মাতৃবন্দনায় এই বছর জেলায় অভিনব উদ্যোগ, পুরোহিত প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে পুরুষদের পাশাপাশি তালিম নিচ্ছেন মহিলারাও!
শুধু মাত্র পুজোর আনন্দই নয়, সঠিক নিয়মকানুন ও শাস্ত্রসম্মত আচারবিধি মেনে পূজা সম্পন্ন করাই মূল উদ্দেশ্য। তাই দুর্গাপুজোর আগে পুরোহিতদের জন্য আয়োজন করা হয় এক বিশেষ প্রশিক্ষণ শিবিরের।

আজকাল ওয়েবডেস্ক: শারদোৎসব বাঙালির প্রাণের উৎসব। আর সেই শারদ উৎসবের প্রাক্কালে দেবী দুর্গার আরাধনায় কোনও খুঁত যেন না থেকে যায়, ভাবাবেগের কোনও ত্রুটি যেন না থাকে, সেই লক্ষ্যেই এই বছর বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছেন রাজ্যের একাধিক সংস্কৃত টোল ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি। শুধু মাত্র পুজোর আনন্দই নয়, সঠিক নিয়মকানুন ও শাস্ত্রসম্মত আচারবিধি মেনে পূজা সম্পন্ন করাই মূল উদ্দেশ্য। তাই দুর্গাপুজোর আগে পুরোহিতদের জন্য আয়োজন করা হয় এক বিশেষ প্রশিক্ষণ শিবিরের।
প্রশিক্ষণ শিবিরের আয়োজন
বর্ধমানের আলমগঞ্জ এলাকায় অবস্থিত প্রাচীন বিজয় চতুষ্পদী সংস্কৃত টোল এই মহত অনুষ্ঠানের প্রধান আয়োজক। টানা ১০ দিন ধরে চলা এই শিবিরে উপস্থিত থাকবেন দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা পুরোহিতরা। মোট অংশগ্রহণকারীর পুরোহিতদের সংখ্যা ২৫৪ জন। যার মধ্যে বিশেষ আকর্ষণ হল ১২ জন মহিলা পুরোহিতের সক্রিয় উপস্থিতি। সমাজে এখন পুরুষের পাশাপাশি মহিলারাও যে পূজার্চনায় দক্ষ হয়ে উঠছেন, তারই এক দৃষ্টান্ত এই প্রশিক্ষণ শিবির।
প্রশিক্ষণের বিষয়বস্তু
পুজোর আচারবিধি, মন্ত্রের সঠিক উচ্চারণ, ধ্যানমগ্নতা বজায় রাখার কৌশল, আরতি, হোমযজ্ঞ-সহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। আধুনিক প্রজন্মের কাছে পূজার সারবত্তা পৌঁছে দিতে কেবল আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকা যাবে না, বরং অন্তরে থাকতে হবে ভাবাবেগ ও বিশ্বাস—এই বার্তাই তুলে ধরা শিবিরে।
প্রশিক্ষণের দায়িত্বে ছিলেন ছয় জন খ্যাতনামা পণ্ডিত ও শিক্ষক, যাঁরা দীর্ঘদিন ধরে সংস্কৃত টোল ও গবেষণার সঙ্গে যুক্ত। তাঁদের তত্ত্বাবধানে অংশগ্রহণকারীরা কেবল মন্ত্রপাঠের নিয়ম নয়, দেবীর আরাধনায় আধ্যাত্মিকতার আবেশ কীভাবে বজায় রাখা যায়, তারও অনুশীলন করেন।
শংসাপত্র বিতরণ
এই দশ দিনের প্রশিক্ষণ শেষে অংশগ্রহণকারী সকল পুরোহিতকে সংস্কৃত কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়, কলকাতা-র পক্ষ থেকে শংসাপত্র প্রদান করা হবে। এর ফলে ভবিষ্যতে পুজোয় তাঁদের দক্ষতা ও সামাজিক মর্যাদা দু’টোই বৃদ্ধি পাবে।
ঐতিহ্য ও নতুন দিগন্ত
বর্ধমানের বিরহাটা সংস্কৃত টোলের পণ্ডিত দেবাশীষ মুখোপাধ্যায় বলেন, “অন্যান্য বছর নিখিল বঙ্গ সংস্কৃত সেবা সমিতির উদ্যোগে এ ধরনের শিবির হত। কিন্তু এ বছর বিশ্ববিদ্যালয় ও সংস্কৃত কলেজের সহযোগিতা এই আয়োজনকে আরও বৃহৎ আকার দিয়েছে। শুধু বর্ধমান নয়, নদিয়া, বাঁকুড়া, বীরভূম থেকেও পুরোহিতরা অংশ নিয়েছেন। এই মেলবন্ধনই প্রমাণ করে, শাস্ত্রচর্চা এখনও জীবন্ত এবং আগামী প্রজন্মের কাছে সমানভাবে প্রাসঙ্গিক।”
সামাজিক তাৎপর্য
এই প্রশিক্ষণ শিবির কেবলমাত্র একটি আনুষ্ঠানিক অনুষ্ঠান নয়, বরং সমাজে পুরোহিত সম্প্রদায়ের পেশাদারিত্ব ও একাত্মতার এক নতুন দিশা। মহিলাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ ভবিষ্যতের জন্য এক ইতিবাচক বার্তা বয়ে এনেছে। পাশাপাশি, শিবিরের প্রতিটি দিনে স্থানীয় মানুষজনও অংশগ্রহণকারীদের উৎসাহ দিতে উপস্থিত ছিলেন, যা পুরো পরিবেশকে এক উৎসবমুখর রূপ দেয়।
শারদোৎসব আসছে, আর সেই উৎসবকে সার্থক করতে এই প্রশিক্ষণ শিবির যেন এক প্রাথমিক সুর। ঠিক যেমন ধূপ-ধুনো ছাড়া পুজো অসম্পূর্ণ, তেমনই পুরোহিতদের নিষ্ঠা ও প্রস্তুতি ছাড়া পুজোর গাম্ভীর্যও পূর্ণতা পায় না।