‘ভিড়ে মানুষ চিনতে পারবে, এটা আমার বিড়ম্বনা মনে হয় না!’ পুজোতে ‘তারকা’ নয়, ঋতব্রত পাড়ার ছেলে

Rwitobroto Mukherjee: অভিনেতা ঋতব্রত মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা বলেছিল আজকাল ডট ইন।

Tollywood Actor Rwitobroto Mukherjee opens up about his Durga Puja 2025! experience

আজকাল ওয়েবডেস্ক: দুয়ারে দাঁড়িয়ে বাঙালির প্রাণের উৎসব দুর্গাপুজো। সাধারণ মানুষ থেকে তারকা, সকলেই তৈরি হচ্ছেন মায়ের বোধনের জন্য। কিন্তু সাধারণ মানুষের তুলনায় তারকাদের পুজো কি কিছুটা আলাদা? সেই নিয়েই অভিনেতা ঋতব্রত মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা বলেছিল আজকাল ডট ইন।

পরিচিতির কারণে কি কখনও ভিড় ঠেলে ঠাকুর দেখা নিয়ে সমস্যার মধ্যে পড়তে হয়? ঋতব্রত সোজা ব্যাটে খেললেন। তাঁর সাফ কথা এমন কোনও সমস্যায় এখনও পর্যন্ত পড়েননি তিনি। অভিনেতা বলেন, “আমি যেহেতু খুব ছোট থেকেই সিনেমা করছি, সেই সূত্রে পরিচিতি আমার খুব অল্প বয়স থেকে হয়েছে। তাই পুজোয় রাস্তায় বেরোলে লোকে চিনতে পারবে, এই ব্যাপারটা আমার খুব ছোট থেকেই সাধারণ বিষয় বলেই মনে হয়। আমি অন্তত এর মধ্যে কোনও বিড়ম্বনা দেখি না। লোকে আমায় চিনতে পারবে বলে সেই ভয়ে আমি রাস্তায় বেরব না বা শো শেষে কিংবা নাটকের শেষে কারও সঙ্গে দেখা করব না, এই অভ্যাস আমার নেই। হয়তো অনেক বড় অভিনেতারা এটা মনে করেন, কিন্তু আমি অত বড় অভিনেতা নই। আমি বরং এটাকে আশীর্বাদ এর মতো করেই দেখি।” অভিনেতার সাফ কথা, সাধারণ মানুষই তাঁর কাজের সবচেয়ে বড় পৃষ্ঠপোষক। ঋতব্রতর কথায়, “আমি মনে করি আমরা যে কাজটা করি সেই কাজের মূলে যাঁরা, তাঁরাই হলেন দর্শক। তাঁদের ভালবাসা, তাঁদের আমায় চিনতে পারাটা আশীর্বাদ। বরং যেদিন মানুষ চিনতে পারবেন না, সেদিন কী অবস্থা হয়, সেটা আমি অনেক প্রাজ্ঞ অভিনেতাকে দেখে বুঝেছি। ছোট থেকেই আমার এটাকে আশীর্বাদের মতো মনে হত। কেউ আমাকে আমার কাজের জন্য রাস্তাঘাটে চিনতে পারছেন এটা একটা বিরাট বড় পাওনা।” 

কেমন সেই অভিজ্ঞতা? অভিনেতা জানান, বিশেষত ওপেন টি বায়োস্কোপের পর থেকে আরও বেশি মানুষ তাঁকে চিনতে শুরু করেন। “তারপর যখন একের পর এক কাজ করেছি তখন পুজোয় প্যান্ডেলে ঘুরতে বেরলে আরও বেশি লোকে চিনতে পারছে। কেউ হয়তো নিজস্বী তুলতে চাইছেন, কেউ হয়তো অটোগ্রাফ নিতে চাইছেন কিংবা কেউ হয়তো নিছক একটু কথা বলতে চাইছেন। এর বেশি আসলে মানুষ আর কিছুই করেন না। তাই এত বিচলিত হয়ে পড়ার কিছুই আমি কখনও দেখিনি। তো সেই অর্থেই সেলিব্রিটির পুজো খুব একটা আলাদা, আমার কাছে তেমনটা মনে হয় না।”

অভিনেতার বাড়ি বেহালায়। নিজের পড়ার পুজো নিয়েও আবেগপ্রবণ অভিনেতা। তাঁর কথায়, “আমি যেখানে বড় হয়েছি বা আমি এখনও যেখানে থাকি সেটা এমনি একটা জায়গা যেটা কলকাতার মধ্যে থেকেও কলকাতার মধ্যে নয়। এখনও আমাদের ওখানে যদি কাউকে জিজ্ঞাসা করা হয় যে কাল কোথাও যাচ্ছো? সে হয়তো বলবে কাল কলকাতা যাবো। অদ্ভুত শোনালেও এই রকম কলকাতার মধ্যে থেকেও নিজেদেরকে কলকাতার মানুষ মনে না করার একটা কারণ আছে। আমাদের এখানে এখনও কলকাতা-সুলভ বা একটা শহর-সুলভ যা যা কিছু হতে পারে তার অনেক কিছুই এসে পৌঁছয়নি। যেমন আমি যখন ক্লাস ফোরে পড়ি তখন থেকে শুনছি মেট্রো;পরিষেবা চালু হবে। কিন্তু সেটা এখনও ঠিকমতো চালু হয়নি। কাজেই ‘মেট্রোপলিটন’ সিটির অংশ হিসেবে আমরা নিজেদের মনে করি না। তথাকথিত প্রগতি বা উন্নতি আমাদের এদিকে এসে পৌঁছয়নি বলেই হয়তো। এখন সেটার ভাল দিক খারাপ দিক দুটোই আছে। ভাল দিকের মধ্যে, আমার যেটা মনে হয়, আমাদের এখানে এখনও পর্যন্ত পাড়ার কালচার বলতে যা বোঝায় সেটা ভাল মতো আছে। পাড়ার পুজোকে কেন্দ্র করে পাড়ার মানুষজন এক জায়গায় আসেন। ফলে আমার ছোটবেলার পুজোর স্মৃতির পুরোটাই এই পাড়ার পুজো কেন্দ্রিক। পাড়ার বন্ধু বান্ধব, পাড়ার পুজো, পাড়ায় আনন্দ করা, একসঙ্গে ঠাকুর দেখা, হইহুল্লোড় করা, এই সবই আরকি।”

বলতে বলতেই কিছুটা স্মৃতিমেদুর হয়ে আসে অভিনেতার কণ্ঠ। বলেন “যত বড় হয়েছি ঠাকুর দেখার গণ্ডিটা আসতে আসতে বেড়েছে। যেমন আমরা থাকি ব্যানার্জি পাড়ায়। ক্লাস সেভেনে পাশের চ্যাটার্জি পাড়ার পুজোটা দেখার অনুমতি পেলাম। ক্লাস এইটে সেটা আর একটু বাড়ল। এখানে সরশুনা বাসস্ট্যান্ড বলে একটি জায়গা আছে। সেখানকার পুজো দেখার অনুমতি পেলাম। ক্লাস নাইনে সেটা বেড়ে হলে বেহালা চৌরাস্তা। এভাবেই একটু একটু করে ঠাকুর দেখার পরিধিটা বাড়তে শুরু করল। শুধু বাবা মা নন, পাড়ার কাকু-জেঠু-জেঠিমাদেরও অনুমতির ব্যাপার ছিল। ডেকে জিজ্ঞেস করতেন, ‘কী? আজকে কোথায় গিয়েছিলে ঠাকুর দেখতে?’ পাড়ার এই ঐক্য, এই মিলেমিশে থাকার ব্যাপারটা আমার পুজোর স্মৃতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে আছে।”

এখনও যে ‘সেই ট্র্যাডিশন সমানে চলেছে’, সেকথাও জানান অভিনেতা। বলেন, “আমাদের পাড়ার পুজো দশকর্মার দায়িত্বটা আমিই নিই। তো সেই সূত্রে গতকালও এক কাকিমা ফোন করে জিনিসপত্রের লিস্ট পাঠালেন, জানালেন অমুক দোকান থেকে এটা  আনতে হবে, এবার আর আগের দোকান থেকে আনবো না ইত্যাদি ইত্যাদি।”

তবে কৈশোর পেরিয়ে যৌবনে পা দেওয়ার মধ্যে যে পুজোর অভিজ্ঞতায় কিছুটা বদলও এসেছে সে কথাও অস্বীকার করেননি ঋতব্রত। জানিয়েছেন, এর আগে যেটা পুজোয় ভীষণ রকম ভাবে করতেন, কিন্তু গতবছর থেকে তার কিছুটা পরিবর্তন এসেছে, সেটা হল ঠাকুর দেখা। তাঁর কথায়, “আমি একদম লিস্ট মিলিয়ে মিলিয়ে ঠাকুর দেখার মানুষ। কোন মেট্রোতে নামলে কোন ঠাকুর দেখা যায় সব আমার নখদর্পণে। হেঁটে গেলে কটা প্যান্ডেল দেখা যাবে, কিংবা অটো ধরে গেলে ক’টা দেখা যাবে সবই আমার জানা। একদম ধরে ধরে নর্থ-সেন্ট্রাল-সাউথ ঠাকুর দেখেছি। এমনও হয়েছে সারারাত ঠাকুর দেখে এসে সকালে কিছুটা ঘুমিয়ে দুপুরে আবার বেরিয়ে পড়েছি। সেইটারই একটা পরিবর্তন হয়েছে। তার মূল কারণ অধিকাংশ বন্ধু-বান্ধবই এখন কলকাতার বাইরে থাকে। ফিরতে পারে না পুজোর সময়। কেউ কর্মসূত্রে, কেউ পড়াশোনার জন্য। হয়তো কেউ দেশেই থাকে না। এইটা হওয়ার পর আমার কিছুটা অসুবিধা হয়েছে। কারণ আমার চেনা পুজোর যে উদযাপন, সেটা কিছুটা পাল্টে গিয়েছে। যে ক'জন বন্ধু কলকাতায় আসতে পারে, তারাও ওই চারটে দিন পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানো বা একটা জায়গায় বসে আড্ডা দেওয়াই বেশি পছন্দ করে। বয়সের কারণেই হোক বা ব্যস্ততার কারণে, ভিড় ঠেলে ঘুরে দেখতে ইচ্ছে করে না। এই পরিবর্তনটা আমার কাছে নতুন।”

তবে ব্যক্তি ঋতব্রত যেমন আদ্যোপান্ত বাঙালির ঘরের ছেলে, তেমনই অভিনেতা ঋতব্রত একজন মারাত্মক ব্যস্ত মানুষ। ফলে পুজোর আগের দিনগুলো কাটে চরম ব্যস্ততায়। নিজেও সেকথা স্বীকার করেছেন অভিনেতা। বলেন, “পেশাগত দিক থেকে একটু বেশি চাপ থাকে এই সময়টা। যেহেতু এই সময় প্রচুর বিজ্ঞাপনের কাজ হয়, প্রচুর ব্র্যান্ড আসে কলকাতায়। তাদের কাজ থাকে। পূজোর পরিক্রমা নিয়ে অনুষ্ঠান হয়। এই সব নিয়েই কিছুটা ব্যস্ততা থাকে।”