আজও বিশ্বাস করা হয় হারিয়ে যাওয়া এক শিশুর খোঁজে 'কাটা' হয়েছিল দেবীর পেট, তাই এই দুর্গার নাম 'পেটকাটি দুর্গা'
Durga Puja 2025:

আজকাল ওয়েবডেস্ক: গত প্রায় পাঁচশ বছর ধরে মুর্শিদাবাদ জেলার রঘুনাথগঞ্জ-১ ব্লকের গদাইপুর গ্রামে ধুমধামের সাথে পূজিতা হন পেটকাটি দুর্গা। এই পুজোর সঙ্গে জড়িয়ে থাকা এক ভিন্ন ধরনের ইতিহাসের জন্য জেলা ছাড়িয়ে এই দুর্গাপুজো রাজ্যে পরিচিতি পেয়েছে।
অত্যন্ত জাগ্রত এই দেবীর কাছে ভক্তিভরে কোনওকিছু চাইলে এবং মানত করলে সেই ইচ্ছে পূর্ণ হয়, এই বিশ্বাসে দুর্গাপুজোর দিনগুলোতে প্রত্যেক বছর মুর্শিদাবাদ জেলা এবং ভিন রাজ্য থেকে কয়েক হাজার মানুষ দেবীর দর্শন করে তাঁর আশীর্বাদ নিতে আসেন।
এই পুজোর সঙ্গে জড়িয়ে থাকা প্রাচীন ইতিহাস ঘাঁটলে জা
না যায় প্রায় ৫০০ বছর আগে মালদার এক মহারাজা এই দুর্গা পুজো শুরু করেছিলেন। বর্তমানে গ্রামের বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবার এই পুজো চালায় ।
স্থানীয় জনশ্রুতি রয়েছে ,বহু বছর আগে অষ্টমীর দিন সন্ধি পূজোর আগে বাড়ির সদস্যরা যখন পুজোর জন্য ফুল-ফল-প্রদীপ-সহ অন্য নানা জিনিস জোগাড়ের কাজে ব্যস্ত ছিলেন সেই সময় একটি ছোট্ট একটি মেয়ে মা দুর্গার সামনে প্রদীপ জ্বালাচ্ছিল।
কিন্তু হঠাৎই সেই মেয়েটি নিখোঁজ হয়ে যায়। বাড়ির লোকেরা বহু খোঁজাখুঁজি করলেও তাকে আর খুঁজে পায়নি।
জনশ্রুতি রয়েছে এর পর সেই রাতেই মা দুর্গা , পুজোর তৎকালীন সেবায়েত দ্বিজপদ ব্যানার্জিকে স্বপ্নে দেখা দেন এবং বলেন রক্তের তৃষ্ণা নিবারনের জন্য তিনিই মেয়েটিকে খেয়ে ফেলেছেন।
দেবীর স্বপ্নাদেশ পাওয়ায় পর ব্যানার্জি পরিবারের সদস্যরা যখন মায়ের মৃন্ময়ী মূর্তির সামনে যান তখন দেবীর ঠোঁটের কোণে কাপড়ের একটি টুকরো দেখতে পান। এরপর দেবীর পেট কেটে শিশুটিকে নাকি মৃন্ময়ী মূর্তির গর্ভে মৃত অবস্থিত পাওয়া যায়।
সেই রাতেই দেবী দুর্গা, দ্বিজপদকে আবার স্বপ্নে দেখা দেন এবং তাঁকে একটি বিশেষ ওষুধ তৈরি করার 'গোপন মন্ত্র' বলে দেন। সেই ওষুধ খেলে মানসিক বিকারগ্রস্ত লোকেরা নাকি সুস্থ হয়ে যাবে। দেবী স্বপ্নাদেশে ওই পূজারিকে বলেছিলেন -এরপর থেকে যারা ওই ওষুধ খেয়ে সুস্থ হয়ে উঠবে তারাই দেবীর উদ্দেশ্যে পশু বলিদান করবে। সেই থেকে এখনও পর্যন্ত দুর্গা পুজোর দিনগুলোতে বহু পশু দেবীর উদ্দেশ্যে বলিদান করা হয় গদাইপুরের ওই মাতৃ মন্দিরে।
এক চালার পেটকাটি দুর্গা প্রতিমার বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এখানে দেবী দুর্গাকে তাঁর চার ছেলে মেয়ে ,রাম-লক্ষণ এবং দেবীর দুই সখি জয়া ও বিজয়া-র সঙ্গে পুজো করা হয়। বহু পুরনো সেই ঘটনার স্মৃতি অনুসারে এখনও এখানে দেবী প্রতিমার ঠোঁটের কোনায় এক টুকরো কাপড় লাগানো থাকে।
দেবীর পেট কেটে শিশুটিকে বার করার যে ঘটনা ঘটেছিল তার প্রতীক হিসেবে এখনও দেবীর পেট কেটে রাখা হয়। যদিও দুর্গা প্রতিমাকে শাড়ি পড়ানোর পর সেই কাটা অংশ সাধারণ মানুষের গোচরে আসে না। পুরনো ঘটনার পুনরাবৃত্তি আটকাতে দেবীর পায়ে পড়ানো হয় লোহার শেকল।
পেটকাটি দুর্গার মন্দিরে দেবীকে সপ্তমী থেকে নবমী পর্যন্ত নিরামিষ ভোগ দেওয়া হয়। এই দিনগুলোতে দেবীর ভোগ পাওয়ার জন্য প্রচুর ভক্ত মন্দিরে জমা হন। দশমীর দিন বাঁশের পালকি করে বিসর্জনের জন্য আখরি নদীতে নিয়ে যাওয়া হয় দেবী প্রতিমাকে। সেখানে প্রতিমাকে নৌকাতে বসিয়ে ভাগীরথী নদীতে নিরঞ্জনের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়।