকৃতির দক্ষিণা কালীকে দেখতে পান। সেই সঙ্গে তাঁর নজরে আসে ব্যাঘ্র আকৃতির দক্ষিণা কালীর শিলা মূর্তি। তাই সেই সময় থেকে আজও ব্যাঘ্র আকৃতির মা কালীর মূর্তি দোহালিয়া দক্ষিণা কালী রূপে পুজিত হয়। লোকমুখে প্রচলিত, ওই সন্ন্যাসী একদিন মন্দিরের পাশের কানা ময়ূরাক্ষী নদী থেকে স্নান করে ফেরার সময় অন্ধ হয়ে যান। তখন তিনি আবার তপস্যা শুরু করেন। দীর্ঘদিন অন্ধ অবস্থায় তপস্যা করার পর তিনি মা কালীর দর্শন পান এবং তারপরেই ফিরে পান দৃষ্টি।

সেই সঙ্গে মা দক্ষিণা কালী পরিব্রাজক সন্ন্যাসীকে বর প্রদান করতে চাইলে তিনি কিছুই নেননি। লোকমুখে শোনা যায়, পরিব্রাজকের কথায় মা কালী তুষ্ট হয়ে তাঁকে বর প্রদান করে বলেন- মন্দিরের পেছনের ‘ভোগ পুকুরে’ কোনও অন্ধ ব্যক্তি যদি স্নান করে মায়ের পুজো করেন তাহলেই তাঁর অন্ধত্ব দূর হবে। এই অলৌকিক ঘটনাকে মেনে এখনও ওই পবিত্র পুকুরে স্নান করার প্রথা প্রচলিত। জানা যায়, একবার ওই ভোগ পুকুরের জল সম্পূর্ণ তুলে ফেলার চেষ্টা করায় পুকুরের মাটি ফেটে গিয়েছিল।

গ্রামবাসীরা মনে করেন, দোহালিয়া দক্ষিণা কালী পুকুরের জল তোলার চেষ্টা করায় রুষ্ট হয়েছিলেন। তারপর থেকেই ভোগ পুকুরে জল কখনই তোলার চেষ্টা করা হয়নি। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বর্তমানে মন্দির এবং সংলগ্ন এলাকায় আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে। কিন্তু প্রাচীন রীতিনীতি মেনে আজও দোহালিয়া দক্ষিণা কালীর মন্দিরে দীপান্বিতা অমাবস্যায় পুজো করা হয় ব্যাঘ্র আকৃতির দেবী প্রতিমাকে। সেই সময় দূরদূরান্তের ভক্ত সমাগমে মুখরিত হয়ে ওঠে মন্দির চত্বর।