দশমীতে প্রতিষ্ঠা হয়ে ষষ্ঠীতে বিসর্জন হয় ঘট, শের শাহর আমল থেকেই এই জমিদার বাড়িতে পুজো শুরু হয় বলে জনশ্রুতি
Durga Puja 2025: জনশ্রুতি অনুযায়ী সম্রাট শের শাহর আমলে পূর্ব বর্ধমানের গুসকরার বাড়িতে দুর্গাপুজো শুরু হয়েছিল। প্রায় ৪৫০ বছর ধরে মহাসমারোহে বেশ রাজকীয়ভাবেই সম্পন্ন হয় এই বাড়ির পুজো। সেই আমলের জৌলুস কিছুটা কমলেও পরিবারের বর্তমান সদস্যরা ঐতিহ্য ও পরম্পরাকে বাঁচিয়ে রাখার যথাসাধ্য চেষ্টা করছেন।

আজকাল ওয়েবডেস্ক: জনশ্রুতি অনুযায়ী সম্রাট শের শাহর আমলে পূর্ব বর্ধমানের গুসকরার বাড়িতে দুর্গাপুজো শুরু হয়েছিল। প্রায় ৪৫০ বছর ধরে মহাসমারোহে বেশ রাজকীয়ভাবেই সম্পন্ন হয় এই বাড়ির পুজো। সেই আমলের জৌলুস কিছুটা কমলেও পরিবারের বর্তমান সদস্যরা ঐতিহ্য ও পরম্পরাকে বাঁচিয়ে রাখার যথাসাধ্য চেষ্টা করছেন। চোংদার বাড়ির দুর্গাপুজোর কথা উঠলেই মনে পড়ে যাবে এখানকার রীতি ও প্রথার ছবি। যেমন, এখানে ঘট বিসর্জন হয় না। ঘট আহ্বান করা হয়৷ নিঃসন্দেহে এই প্রথা অন্যরকম একটি দিক।
গুসকরার জমিদার চতুর্ভুজ চোংদারের হাত ধরেই এই পুজো শুরু হয়েছিল বলে জানা যায়। জমিদার বাড়ির কেন্দ্রস্থলেই তৈরি হয় বিরাট দুর্গা মন্দির। শোনা যায়, একসময় কলকাতার নামী কোম্পানির নট্টবাবুরা গুসকরার এই বাড়িতে গিয়ে যাত্রাপালার আসর জমাতেন। বারান্দার পলেস্তারা এখন খসে পড়েছে। তবুও ধুমধাম করেই পুজোর চারটে দিন মেতে ওঠেন বাড়ির বড়ো থেকে ছোট, সকল সদস্যরা৷ পরিবারের যারা বাইরে থাকেন, পুজোর সময় মোটামুটি তাঁরা সবাই একজোট হন। প্রথা মেনে দশমীতে ঘট বিসর্জন না করে, ঘট প্রতিষ্ঠা করা হয়।
একসময় কামান দাগা হত। এখন তা বন্ধ হয়ে গেছে। তবে এখন বন্দুক 'ফায়ার' করে সন্ধি পুজো শুরু হয় বলে শোনা যায়। শাক্ত মতে পুজো হয় এই বাড়িতে। ১৯৭৮ সালের ভয়াবহ বন্যায় মারা যায় প্রচুর গবাদিপশু। সেই থেকে এখানে মোষ ও ছাগ বলি বন্ধ হয়ে যায়। তারপর থেকে চালকুমড়ো বলির প্রথা চালু রয়েছে। ভোগ রান্না হয় প্রায় ৫১ থালার জন্য। বাড়ির মহিলারাই সাধারণত ভোগ রান্না করেন।
জানা যায়, ব্রিটিশ আমলে চট্টগ্রাম থেকে গুসকরায় চলে আসেন চোংদার জমিদার। মূলত ইস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানির কাজে সাহায্য করতেই তাঁদের ডাকা হয়েছিল বলে জানা যায়। ধীরে ধীরে চোংদাররাই হয়ে ওঠেন ওই অঞ্চলের জমিদার। এককালের জমিদারদের বিশাল বাড়ির মধ্যে বিরাট দালান। দুর্গাপুজো ছাড়াও কালীপুজো ও জগদ্ধাত্রী পুজোও বহুদিন ধরে চলে আসছে। সাধারণত পুজোর রীতি অনুযায়ী দশমীর দিনে ঘট বিসর্জন করা হয়। কিন্তু এ বাড়ির পুজোর আচার আলাদা। দশমীর দিন ঘট প্রতিষ্ঠা করা হয় চোংদারদের পুজোয়। সেই ঘট রেখে দেওয়া হয় টানা এক বছর। পরের বছর ষষ্ঠীর দিন তা বিসর্জন হয়। বাড়ির বধূ মল্লিকা চোংদার বলেন, ‘পরিবারের মঙ্গল কামনায় দশমীর দিন এই ঘট বিসর্জন করা হয় না। এ ছাড়াও সপ্তমী থেকে দশমী --- চার দিনই প্রদীপ জ্বেলে রাখা হয়।’