ডাকাতির উদ্দেশ্যে মা সারদাকে আটকেছিল রঘু ডাকাত-গগন ডাকাত, আজও বিখ্যাত সিঙ্গুরের 'ডাকাত কালী'
Kali Puja: কথিত আছে, অসুস্থ শ্রী রামকৃষ্ণ কে দেখতে মা সারদা কামারপুকুর থেকে দক্ষিণেশ্বর যাওয়ার পথে রঘু ডাকাত ও গগন ডাকাত তাঁর পথ আটকে দাঁড়ায়।
মিল্টন সেন,হুগলি: আজও বিখ্যাত সিঙ্গুরের ডাকাত কালী। জানা যায়, একদা রঘু ডাকাত ও গগন ডাকাত পথ আটকে ছিল সারদা মায়ের। প্রায় ৫৫০ বছরের সিঙ্গুরের ডাকাত কালীমন্দির ঘিরে রয়েছে নানান ইতিহাস।
বহু প্রাচীন এই ডাকাত কালী মন্দিরের অবস্থান বৈদ্যবাটি তারকেশ্বর রোড সংলগ্ন পুরুষোত্তমপুর এলাকায়। কথিত আছে, অসুস্থ শ্রী রামকৃষ্ণ কে দেখতে মা সারদা কামারপুকুর থেকে দক্ষিণেশ্বর যাওয়ার পথে রঘু ডাকাত ও গগন ডাকাত তাঁর পথ আটকে দাঁড়ায়। উদ্দেশ্য ছিল ডাকাতির। ওই দুজন সারদা মাকে টেনে যখন জঙ্গলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টাও করে। ঠিক তখনই রক্তচক্ষু মা কালীর দেখা পায় ডাকাত দল। ভুল বুঝতে পারে। মা সারদার কাছে ক্ষমা চায়। সন্ধে নামায় সেই রাতেই ডাকাতদের আস্থানায় মা সারদাকে থাকার ব্যবস্থা করে ডাকাতরাই। ডাকাতরা মা সারদা কে রাতে খেতে দেয় চাল আর কলাই ভাজা। পরের দিন সকালে ডাকাতরা মা সারদার দক্ষিণেশ্বরের দিয়ে আসে। তার পর থেকে ওই ডাকাত দল ডাকাতি ছেড়ে দেয়৷
সেই প্রাচীন প্রথা আজও অনুসরণ করা হয়। এখনও কালী পুজোর দিনে পুজোর প্রথম নৈবেদ্য প্রসাদ হিসাবে চাল কলাই ভাজা দেওয়া হয়। এছাড়াও থাকে লুচি ভোগ, ফল দেওয়া হয়। কালী পুজোর দিন চার প্রহর, চারবার পুজো হয়। পাশাপাশি হয় ছাগবলি। ইতিহাস অনুযায়ী, এই এলাকার পাশেই ছিল সরস্বতী নদী। জনমানব শূন্য ঘন জঙ্গলে ভরা গোটা এলাকায় ছিল ডাকাতদের মাটির কুড়ে ঘর। আর সেখানেই ডাকাতরা ডাকাতি করতে যাওয়ার আগে মা কালীর ঘট পুজো করতো। প্রচলন ছিল নরবলির।
পরে বর্ধমানের রাজার দান করা জমিতে সিঙ্গুরে গ্রামের মোড়লরা এই মন্দিরটি তৈরি করে মূর্তি প্রতিষ্ঠা করেন। প্রাক প্রথা ছিল, কালীপুজোর দিন আগে মোড়লদের পুজো দেবেন। তার পর অন্য ভক্তদের পুজো নেওয়া হবে। পুরুষোত্তমপুর গ্রামে এই ডাকাত কালীমন্দির থাকার কারণে সংলগ্ন মল্লিকপুর, জামিনবেড়িয়া গ্রাম বা বাড়োয়ারীতে আজও হয় না কোনও কালীপুজো। এমন কী কোনও বাড়ির দেওয়ালে টাঙানো থাকে না ক্যালেন্ডারে থাকা কালীর ছবি।
এই মা কালী এতটাই জাগ্রত যে, আজও এই কালি প্রতিমার পুজো ছারা অন্য কোনও কালী প্রতিমার পুজো করতে সাহস যুগিয়ে উঠতে পারেন না এলাকার সাধারণ মানুষ। বছরে একবার ঘটের জল পাল্টানো হয়। আর সেটা হয় কালীপুজোর দিন শুদ্রদের আনা গঙ্গা জল দিয়ে। মন্দিরের দরজা বন্ধ করে ঘাটের জল পাল্টানো হয়। আর বিশেষ সেই মুহূর্তে কোনও মহিলা মন্দিরের ভিতর প্রবেশ করতে পারে না। বহু প্রাচীন সেই প্রথা আজও অবিচল।
ছবি পার্থ রাহা।