অভাবের কারণে ট্রেনের সামনে ঝাঁপ দিতে গিয়েছিলেন, আজ তিনি পরিচালনা করছেন পুলিশের ইউনিফর্ম তৈরির দুটি কারখানা

Durga Pujo 2025: রানাঘাটের মিশন গেট সংলগ্ন তুলো বাগানের বাসিন্দা রমাদেবীর জীবন এক প্রেরণার গল্প। তাঁর পেশা পুলিশের ইউনিফর্ম প্রস্তুত করা। কিন্তু এই সাফল্যের পেছনে লুকিয়ে আছে দীর্ঘ সংগ্রাম ও অদম্য মনোবলের এক জ্বলন্ত উদাহরণ।

From footpath to palace this woman made a history
এই সাফল্যের পেছনে লুকিয়ে আছে দীর্ঘ সংগ্রাম ও অদম্য মনোবলের এক জ্বলন্ত উদাহরণ। আজ ৫৩ বছর বয়সে তিনি পরিচালনা করছেন দুটি কারখানা।

আজকাল ওয়েবডেস্ক: রানাঘাটের মিশন গেট সংলগ্ন তুলো বাগানের বাসিন্দা রমাদেবীর জীবন এক প্রেরণার গল্প। তাঁর পেশা পুলিশের ইউনিফর্ম প্রস্তুত করা। কিন্তু এই সাফল্যের পেছনে লুকিয়ে আছে দীর্ঘ সংগ্রাম ও অদম্য মনোবলের এক জ্বলন্ত উদাহরণ। আজ ৫৩ বছর বয়সে তিনি পরিচালনা করছেন দুটি কারখানা। যেখানে তৈরি হয় একশোরও বেশি থানার পুলিশ কর্মীদের ইউনিফর্ম।

রমার জীবনযাত্রা ছিল একেবারেই সাধারণ। মাত্র ১৪ বছর বয়সে গোপালনগরের মাঝের গ্রামে তাঁর বিয়ে হয়। স্বামী গুরুদাস পালের সঙ্গে ১০ বছরের সংসার। এরপর হঠাৎ করেই ছায়া নামে জীবনে। অকালপ্রয়াত হন স্বামী। ছোট্ট দুই ছেলেকে নিয়ে শুরু হয় কঠিন এক লড়াই। একসময় কাজের খোঁজে দরজায় দরজায় ঘুরেছেন, কিন্তু কোথাও স্থায়ীভাবে কাজ মেলেনি। সমাজের কটূ মন্তব্য, হেয় প্রতিপন্ন করার দৃষ্টি আরও দুর্বিষহ করে তুলেছিল তাঁর জীবনকে। এমনকী মানসিকভাবে এতটাই বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন যে আত্মহত্যার কথাও ভেবেছিলেন। একদিন চলন্ত ট্রেনের সামনে ঝাঁপ দিতে মাঝের গ্রাম স্টেশনে পৌঁছেও দেখেন শেষ ট্রেন চলে গেছে। সেই ‘শেষ ট্রেন’ যেন রমাদেবীর জীবনের নতুন খাতা খুলে দিয়েছিল।

এক আত্মীয়ের সহযোগিতায় এরপর ব্যারাকপুরে গিয়ে পুলিশের ইউনিফর্ম তৈরির কাজ শেখেন রমাদেবী। জীবনের প্রথম বরাত পান বারাসাত জিআরপি থেকে। তারপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। একের পর এক থানায় নিজে গিয়ে অর্ডার সংগ্রহ করতে থাকেন তিনি। দিনরাত পরিশ্রম করে তৈরি করেছেন নিজের পরিচয়। আজ নদিয়া ছাড়াও পার্শ্ববর্তী জেলা মিলিয়ে একশোর বেশি থানার ইউনিফর্ম তৈরি করেন তিনি। এক্ষেত্রে পুলিশের সহযোগিতা পেয়েছেন বলেই এই কাজ করতে পারেন। তিনি আজ স্বাবলম্বী। দুই ছেলেকে বড় করেছেন, তাঁদের সংসার হয়েছে নিজের বাড়ি হয়েছে কিন্তু আজও তিনি কাজ করে যান।

বর্তমানে রমাদেবী শুধুই একজন কর্মঠ নারী নন—তিনি একজন সফল উদ্যোগপতি। ছেলেদের সহায়তায় এখন পরিচালনা করছেন দুটি ইউনিফর্ম তৈরির কারখানা। সংসার যেমন পরিপূর্ণ—ছেলে, বৌমা, নাতি নিয়ে ভরা তেমনই কর্মজীবনও সাফল্যে ভরপুর।

রমাদেবীর জীবনের এই যাত্রা শুধু সংগ্রামের নয়, আত্মবিশ্বাস, অধ্যাবসায় ও নিজের প্রতি বিশ্বাস রাখার এক অনন্য উদাহরণ। তাঁর গল্প হার মানাবে যে কোনও সিনেমা কিংবা ওয়েব সিরিজকে। বহু নারী আজও সমাজের নানা প্রান্তে লড়াই করে যাচ্ছেন। রমা তাঁদের জন্য এক উজ্জ্বল আলোক শিখা।