১৫০ বছর আগে এক বিধবার অভিশাপেই শুরু দুর্গাপুজো, এত বছর পরেও ঐতিহ্যে ‘অটল’ মণ্ডল পরিবার
Durga Puja 2025: আজ থেকে ১৫০ বছর আগে বহরমপুরের নওদা ব্লকের আলমপুরে (পুরাতন), এক ব্রাহ্মণ বিধবার অভিশাপ বদলে দিয়েছিল এক পরিবারের ভাগ্য।

গোপাল সাহা: আজ থেকে ১৫০ বছর আগে বহরমপুরের নওদা ব্লকের আলমপুরে (পুরাতন), এক ব্রাহ্মণ বিধবার অভিশাপ বদলে দিয়েছিল এক পরিবারের ভাগ্য। সেই বিধবা মহিলার অভিশাপই জন্ম দিয়েছিল এক ঐতিহ্যের— বহরমপুরের আলমপুর মণ্ডল পরিবারের দুর্গাপুজো। ১৫০ বছর পেরিয়ে গেলেও আজও একই নিয়ম মেনে চলছে এই পুজো।
এই পুজো শুরু হয়েছিল বিধবার অভিশাপ নিয়ে
প্রায় ১৫০ বছর আগে আলমপুরের এক ব্রাহ্মণ বিধবার ৮০ বিঘা কৃষিজমি নিলামে তোলা হয়। সেই জমি কিনে নেন অটল মণ্ডল। বিধবা ক্ষুব্ধ হয়ে অভিশাপ দেন, “এই জমির ফসল যে ভোগ করবে, তাঁর অকালমৃত্যু হবে।” অভিশাপ উপেক্ষা করতে পারেননি অটলবাবু। তাই ঠিক করেন, জমির ফসল ভোগ করবেন না, দেবী দুর্গার আরাধনায় সব উৎসর্গ করবেন। আর যেমন ভাবা তেমনি কাজ।
সেই বছর থেকেই শুরু হয় দুর্গাপুজো। ফসল বিক্রির টাকায় তৈরি হয় দ্বিতল দুর্গাদালান। যদিও সংস্কারের অভাবে একশো বছর আগে তা ভেঙে যায়, পরে তৎকালীন পরিবারের উত্তরপুরুষরা প্রথাগত আদলে নতুন একতলা দালান নির্মাণ করেন। গত ৫০ বছর ধরে সেখানেই চলছে পুজো, শারদোৎসবের মাতৃ আরাধনা।
আজও এই পরিবারের রীতি অটল
অটল মণ্ডলের পরিবার এখন ভেঙে গিয়েছে। তবুও পুজোর চারদিন সকলের রান্না একই হেঁশেলে হয়। ষষ্ঠীতে মঙ্গলঘট ভরার মধ্য দিয়ে পুজোর সূচনা হয়। নবপত্রিকা আসে পালকিতে চড়ে।
সবচেয়ে বড় বিশেষত্ব, সন্ধিপুজোর পর আলমপুরের নতুন-পুরাতন গ্রাম ও রামনগরের প্রায় ৫০০ পরিবারে লুচি-মন্ডার প্রসাদ পৌঁছে দেওয়া হয়। আর দশমীর বিসর্জনের দিন গ্রামবাসীদের পাত পেরে খাওয়ানো হয় লুচি, তরকারি ও বোঁদে।
আজও বদলায়নি কাঠামোর আদল
আগে কাঁধে চাপিয়ে প্রতিমা বিসর্জনের রীতি ছিল। এখন পদ্ধতি বদলালেও প্রতিমার কাঠামো ও আকারে কোনও পরিবর্তন হয়নি। বিসর্জনের পর মূর্তির কাঠামো আর তোলা হয় না। প্রতিবছর রথের দিন নতুন কাঠামো তৈরি হয়।
মন্ডল বাড়ির উত্তরপুরুষদের দৃঢ় অবস্থান
বহরমপুরের এক ব্রাহ্মণ পরিবার প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে পুরোহিতের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। পরিবারের সদস্য যাদব মণ্ডল গর্বের সঙ্গে বলেন, “অটল মণ্ডলের নেওয়া সিদ্ধান্ত আজও অক্ষরে অক্ষরে মানা হচ্ছে। সেই ঐতিহ্যই আমাদেরই বহরমপুরের আলমপুরকে এক বিশেষ পরিচিতি দিয়েছে।”
অভিশাপের ভয়কে ভক্তির শক্তিতে রূপান্তর করে জন্ম নেওয়া এই পুজো আজও গ্রাম বাংলার এক অনন্য ঐতিহ্যের প্রতীক।