রণংদেহি নয়, বিধায়ক অভিজিৎ সিংহের বাড়িতে দ্বিভূজা দেবী দুর্গা পূজিতা হন অভয়া রূপে
Durga Puja 2025: নানুরের দাসকলগ্রামে সিংহ পরিবারের দুর্গাপুজো শুধুমাত্র একটি পুজোই নয়, এ যেন ইতিহাসের এক জীবন্ত অধ্যায়! ৩৫০ বছরেরও বেশি পুরনো এই পুজোর শিকড় রাজস্থানে।

আজকাল ওয়েবডেস্ক: নানুরের দাসকলগ্রামে সিংহ পরিবারের দুর্গাপুজো শুধুমাত্র একটি পুজোই নয়, এ যেন ইতিহাসের এক জীবন্ত অধ্যায়! ৩৫০ বছরেরও বেশি পুরনো এই পুজোর শিকড় রাজস্থানে। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, যোধা বাঈয়ের ভাই বীর যোদ্ধা মানসিং ১২ ভূঁইয়ার বিদ্রোহ দমনে বঙ্গে আসেন। পরবর্তীতে এই বাংলায় রাজপুতদের স্থায়ী বসতির ব্যবস্থা করেন। সেই বংশেরই ২৪তম প্রজন্ম, লাভপুরের তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়ক অভিজিৎ সিংহ, আজ এই পুজোর ধারক ও বাহক। তাঁর তত্ত্বাবধানে এই ঐতিহ্যবাহী পুজো এখন আরও উজ্জ্বল রূপ পেয়েছে। পুজোর দিনগুলিতে দাসকলগ্রামের সিংহ ভবন কার্যত এলাকার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে। কারণ, নিষ্ঠার সঙ্গে পুজো করার পাশাপাশি এলাকাবাসীদের নিয়ে একসঙ্গে পাত পেড়ে খাওয়া এই পুজোর অন্যতম বৈশিষ্ট্য। তাই উৎসবের চারদিন এলাকাবাসীর কাছে চাঁদের হাটের ঠিকানা হল ‘সিংহ ভবন’।
এই পরিবারের দুর্গাপুজোর ইতিহাস যেমন প্রাচীন, তেমনই চমকপ্রদ। পরিবারের প্রবীণ সদস্যদের দাবি, তাদের পূর্বপুরুষ নীলকণ্ঠ সিংহ এক রাতে স্বপ্নাদেশ পান। দেবী দুর্গা তাঁকে জানান, অসুর নিধন সম্পূর্ণ, তাই তাঁকে আর রণচণ্ডী নয়, শান্ত অভয়া রূপে পুজো করতে হবে। সেই নির্দেশেই এখানে দেবী দুর্গা দ্বিভূজারূপে পুজিতা হন। সেই কারণে এই মূর্তিতে নেই মহিষাসুর, নেই অস্ত্র। এক হাতে অভয়দান আর অন্য হাতে পদ্ম— এভাবেই মা দুর্গা এখানে পূজিতা হন অভয়া নামে। শান্তির বার্তা ছড়িয়ে দেবী সকলকে অভয় প্রদান করেন। সিংহ পরিবারের পাশাপাশি রাজ্যে মাত্র দু’টি জায়গায় মা অভয়ার পুজো হয়।
শুরু থেকেই পঞ্চমুণ্ডির বেদিতে পুজো করা হয়, যা পারিবারিক পুজোতে বিরল। নীলকণ্ঠ বাবুর পাশাপাশি পরিবারের পুরোহিতকে দেবী স্বপ্নাদেশ দিয়ে পুজোর নিয়ম এবং মৃৎশিল্পীকে মূর্তির সঠিক রূপের ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন। পরের দিন সেই বার্তা পরিবারের সদস্যদের জানানো হয়। সেই অনুযায়ী পুজোর সূচনা হয়। এতকাল পরেও পুজোর নিয়ম অপরিবর্তিত রয়েছে। একচালার কাঠামোর মূর্তিতে দেবী কৈলাসের শান্ত রূপে প্রতিষ্ঠিত হন। ষষ্ঠীর বোধনের মাধ্যমে শুরু হয় পুজো, যা দ্বাদশী পর্যন্ত চলে। কুলদেবী অভয়ার পাশাপাশি একাদশীর দিন কূলদেবতা নারায়ণের পুজোও হয়। পরিবারের প্রবীণ সদস্য ছবিরানী সিংহের মতে, এই পুজো এড়িয়ে যাওয়া মানেই অঘটন। তাই আত্মীয়রা পঞ্চমী থেকেই আসতে শুরু করেন এবং দ্বাদশীর পরেই বাড়ি ফেরেন। এই কয়েক দিনে সিংহ ভবন শুধু একটি বাড়ি নয়, হয়ে ওঠে এক ঐতিহ্যের উৎসবক্ষেত্র—যেখানে ভক্তি, ইতিহাস ও মিলনমেলার আবহ একসঙ্গে ধ্বনিত হয়।
দাসকলগ্রামের বাসিন্দা তথা বিধায়কের প্রতিবেশী বাবন মণ্ডল, বরুন ঘোষ বলেন, “এই পুজো পারিবারিক হলেও গোটা গ্রামের মানুষ এখানে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেন।”
পরিবারের পুজো প্রসঙ্গে লাভপুরের বিধায়ক বলেন, “সারা বছর নিজের বিধানসভায় বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে ব্যস্ত থাকতে হয়। তবে, এই পুজোর চার দিনে রাজনীতি ভুলে নিপাট পরিবারের একজন সদস্য হিসেবে উৎসবে ডুবে থাকি। এই পুজো শুধু আমাদের পরিবারের নয়, সমগ্র গ্রামের আনন্দের উৎসব। তাই এই কয়েক দিন আমি কেবল পরিবারের একজন হয়ে আনন্দে মিলিত হই এবং সকলের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করি।”