বলি দেওয়া হয় পায়রা ও মোষ, এমনকি মানুষরূপী পুতুলকে, গুপ্তপুজোয় আঙুল চিরে দেবীর চরণে রাখা হয় কয়েক ফোঁটা মানুষের রক্ত

পাঁচ শতাব্দীর বেশি সময় ধরে টিকে থাকা কোচবিহারের বড়দেবী পুজো আজও রহস্য ও রোমাঞ্চের আবরণে মোড়া। এখানে দেবী দুর্গা পূজিতা হন ‘বড়দেবী’ রূপে।

Durga Puja 2025: Pigeon and buffalo are sacrificed before Baro Devi of Cooch behar
কোচবিহারের বড়দেবী পুজো আজও রহস্য ও রোমাঞ্চের আবরণে মোড়া। নিজস্ব চিত্র।

আজকাল ওয়েবডেস্ক: পাঁচ শতাব্দীর বেশি সময় ধরে টিকে থাকা কোচবিহারের বড়দেবী পুজো আজও রহস্য ও রোমাঞ্চের আবরণে মোড়া। এখানে দেবী দুর্গা পূজিতা হন ‘বড়দেবী’ রূপে। স্থানীয় বিশ্বাস, দেবী মানুষের রক্তের স্বাদ পেলে তবেই পুজো সম্পূর্ণ হয়। তাই একবিংশ শতাব্দীতেও এই পুজোয় চলে বিশেষ আচার। যা এই পুজোকে অন্য দুর্গাপুজোর থেকে আলাদা করে পরিচিত করেছে।

শ্রাবণ মাসের শুক্লা অষ্টমীতে এই পুজোর সূচনা হয়। ভাঙ্গরাই মন্দির থেকে ময়না গাছের ডাল এনে তা মহাস্নান করিয়ে এই প্রতিমার মেরুদণ্ড হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এরপর চলে এক মাসব্যাপী বিশেষ পুজো। যেখানে পায়রা বলির প্রচলন রয়েছে। এই প্রথার সূত্রপাত ১৫১০ খ্রিস্টাব্দে। মহারাজা বিশ্বসিংহের হাতে। বিশ্বাস করা হয়, দেবীর আশীর্বাদে তিনি শত্রুকে পরাজিত করে কোচবিহারের সিংহাসনে আসীন হন। পরবর্তী সময়ে মহারাজা নরনারায়ণ স্বপ্নাদেশ পেয়ে দশভুজা দুর্গামূর্তির প্রচলন করেন। লোকে বলে, রাজপরিবারের সেনাপতি চিলা রায় যখন রাজ সিংহাসন দখল করতে উদ্যোগী হয় তখন দেবী দুর্গা স্বয়ং রাজাকে রক্ষা করেন। আজও সেই বিশ্বাস অটুট রাজ পরিবার ও সাধারণ মানুষের মনে। দেবীর অলৌকিক মূর্তি দর্শনের গল্পে গড়ে ওঠে বড়দেবীর পুজোকে ঘিরে নানা কাহিনী।

বড়দেবীর মূর্তি রক্তবর্ণ রূপের। রীতিমতো ভীতি উদ্রেককারী চেহারা। এখানে দেবীর বাহন সিংহ ও একটি বাঘ মিলে অসুরকে পরাভূত করছে। দেবীর পাশে রয়েছেন তাঁর দুই সখি জয়া ও বিজয়া। এই প্রতিমার বিশেষত্ব হল এখানে সরস্বতী, লক্ষ্মী, গণেশ বা কার্তিকের স্থান নেই।

পুজোর ইতিহাস অনুযায়ী, একসময় এই পূজায় নরবলি হত। মহারাজা নরনারায়ণের আমলে তা চালু হয়েছিল। তবে ১৯ তম মহারাজা নরেন্দ্রনারায়ণ নরবলি বন্ধ করেন। তবুও দেবীর রক্তপিপাসা মেটাতে আজও মহাঅষ্টমীর রাতে গুপ্তপূজা হয়। রাজবংশের প্রতিনিধি ও পুরোহিতরা উপস্থিত থেকে এই বিশেষ আচার সম্পন্ন করেন। তখন ঢাকের প্রচণ্ড আওয়াজে মন্দির প্রাঙ্গণ কেঁপে ওঠে। এক ব্যক্তির আঙুল কেটে কয়েক ফোঁটা রক্ত দেবীর পদতলে নিবেদন করা হয়। সেইসঙ্গে বলি দেওয়া হয় চালের গুঁড়ো দিয়ে বানানো মানুষরূপী পুতুলকে।

সময় বদলেছে। রাজতন্ত্র হারিয়ে গেছে, তবুও ৫০০ বছরের পুরনো এই পুজো আজও কোচবিহারের আদি ঐতিহ্য হিসেবে বেঁচে আছে। রহস্য, রোমাঞ্চ ও অলৌকিকতার আবহে ঘেরা এই পুজো এখনও মানুষের মনে ভক্তি ও ভয়ের মিশ্র অনুভূতি জাগিয়ে রাখে।