গায়ক

আদিত্যকে দেখেই কান-মাথা জ্বলে গেল শ্রীমন্তির। নিজের এই হচ্ছে, তাহলে মা দেখলে কী বলবে! রক গানের প্যাশনটাপর্যন্ত ঠিক ছিল, কিন্তু মিডলক্লাস ফ্যামিলিতে রকস্টার মার্কা চেহারাটাও বানিয়ে ফেলা ঠিক কাজের কথা নয়। অথচ এই বছর সাড়ে তিনে যতটুকু চিনেছে, তাতে জানতে পেরেছে আদিত্য পড়াশোনায় বেশ ভাল ছিল, দেখতে বেশ অ্যাট্রাক্টিভ, শক্তপোক্ত চেহারা, অ্যাকাউন্টসে অনার্স করে সরকারি পরীক্ষা দিয়ে একটা কলেজে ক্লার্কের চাকরিওজুটিয়ে ফেলেছে ছাব্বিশ বছর বয়সে।

গায়ক

মানস সরকার


আদিত্যকে দেখেই কান-মাথা জ্বলে গেল শ্রীমন্তির। নিজের এই হচ্ছে, তাহলে মা দেখলে কী বলবে! রক গানের প্যাশনটাপর্যন্ত ঠিক ছিল, কিন্তু মিডলক্লাস ফ্যামিলিতে রকস্টার মার্কা চেহারাটাও বানিয়ে ফেলা ঠিক কাজের কথা নয়। অথচ এই বছর সাড়ে তিনে যতটুকু চিনেছে, তাতে জানতে পেরেছে আদিত্য পড়াশোনায় বেশ ভাল ছিল, দেখতে বেশ অ্যাট্রাক্টিভ, শক্তপোক্ত চেহারা, অ্যাকাউন্টসে অনার্স করে সরকারি পরীক্ষা দিয়ে একটা কলেজে ক্লার্কের চাকরিওজুটিয়ে ফেলেছে ছাব্বিশ বছর বয়সে। চাকরি পাবার এক বছর আগে পর্যন্ত গান-বাজনার ব্যাপারটা টুকটাক ছিল ওর মধ্যে। চাকরি পেতেই চর্চাটা মারাত্মক রেটে বাড়িয়ে দেয়। ফলও মিলেছে। পরপর শো। তারপর হঠাৎ করেই টিভির নামী চ্যানেলে বেশ জনপ্রিয় একটা রিয়ালিটি শোয়ে চান্স পেয়ে দু-তিনটে এপিসোডে গিয়ে চালচলন বদলে গেছে। পরের এপিসোডেগাওয়ার আগে কয়েকদিনের ব্রেক পেয়ে বাড়ি ফিরেছে। 
এই ক্যাফেটায় ওরা দু’জন এই সাড়ে তিন বছরে অনেক বারই এসেছে। ক্যাফের ম্যানেজার থেকে সার্ভিস সবাই প্রায় চেনে। 
চেয়ার টেনে বসতেই দু’একজন আদিত্যকে গভীরভাবে লক্ষ করার চেষ্টা করল। এবং শ্রীমন্তি নিশ্চিত, তারা প্রথম দফায় তাদের চেনা মানুষটাকে চিনে উঠতে পারেনি। এক বছর আগেও যে ছেলের চোখে চশমা, ব্যাকব্রাশ চুল, ওয়েল শেভড ফেস, তার আজ লম্বা পনিটেল, বাঁ-কানে দুল, গালে ভারতীয় ক্রিকেট মার্কা দাড়ি, চোখে কনট্যাক্ট লেন্স, হাতে নানা রকম বাঁধা কার, টিশার্টে হনুমান ব্র্যান্ড ছবি আর ক্যাপশন—চোয়াল চিপে নিজেকে শান্ত করল শ্রীমন্তি। আজকের যুগে সবাই স্টার। সবারই ফলোয়ার। দুটো এপিসোডে টিভিতে মুখ দেখিয়ে যদি কেউ আগমার্কা ইমেজ তৈরির চেষ্টা করে, তার চেয়ে হাস্যকর কিছু হয় না। আফটার অল বিবাহীত জীবনে বাঙালি এখনও টিপিক্যাল মধ্যবিত্ত। আর কে তার বাইরে বেরোতে পেরেছে জানে না শ্রীমন্তি। কিন্তু নিজে দিল্লি কোর্সের এই শহরের একটা পাবলিক স্কুলে হিস্ট্রির লো প্যাকেজ মাইনের টিচার হয়ে অন্য কিছু ভাবতে পারেনি। নিজের শালোয়ার ডান কাঁধের আর একটু উপরে তুলে আদিত্যকে প্রশ্ন করল,‘এই অ্যাপিয়ারেন্সে তুমি মায়ের সঙ্গে দেখা করবে?’
বাঁ হাতের আঙুল দিয়ে ডানহাতের বুড়ো আঙুলের একটা হাঙরের হাঁ গোছের আংটি ঘোরাতে ঘোরাতে আদিত্য ঠোঁটের কোণে খৈনি মার্কা হাসি দিল,‘হোয়াট দ্য ফা.... আই মিন হেল, প্রব্লেম কী এতে! এখন পাবলিক আমাকে এভাবে দেখতেই অভ্যস্ত।’ 
‘দ্যাখো আমার মায়ের সঙ্গে দেখা করা আর ফেসবুকে রিলস বানানো ব্যাপারটা কিন্তু এক নয়।’ 
‘ফেসবুক আর ইনস্টায় আমার ফলোয়ার শেষ এক মাসে কী পরিমাণে বেড়েছে জানো! তোমার মা’কে আমার গুরুত্বটা বুঝতে হবে। মানুষ চিনছে আমাকে একজন সংস্টার হিসাবে। ইমেজটা রাখার ব্যাপার আছে।’
‘প্লিজ আদি, এইসব কথা মায়ের সামনে ভুলেও বলতে যেও না। ধুয়ে দেবে।’ 
‘কী দেবে!’
‘ধু.... মা এইসব ব্যাপার-স্যাপার একদম পছন্দ করে না। আর তোমার এই ব্যাপারগুলো ছিল না। তুমি তো জানতে মায়ের সঙ্গে এ বারেই দেখা করার ব্যাপারটা ছিল। আমাদের বিয়েটা---।’
বার্গার আর কফি এসে একটানা কথায় বাগড়া দিয়েছে। তাকিয়ে দেখল একবার ট্রে’র দিকে শ্রীমন্তি। কাপে তো কফিই মনে হচ্ছে। কাউন্টারে এটাকেই আদিত্য আবার ‘মোকা’ না ‘মোচা’ কী যেন বলল।
বার্গারে হালকা কামড় দিয়ে আদিত্য হালকা করে টিস্যু বুলিয়ে নিল ঠোঁটে। লক্ষ করল শ্রীমন্তি, আগের মতো পরপর কামড় বসালো না।
‘বিয়েটা নিয়ে তো ওনার আপত্তি থাকার কথাই নয় আর। আগে আপত্তি থাকলেও থাকতে পারত।’ 
‘ঠিক উল্টো। আগে হলেই বরং আপত্তিটা থাকত না।’
‘ওঃ! কাম অন! এখন তো আমার প্রোফাইল অনেক বেশি হাই।’
‘শোনো, আমার মা প্রোফাইল বোঝেনা। স্টেবিলিটি বোঝে। কোনও গায়কের সঙ্গে মা বিয়ে দেবে না।’
‘কিন্তু তোমাকে তো এবার এক গায়ককেই বিয়ে করতে হবে। কারণ এই রিয়্যালিটি শো প্লাটফর্মে চ্যাম্পিয়ন হবার পরই আমি চাকরি ছেড়ে গানকেই পার্মানেন্ট করব।’
বার্গারটা খেতে গিয়েও নামিয়ে রাখল শ্রীমন্তি। বেফালতু গলায় আটকে যেত। হাঁ হয়েই গেছে অবশ্য। কোন পৃথিবীতে পৌঁছে গেছে গান গাইতে গিয়ে আদিত্য!
শ্রীমন্তির বাবা মারা গেছে, যখন ওর ক্লাস সেভেন। বাবা ছিল রেশনিং অফিসে। মাবাবার চাকরিটা পেয়ে যায়। বড় হবার ফাঁকে বুঝতে পেরেছে, সে চাকরিতে নানা রকম প্রলোভন কাজ করত। কিন্তু মা সে সবে বিন্দুমাত্র পাত্তা না দিয়ে দাপটের সঙ্গে চাকরি করেছে। ওকে পড়াশোনা শিখিয়ে বড় করেছে একাই। কিছুর অভাব যেমন হতে দেয়নি, তেমনি প্রয়োজনীয় জিনিস ওকে দিতে গিয়ে স্পয়েল্ট চাইল্ডও বানায়নি।ছাত্রী হিসেবে শ্রীমন্তি আহামরি না হলেও পড়াশোনায় খারাপও ছিল না। নেহাত এই সময়ে চাকরি নিয়ে খুব ডামাডোল চলছে, না হলে টার্গেট ছিল সরকারি কোনও স্কুলের চাকরি। অন্য কিছুর অপেক্ষায় বসে না থেকে নিজের শহরেরই একটা স্ট্যান্ডার্ড ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে ইন্টারভিউ দিয়ে পেয়ে গেছে। কলেজে কারোর সঙ্গে রিলেশন-টিলেশন করে উঠতে পারেনি শ্রীমন্তি। আদিত্যর সঙ্গে আলাপ চার বছর আগে অনামিকার বিয়ের রিসেপশনে। তারপর মাস ছয়েক পরে রিলেশনে ইন। প্রথম প্রথম মা’কে কিছুই জানায়নি শ্রীমন্তি।আদর্শবান, কড়া পার্সোনালিটির মায়ের সামনে ব্যাপক গুটিয়ে থাকে ও। আদিত্য কলেজে ক্লার্ক হিসাবে জয়েন করে পার্মানেন্ট হলে সাহসটা সামান্য বেড়েছিল। এর মধ্যে সরকারি স্কুল সার্ভিসের পরীক্ষা দিয়ে দিয়ে কোনও উপায় না দেখে ভাল প্রাইভেট স্কুলটায় নিজের চাকরি। মর্জি-মেজাজ বুঝে মা’কে আদিত্যর ব্যাপারে অ্যাপ্রোচও করে। প্রথমে গান-টানের ব্যাপারে শুনে মায়ের ব্যাপক ভ্রু কুঁচকে গেছিল। কলেজের চাকরিটা শুনে দেখা করতে রাজি হয়েছে। সাফ জানিয়ে দিয়েছিল,‘কোনও গায়কের সঙ্গে তোমার বিয়েতে আমার মত নেই। অবশ্য তুমি চাইলে....।’
শ্রীমন্তির চাওয়ার কোনও ব্যাপারই নেই। সে ছোটবেলা থেকে নিজের মা’কে অভ্রান্ত জেনেছে। সাহসের তো প্রশ্নই ওঠে না। মনে হয়েছিল, গানটা শখে থাকলে সমস্যা হওয়ার কথা নয়। কিন্তু এই আদিত্যটা যদি এখন নিজের বিরল, সুপ্ত প্রতিভার কদর দিতে গিয়ে নিজের চাকরি ছাড়ে, তবে আদিত্যকে ছাড়তে হবে ওকে। ভিন্ন কোনও রাস্তা নেই। 
অন্যদিকে আদিত্য অনেকটাই এই ধরনের বাঁধন থেকে আলগা। বাবা-মা দুজনেই কেন্দ্রীয় সরকারের বড় চাকুরে। সচ্ছল অবস্থা। একমাত্র ছেলেকে ছোটবেলা থেকে ফ্রি-হ্যান্ড দিয়েছেন নিজের ব্যাপারে স্বাধীন সিদ্ধান্ত নেবার ব্যাপারে। একবারই একা গেছিল আদিত্যর জন্মদিনে বছর খানেক আগে। এলাহি ব্যবস্থা ছিল। হবু শ্বশুর শাশুড়ির ন্যাকামো প্রচুর থাকলেও আপন করে নেওয়া কিছু অনুভব করেনি। সে ব্যাপারে আদিত্যর সঙ্গে কোনও আলোচনাও করেনি। কারণ বিয়েটা হয়ে গেলে ওর বাবা-মা ছেলে-বউ-এর জন্য এই শহরেরই এক দামি বহুতলেথ্রি-বি-এইচ-কে’র ঝাঁ ঝকঝকে ফ্ল্যাট রেখে দিয়েছেন কিনে। এত কথা আবার নিজের মা’কে বলতে পারেনি। মনে হয়েছে, আদর্শ মেনে চলা মায়ের ব্যাপারটা ঠিকঠাক নাও লাগতে পারে। মোকাতে ঘনঘন দু-তিনবার চুমুক দিয়ে চকলেটের স্বাদটা সারা মুখে চারিয়ে দিয়ে শ্রীমন্তি বলল, ‘তুমি চাকরি ছেড়ে দেবে!’ 
‘প্ল্যান তো তাই।’
‘তুমি আমাকে বিয়ে করবে না?’
‘যাঃ বাবা! চাকরি ছাড়ার সঙ্গে বিয়ের কোনও সম্পর্ক নেই। বরং চাকরি ছেড়ে আরও ধুমধাম করে, আরও নিশ্চিন্ত মনে বিয়ে করতে পারব, ডান হাতের দু’টো আঙ্গুল ভি ভঙ্গিমা করে নীচের দিকে রাখল আদিত্য,‘ইও, কুল।’
‘অ্যাই আদি, মাথা গরম হচ্ছে কিন্তু। আমাদের বিয়ের মধ্যে তোমার এই র্যাুপ সং ঢোকাবে না।’ 
‘ওকে জান। কুল।’
‘কু’ টা ‘কিউ’-এর মত এমন করে উচ্চারণ করল আদিত্য, শ্রীমন্তির মনে ‘কু’ গাইল কেউ। বলল,‘মা তোমার সঙ্গে দেখা করতে রাজি হয়েছে। কথা বলতে চায়।’
‘আবার দেখা করার কী আছে।সব তো কথা হয়ে গেল।’
‘চ্যাংরামির কথা ছেড়ে দেখা করো।’
‘কী আবার বলবেন উনি!’
‘আশ্চর্য! আমি কী করে জানব। আমাকে কিছু বলে!’ 
‘কবে করতে হবে।’
‘কাল বিকেলে।’ 
গলায় ঝোলানো ব্লু-টুথের একটা কানে দিয়ে আদিত্য বলল,‘ওকে। বিকেল পাঁচটায় আসছি তোমার বাড়িতে।’
# # #
সকালে ঘুম ভাঙা থেকেই বুকের মধ্যে গুড়গুড় শুরু শ্রীমন্তির। আজ রিয়ালিটি শোয়ের নেক্সট পর্বে আদিত্যর গান আছে। শুটিংটা দুদিন আগেই শেষ হয়েছে। কিন্তু আদিত্যকে ফোনে কনট্যাক্ট করা যাচ্ছে না। বলেছিল অবশ্য, খুবই ব্যস্ত হয়ে পড়বে। কারণ নেক্সট এপিসোডে নাকি ক্লাসিক গাইতে হবে। কলেজে আগাম ছুটি নিয়েছিল। কিন্তু এরপর প্রতিযোগিতা এগোলে আর ছুটি নিলে অবশ্য উইদাউট পে। অর্থাৎ ছুটির জন্য মাইনে কাটা যাবে। 
আদিত্যর সঙ্গে দেখা করার পরদিন ছিল রবিবার। মায়ের ছুটির দিন। আগে ছোটবেলায় রবিবারে মা’কে অনেক কাজই করতে দেখত। এখন সারা সপ্তাহ ধরে অল্প অল্প করে সে কাজ শেষ করে সপ্তাহে একটা দিন সম্পূর্ণ বিশ্রাম নেয়। রান্নার লোক পর্যন্ত নিজের মতো করে রান্না করে দিয়ে বেরিয়ে যায়।শ্রীমন্তি বোঝে, আর বছর পাঁচেকের মধ্যে হয়তো মায়ের রিটারমেন্ট। এটা তার হয়তো প্রস্তুতিপর্ব।
আদিত্য এসেছিল সওয়া পাঁচটা নাগাদ। প্রণাম করে ‘কেমন আছেন’ জিজ্ঞাসা করার ফাঁকে মা শ্রীমন্তিকে চা করতে পাঠিয়েছিল। আশ্চর্যের কথা চা, মিষ্টি ট্রেতে  নিয়ে এসে দেখল মায়ের শোবার ঘর বন্ধ। মানে, রুদ্ধদ্বার বৈঠক চলছে। চাফ্লাস্কে ঢেলে, মিষ্টি ফ্রিজে ঢুকিয়ে নিজের ঘরে চলে গেছিল শ্রীমন্তি। বেশ টেনশন হচ্ছিল। আদিত্যর কুল টাইপ অ্যাপিয়ারেন্সটা মায়ের পছন্দ হবেনা, একপ্রকার নিশ্চিন্ত। কিন্তু উত্তর দেওয়ার ধরন মা’কে না আরও চটিয়ে দেয়। 
প্রায় আধঘন্টা পর দরজা খুলেছিল। ড্রয়িং-এ বসে একটা মিষ্টি আর এক কাপ চা খেয়ে ক্যাজুয়াল দু’একটা কথা বলে বেরিয়ে গেছিল আদিত্য। মায়ের মুখের এক্সপ্রেশন দেখে কিছু পড়তে পারছিলনা শ্রীমন্তি।
থাকতে না পেরে আদিত্য বেরিয়ে যাবার পর প্রশ্ন করেছিল মা’কে,‘কী কথা হল একটু বলবে প্লিজ?’ 
মায়ের মুখে রাগ বা হাসি কোনওটাই ছিল না। ভাবলেশহীন মুখে বলেছিল,‘কী আবার হবে,যা হবার।’
‘মানেটা কী?’ আগ্রহ ছাপিয়ে ভেতরে রাগের পরশ পাচ্ছিল শ্রীমন্তি। 
‘কী আবার। সব ঠিক হয়ে গেল।’
‘আরে কী ঠিক হল বলবে তো।’
এক-দু’সেকেন্ড শ্রীমন্তির মুখের দিকে তাকিয়ে মা বলেছিল,‘চাকরি ছাড়া যাবে না। তবে গানের চর্চাটা চালিয়ে যেতে পারে।’
‘ও কী বলল?’
‘রাজি।’
‘রাজি! যাক---’
‘একটা ছোট শর্ত হয়েছে দু’জনের মধ্যে।’
‘কী?’
‘ওর গান শুনে তবে সিদ্ধান্ত নেবো তোমাদের দু’জনের বিয়ে দেবো কিনা।’
নিভে গেছিল শ্রীমন্তি। হতচ্ছাড়াটা নিশ্চই মাকে অ্যাটিটিউড দেখিয়েছে। বারবার হোয়াটসঅ্যাপে বলা সত্বেও! মা’কে তো চেনে না। বেশ হয়েছে। মা যদি ‘না’ বলে দেয়, করবে না বিয়ে শ্রীমন্তি। শুধু আদিত্যকে নয়। কাউকেই করবে না কখনও, সারা জীবনে।
কিন্তু আজ সকাল থেকে বুকের ধুকপুকানিটা শুরু হয়েছে। কারণ মা আজ আদিত্যর রিয়ালিটি শোয়ের এপিসোডটা দেখবে। এবং শ্রীমন্তি নিশ্চিত ফয়সালাটা আজই হবে। মা পরিষ্কার ‘না’ বলবে।
ঠিক রাত ন’টায় শুরু হল রিয়ালিটি শো’টা। আরো দু’একবার ফোন করে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছে শ্রীমন্তি। আদিত্যর ফোন সুইচড অফ। রাগে মাথাটা জ্বলছিল। তাও শান্ত হয়ে বসল মায়ের পাশে, টিভির সামনে। মা এসব প্রোগ্রাম একেবারে দ্যাখেনা। খবর, বা বড়জোর ডিসকভারিটা একটু। 
শাড়ির আঁচল দিয়ে নিজের চশমা মুছে পরে নিয়ে মা জিজ্ঞাসা করল,‘তুমি আগে ওর গান শুনেছ?’ 
আস্তে আস্তে শ্রীমন্তি বলল,‘হ্যাঁ।’
‘কোনও অনুষ্ঠানে?’
‘না। ও যেসব ভিডিও পাঠায় সেগুলোতে।’
‘ও।’
দু’জনের পরেই স্ক্রিনে চলে এলো আদিত্য। শুরু করল নিজের গান। একটা খুব জনপ্রিয় হিন্দি ছবির গান। চ্যানেলের ভেতরের দর্শকরা বেশ লাফালাফি করছে।শ্রীমন্তির মনে হচ্ছে, আদিত্য যত না গাইছে, চুল ঝাকাচ্ছে বা হাভভাবটা অতিরিক্ত রকস্টারের মতো করছে। আড়চোখে মায়ের মুখের দিকে তাকাল শ্রীমন্তি। পলকহীন চোখে মা দেখে যাচ্ছে ওর পারফরম্যান্স।
গান শেষ হল একসময়। মা’ও চেয়ার ছেড়ে উঠে পড়ল।শ্রীমন্তি হালকা গলায় জিজ্ঞাসা করল,‘জাজরা কী বলবে, শুনবে না?’
‘না।’
‘কেন?’
‘দরকার নেই বলে। তুমি ওকে সচ্ছন্দে বিয়ে করতে পারো। আমার কোনও আপত্তি থাকল না।’ 
খুশির সব বাঁধ যেন ভেঙে যাচ্ছে শ্রীমন্তির। বলল,‘থ্যাঙ্কু মা। থ্যাঙ্কু। ওর গান কেমন লাগল।’
‘আমার কেমন লাগল, সেটা জরুরী নয়। কিন্তু এটা বুঝলাম, আর যাই হোক গানটা ওর কিছুতেই হবে না। আমি নিশ্চিত। ও চেষ্টা করলেও হবে না। বলে দিলাম। যদি হত, আমি বিপদে পড়তাম। তুমি ওকে বিয়ে করতেই পারো। এই গান তোমার সংসারে কোনওএফেক্ট ফেলতে পারবে না।’
মা ঢুকে গেল নিজের ঘরে। টিভিতে তাকিয়ে দেখল শ্রীমন্তি। জাজেরা একযোগে রিজেক্ট করল আদিত্যকে। মাথা নীচু করে বেরিয়ে যাচ্ছে ও।
নিজের ফোন বের করে আবারও ডায়াল করল শ্রীমন্তি। খুলছে না ঠিকই। কিন্তু ফোন একসময় খুলতেই হবে চাঁদুকে।