ইস্টবেঙ্গলের জন্য মন খারাপ, তবু পুজোয় সুখবর পাক লাল-হলুদ, শারদীয়া বার্তা মর্গ্যানের

শরতের নীলচে আকাশ আর ছেঁড়া মেঘ জানান দিয়ে যাচ্ছে ঢাকে কাঠি পড়ল বলে। ভিড়ে ঠাসা কলকাতার রাস্তাঘাট, জনসমাগম বলে দিচ্ছে, হাতে সময় আর বিশেষ নেই। শেষ মুহূর্তের শপিংয়ে ব্যস্ত মানুষ। প্রিয় মানুষের জন্য কেনাকাটাও হয়তো চলছে পুরোদমে। শুরু হয়ে গিয়েছে পুজোর প্ল্যানিং। অল্পবয়সীরা হুল্লোড়ের জন্য তৈরি।

Former East Bengal coach Trevor James Morgan shares his experience of Durga Puja

ট্রেভর জেমস মর্গ্যান 

শরতের নীলচে আকাশ আর ছেঁড়া মেঘ জানান দিয়ে যাচ্ছে ঢাকে কাঠি পড়ল বলে। ভিড়ে ঠাসা কলকাতার রাস্তাঘাট, জনসমাগম বলে দিচ্ছে, হাতে সময় আর বিশেষ নেই। শেষ মুহূর্তের শপিংয়ে ব্যস্ত মানুষ। প্রিয় মানুষের জন্য কেনাকাটাও হয়তো চলছে পুরোদমে। শুরু হয়ে গিয়েছে পুজোর প্ল্যানিং। অল্পবয়সীরা হুল্লোড়ের জন্য তৈরি। 

বাপের বাড়ি আসছে মেয়ে। সেই আনন্দ ছড়িয়ে পড়েছে আকাশবাতাসে। সুদূর অস্ট্রেলিয়ার পারথে বসে এই অক্টোবরের আলো ঝলমলে কলকাতার আকাশ কল্পচোখে আমি বেশ দেখতে পাচ্ছি। অনুভব করতে পারছি শহরের হৃদস্পন্দন। কলকাতার বাতাসে ছড়িয়ে পড়া উৎসবের গন্ধ আমি আজও পাই। সেই ঘ্রাণ আমাকে করে তোলে নস্ট্যালজিক।  

বেশ কয়েকবছর হল কলকাতা ছেড়ে চলে এসেছি। কিন্তু দুর্গাপুজোর কলকাতা যে আমার বড় পরিচিত। আমার হৃদয়ের খুব কাছের। টাইম মেশিনের সাহায্য না নিয়ে ফিরে যাই আমার ফেলে আসা সময়ে।   

আলোর রোশনাই, প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে মানুষের ভিড় আমার বড় পরিচিত। কলকাতায় থাকার সময়েই দেখেছি এই সময়টায় শহর জীবন্ত হয়ে ওঠে। সারা বছরের ক্লান্তি, গ্লানি, অভাব, অভিযোগ, ঝগড়া, বিবাদ দূরে সরিয়ে রেখে মানুষ নতুন আনন্দে জেগে ওঠে। 

উৎসবে মেতে ওঠার জন্য সবাইকে আহ্বান করে। কাছে টেনে নেয় প্রত্যেককে। এখানেই দুর্গাপুজোর মাহাত্ম্য। সত্যি বলতে কী, ইস্টবেঙ্গলে কোচিং করাতে আসার আগে দুর্গাপুজো সম্পর্কে আমি বিন্দুবিসর্গ জানতাম না। প্রথমবার এই শহরে আসার পরে বুঝতে পারি দুর্গাপুজোর গুরুত্ব, তার তাৎপর্য। 

পেশার তাগিদে সম্পূর্ণ অচেনা এক শহরে আসা বিদেশি হিসেবে এই মহৎ উৎসবের বর্ণ, গন্ধ, স্বাদ উপলব্ধি করার কৌতূহল আমার বেড়ে গিয়েছিল। ইস্টবেঙ্গলের ফুটবলাররা আমার কৌতূহল নিবৃত্ত করে। দেবী দুর্গার মহিষাসুর বধ করার গল্প আমাকে মেহতাব-সন্দীপরাই শুনিয়েছিল। স্মৃতির পাতা ওলটাতে বসে মনে পড়ে যাচ্ছে বছরের এই সময়েই দুর্গার আরাধনা হয়। দশ দিনের পুজোর শেষ পাঁচটা দিন খুব গুরুত্বপূর্ণ। 

আমি পেশাদার ফুটবল কোচ। ইস্টবেঙ্গলের ভাল-মন্দ দেখাই ছিল আমার এক ও একমাত্র কাজ। সেই কারণে প্লেয়ারদের নিয়ে সকালেই ট্রেনিংয়ে নেমে পড়া, খেলার স্ট্র্যাটেজি তৈরি করা, প্রতিপক্ষের রক্তাল্পতা খুঁজে বের করা আমার কাছে অগ্রাধিকার পেত। পুজো বলে অনুশীলনে ঢিলেমি দেওয়া আমি একদম বরদাস্ত করতাম না। 

তবে একজন বিচক্ষণ কোচ হিসেবে ফুটবলারদের দিকটাও আমাকে নজরে রাখতে হত। পুজোর অর্থ, তার গুরুত্ব সম্পর্কে আমি সচেতন ছিলাম। সেই কারণে ফুটবলারদের এই আনন্দযজ্ঞে মেতে ওঠার সুযোগ করে দিতাম। পরিবারকে যাতে ওরা সময় দিতে পারে, চেটেপুটে উৎসবের স্বাদ উপভোগ করতে পারে, সে দিকেও আমাকে দৃষ্টি দিতে হত। 

কলকাতার প্রাণকেন্দ্রে থাকার জন্য আমি আমজনতার আবেগ, অনুভূতি খুব কাছ থেকে দেখেছি। পুজোর দিনগুলোতে প্রাণের আনন্দে মানুষকে ভাসতে দেখেছি। অভিজ্ঞতা আমাকে শিখিয়েছে, তুমি যে প্রান্তের মানুষই হও না কেন, এই মহৎ উৎসব তোমাকেও আকর্ষণ করবে। তুমিও অদৃশ্য এক টান অনুভব করবে। মনের ভিতরে চিরতরে ছাপ রেখে যায় এমন উৎসব। ভৌগোলিক সীমারেখা অতিক্রম করে তা ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে। 

কলকাতায় কোচিং করানোর সময়ে লক্ষ্য করেছি, কর্মসূত্রে ভিনরাজ্যে বা ভিনদেশে পাড়ি দেওয়া মানুষজন পুজোর সময়ে ঘরে ফিরে আসেন। উৎসবের দিনগুলোতে ইস্টবেঙ্গলের খেলা না থাকলে আমিও ফিরে যেতাম অস্ট্রেলিয়ায়। দেবী দুর্গা সেই সুযোগ আমাকে করে দিতেন। তাই অন্য বাঙালিদের মতো পুজো আমার কাছে ঘরে ফেরার গানও বটে। 

বিদেশি হলেও, আমি খুব অল্প দিনেই বুঝতে পেরেছিলাম যে কোনও স্থানীয় উৎসবের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়াটাই জরুরি। ইস্টবেঙ্গলে যেমন বিদেশি খেলোয়াড় ছিল, তেমনই বাঙালি, ভিনরাজ্যের ফুটবলারও ছিল। সেই কারণে উৎসবের সময়ে ফুটবলাররা যাতে তাদের পরিবারের সঙ্গে আনন্দ করতে পারে, আনন্দঘন মুহূর্ত উপভোগ করতে পারে, সেই দিকে নজর দিয়েছি। 

শেষ করার আগে বলি, প্রত্যেককে দুর্গাপুজোর শুভেচ্ছা জানাই। সময়টা একেবারেই ভাল যাচ্ছে না আমার পুরনো ক্লাবের। আশা রাখি এই পুজো ইস্টবেঙ্গল সমর্থকদের জন্য খুশির বার্তা বয়ে আনবে। সবুজ মাঠে ঘুরে দাঁড়াবে লাল-হলুদ। দুঃসময় কেটে ফিরবে সুসময়। ফলাফল কথা বলবে ইস্টবেঙ্গলের হয়ে।