'পাড়ায় রোলের দোকান খুলতে চেয়েছিলাম', পুজোর মজার স্মৃতিতে ডুব অনুপমের

Piku movie famed famous Bengali music director aka singer Anupam Roy talks about his childhood memories of Durga Puja
অনুপম রায়।

ইন্ডাস্ট্রিতে ১৪টি বসন্ত পূর্ণ করেছেন। টলিপাড়ায় একাধিক ছবি তাঁর সুর ও কণ্ঠে অন্য মাত্রা পেয়েছে। তিনি অনুপম রায়। কেমন ছিল তাঁর ছোটবেলার দুর্গাপুজো? বিখ্যাত হওয়ার পর পুজোর কোন ব্যাপারটা সবথেকে মিস করেন 'অটোগ্রাফ'-এর গায়ক? ২০২৩-এর পুজোকে ঘিরেই বা তাঁর কী পরিকল্পনা রয়েছে? এইমুহুর্তে সিঙ্গাপুরে রয়েছেন অনুপম। সেখান থেকেই আজকাল ডট ইন-এর সঙ্গে আড্ডা চলল তাঁর। 

" ছোটবেলায় পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেই আমার পুজো কেটেছে আর পাঁচটা বাঙালি বাচ্চার মতোই। তারপর যখন একটু বড় হলাম, ওই ১৪-১৫ বছর বয়স হবে...খিদিরপুরের সেন্ট পলস-এ পড়ি তখন। যেই একটু ডানা গজাল, তখন বন্ধুদের সঙ্গে হইহই করে পুজোয় ঘুরতে বেরিয়ে পড়তাম। সেই মজা বাকি সবকিছুর থেকে আলাদা। তখন নয়ের দশকের মাঝামাঝি সময়। আমার আজও মনে আছে, তখন পুজোতে কোনও এক প্রেক্ষাগৃহে ছবি দেখতে গিয়েছিলাম বন্ধুদের সঙ্গে। তারপর স্রেফ গাড়ি পাচ্ছিলাম না বলে দেশপ্রিয় পার্ক থেকে হেঁটে ঠাকুর দেখতে দেখতে ঠাকুরপুকুর বাড়িতে ফিরে এসেছিলাম! এখন ভাবলে অবাক লাগলে কী করে হেঁটে এসেছিলাম অতটা রাস্তা। আসলে, তখন মনটা অনেক সহজ ছিল, সরল ছিল...তাই হয়তো...কে জানে!" বলতে বলতে খানিক আনমনা হয়ে যান অনুপম। 

সেই সময়ের পুজো এখনকার থেকে কোথায় ঠিক আলাদা? প্রশ্নের জবাবে অনুপমোচিত ছন্দে জবাব আসে, "কৈশোরের একটা অদ্ভুত সারল্য থাকে মানুষের। ফলে, দেখার চোখটাও সম্পূর্ণ আলাদা থাকে। বলতে চাইছি, সেই বয়সে কোনও বিষয় অথবা ব্যক্তিকে যেভাবে দেখতাম তখন, এখন হাজার চাইলেও তা পারি না। এই প্রসঙ্গে একটা ঘটনা বলি। তখন আমার পাড়ার এক বন্ধু যে আমাদের সঙ্গে প্রতিদিন ক্রিকেট বা ফুটবল খেলে সে পুজোর সময় একটা রোল-চাউমিনের দোকান খুলল। এবং দেখতাম পাড়ার এক সুন্দরী যুবতী যখন সেই দোকানে রোল কিনতে এল তখন সে একটু বেশি যত্ন করে রোলটা ভেজে দিল, বাড়তি কাগজ দিয়ে যত্ন করে সেটা মুড়ে দিল। এসব ঘটনাও তো পুজোতেই প্রথম দেখা। আমরাও সেসব হাঁ করে গিলতাম আর প্রাণপণে অনুপ্রেরণা নিতাম যে আমরাও একদিন ঠিক এমন করব। একদিন এমনই রোলের দোকান খুলব আর সুন্দরী যুবতীদের হাতে যত্ন করে রোলটা ধরিয়ে দেব!" বলতে বলতে হেসে ওঠেন 'পিকু' ছবির সুরকার। 

আর পুজোর গান? মনমতো বিষয় পেয়ে এবার একটু নড়েচড়ে বসলেন অনুপম। "আমাদের কৈশোরে পুজোর গান মানেই অঞ্জন দত্ত, নচিকেতা। প্যান্ডেলে ওঁদের গান চলত। আর বড়রা প্যান্ডেল ছেড়ে বাড়িতে গেলে সেই ফাঁকে পাড়ার কোনও দুষ্টু ছেলে টুক করে হিন্দি গান চালিয়ে দিত। অক্ষয় কুমারের 'ম্যায় খিলাড়ি তু আনাড়ি' ছবির সেইসব গান শুনেই তা বন্ধ করার জন্য ছুটে আসতেন পাড়ার বড়রা। বোকা দিয়ে বলা হত, পুজোর সময় শুধু বাংলা গান চলবে। নো হিন্দি। একবার বেশ মনে আছে কবীর সুমনের 'পাগলা সানাই' এর ক্যাসেটটা রাত-দিন মাতমাতিয়ে চলেছিল পাড়ার প্যান্ডেলে। সকালেও 'পাগলা সানাই' রাতেও 'পাগলা সানাই'! পুরো পাড়া মাতিয়ে দিয়েছিল ওই গান। কুমার শানু না শুনে লোকজন সেই গান শুনছে...পুরো অন্যরকম ব্যাপার হয়েছিল, এটা বেশ মনে আছে।"

পুজোর খাওয়া-দাওয়া নিয়ে অবশ্য খুব বেশি স্মৃতি নেই শিল্পীর। জানালেন, কৈশোরে যতই বন্ধুদের সঙ্গে পুজোয় ঘোরাঘুরি করতেন না কেন রাতের খাবারটা বাড়িতে এসেই তাঁকে খেতে হত। দস্তুরমতো ওটাই ছিল বাড়ির নিয়ম। তবে যাদবপুরে কলেজ জীবন যখন শুরু হয়েছে, তখন টিউশনি করিয়ে টুকটাক টাকা টাকা আসছে পকেটে। তবে এতটাও নয় যে দামি রেঁস্তরায় গিয়ে ইচ্ছেমতো খাবার খেতে পারেন। বড়জোর এক প্লেট চিকেন চাউমিন দু'জন মিলে ভাগ করে খেতেন। 

যাঁর গাওয়া গান শুনে প্রেম জমে ওঠে তরুণ-তরণীদের, তাঁর পুজোর প্রেম নিয়ে অভিজ্ঞতা নিশ্চয়ই দারুণ? অল্প হেসে অনুপমের উত্তর, "ধুর! কিচ্ছু হতো না। প্রতিবার পুজোতে খুব আশা নিয়ে বেরোতাম এইবার বুঝি কিছু হবে। মানুষের তো সবসময়ই একটা আশা থাকে আজকের দিনটা বুঝি আমার জন্য দারুণ কিছু একটা হবে। ওই সময়ের প্রতিবার পুজোয় বিশেষ কিছুর আশা আমারও থাকত। কিন্তু বহু হাঁটাহাঁটি, নানান গলি ঘোরাঘুরি করে, ম্যাডক্স স্কোয়ারে‌ রোজ হানা দিয়েও কিচ্ছু হয়নি আমার"। 

তবে বর্তমান সময়ে পুজো নিয়ে তাঁর আক্ষেপের কথাও লুকোলেন না অনুপম। শান্ত অথচ খানিক আনমনাভাবেই বলে উঠলেন, "এখন আর পুজোয় ঘুরেফিরে প্যান্ডেলে গিয়ে ঠাকুর দেখতে পারি না। দেখলেই ফোন তুলে লোকজন ভিডিও করেন, কেউ বা এগিয়ে এসে সেলফির আব্দার। পুজোয় পায়ে হেঁটে রাস্তায় ঘোরাটা খুব মিস করি। দোকানে গিয়ে নিজের হাতে বাছাই করে জিনিসপত্র কেনার যে আনন্দ তা প্রায় ভুলতে বসেছি। বিশ্বাস করুন, আমি সাধারণ মানুষের মতো ঘুরে ফিরে প্যান্ডেল দেখতে চাই। দোকানে ঢুকে পছন্দের পোশাক থেকে শুরু করে প্রিয় জ্যামের বোতলটা হাতে তুলে কিনতে চাই... কোনও নিজস্বীর আব্দার থাকবে না, অযাচিতভাবে কেউ ভিডিও তুলবে না...এইটা যদি ফিরে পেতাম খুব ভাল হত।"