শান্তিনিকেতনের কৃষ্টি, শিল্প ও আদিবাসী সংস্কৃতির মেলবন্ধনে ২৫ বছরের হীরালিনী দুর্গোৎসব, এ বছরের বড় আকর্ষণ কাঠের খোদাই করা নতুন দুর্গামূর্তি

Durga Pujo 2025: শান্তিনিকেতনের কৃষ্টি ও শিল্প, সেই সঙ্গে আদিবাসীদের সংস্কৃতির সঙ্গে ধর্মীয় রীতিনীতি- এই তিনের মেলবন্ধনে হীরালিনী দুর্গোৎসবের সূচনা। দেখতে দেখতে যা প্রায় ২৫ বছরে পা দিল।

Twenty Fifth anniversary of Hiralini Durgotsav a fusion of agriculture art and tribal culture in Santiniketan
সোনাঝুরির জঙ্গলের ঝরা রেণু, খোয়াইয়ের লালমাটি আর বল্লভপুর অভয়ারণ্যের সবুজে ঘেরা বনেরপুকুরডাঙার এই পুজো আজ শিল্পপ্রেমী ও পর্যটকদের কাছে এক বিশেষ আকর্ষণ।

আজকাল ওয়েবডেস্ক: শান্তিনিকেতনের কৃষ্টি ও শিল্প, সেই সঙ্গে আদিবাসীদের সংস্কৃতির সঙ্গে ধর্মীয় রীতিনীতি- এই তিনের মেলবন্ধনে হীরালিনী দুর্গোৎসবের সূচনা। দেখতে দেখতে যা প্রায় ২৫ বছরে পা দিল। সোনাঝুরির জঙ্গলের ঝরা রেণু, খোয়াইয়ের লালমাটি আর বল্লভপুর অভয়ারণ্যের সবুজে ঘেরা বনেরপুকুরডাঙার এই পুজো আজ শিল্পপ্রেমী ও পর্যটকদের কাছে এক বিশেষ আকর্ষণ। প্রতিযোগিতাহীন এই উৎসবের মূল লক্ষ্য শিল্প ও সংস্কৃতির সমন্বয়কে নতুন মাত্রা দেওয়া। প্রতিবছর লোহা, ফাইবার কাস্টিং, বাঁশ ও কাঠের তৈরি দুর্গা মূর্তি ঘুরিয়ে ফিরিয়ে এখানে পুজো করা হয়। তবে

২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে এবারের বড় চমক কাঠের খোদাই করা নতুন দুর্গামূর্তি। দীর্ঘ প্রস্তুতির পর মণ্ডপে বসানো হয়েছে সেই মূর্তি, যা ইতিমধ্যেই দর্শকদের মধ্যে প্রবল উৎসাহ জাগিয়ে তুলেছে। স্থানীয়দের পাশাপাশি পর্যটকরা সেখানে ইতিমধ্যেই ভিড় জমিয়েছেন।

২০০১ সালে কলকাতা গভর্নমেন্ট আর্ট কলেজের ছাত্র ও শিল্পী বাধন দাসের হাত ধরে সূচনা হয় এই পুজোর। প্রথম বছর তৈরি হয় টেরাকোটা মূর্তি, দ্বিতীয় বছরে কাঠের মূর্তি তৈরি করে পুজো করা হয়। কিন্তু ২০০২ সালে বাধনের অকাল মৃত্যুর পর পুজো প্রায় থমকে যায়। সেই সময় তাঁর ছাত্র শিল্পী আশিস ঘোষ দায়িত্ব নেন এবং নতুন নতুন উপকরণ ও শিল্পরীতি ব্যবহার করে পুজোর ঐতিহ্য এগিয়ে নিয়ে যান। ফাইবার কাস্টিং, বাঁশ, লোহা ও কাঠ দিয়ে তিনি একে একে পাঁচটি স্থায়ী দুর্গামূর্তি গড়ে তোলেন, যেগুলি বিসর্জন না দিয়ে প্রতিবছর নতুন সাজে মণ্ডপে প্রতিষ্ঠা করা হয়। এবছরের কাঠের খোদাই করা ষষ্ঠ মূর্তি সেই ধারায় এক নতুন অধ্যায় যোগ করেছে।

তাৎপর্যপূর্ণভাবে, মা দুর্গার হাতে এখানে নেই কোনও অস্ত্র।বরং তাঁর হাতে শোভা পায় শান্তির প্রতীক পদ্মফুল। এই বৈশিষ্ট্যই সাধারণত এই হীরালিনী দুর্গোৎসবকে রাজ্যের অন্যান্য পুজো থেকে আলাদা করে তুলেছে। মহাসপ্তমী থেকে মহানবমী পর্যন্ত মঞ্চে চলে আদিবাসী নাচ-গান। পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, বিহার ও ঝাড়খণ্ড থেকে আগত শিল্পীরা ধামসা-মাদলের তালে তাঁদের ঐতিহ্যবাহী সঙ্গীত ও নৃত্য পরিবেশন করেন। ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের পাশাপাশি মণ্ডপ প্রাঙ্গণে বসে সাংস্কৃতিক আসর, যেখানে লোকগীতি, আদিবাসী নৃত্য এবং স্থানীয় শিল্পের প্রদর্শনী দর্শকদের মন জয় করে। শিল্পী আশিস ঘোষ বলেন, "এই উৎসব স্থানীয় আদিবাসীদের যেমন আনন্দের, তেমনই বাইরের পর্যটকদের কাছেও এক অনন্য অভিজ্ঞতা।"

গত বছর মহালয়ার দিনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভার্চুয়াল মাধ্যমে এই পুজোর উদ্বোধন করেছিলেন। এবছর তাঁদের ২৫ বছরের যাত্রাকে স্মরণীয় করে তুলতে ইতিমধ্যেই মন্ডপে ঠাকুর প্রতিষ্ঠা করে পুজোর সূচনা করেছেন। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত দর্শকদের ভিড় উপচে পড়ছে সেখানে। প্রতিবছর, দশমীর দিন ঘট বিসর্জনের মধ্য দিয়ে পুজোর সমাপ্তি হলেও শিল্প ও প্রকৃতির মেলবন্ধনে তৈরি এই দুর্গোৎসব আজ বীরভূমের গণ্ডি ছাড়িয়ে সমগ্র রাজ্যে শিল্পপ্রেমীদের কাছে বিশেষ মর্যাদা পেয়েছে। বিশেষত, এবারের কাঠের খোদাই করা ষষ্ঠ দুর্গামূর্তি সেই ঐতিহ্যের সঙ্গে যুক্ত করেছে এক নতুন অধ্যায়। যা কার্যত শান্তিনিকেতন ও সোনাঝুরির প্রকৃতিকে আরও জীবন্ত করে তুলেছে।